ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, , ২৪ অক্টোবর ২০২৫

English

বৃত্তের বাইরে

প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যায় যারা :

রতনাপালংয়ের অপ্রতিরোধ্য নারীরা

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২৩ মার্চ ২০২৫

রতনাপালংয়ের অপ্রতিরোধ্য নারীরা

সংগৃহীত ছবি

 

কক্সবাজারের রত্নাপালংয়ের উইমেন লিড কমিউনিটি সেন্টারে (ডব্লিউএলসিসি) সিরিয়ালের জন্য ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছে শাহানা। এখানে অনেক নারীর সমাগম হয়েছে এবং উপস্থিত সকলেই একে অপরের সাথে নিজেদের জীবনের গল্প ভাগাভাগি করছে। বেশ প্রাণবন্ত একটা পরিবেশ যাকে বলে। যখন সভাটি প্রায় শেষ হচ্ছিল, শাহানা সামনে এগিয়ে এসে দৃঢ় স্বরে বলে, "আমি আমার জীবনের গল্পটি বলতে চাই এবং আমি চাই এটি বিশ্বের কাছে পৌঁছুক।" 
মাত্র ২৫ বছর বয়সেই শাহানা তার দৃঢ় সংকল্প এবং সাহস দিয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করে অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে উঠে। সে, তার গ্রামের প্রথম নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে এবং একটি বাড়িও তৈরি করেছে যেখানে তার বাবা-মা তার সাথে বেশ গর্বের সাথেই বসবাস করছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সে এমন এক সমাজে থেকে বিবাহ বিলম্বিত করার মত সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে সমাজে মেয়েদের শিশু বয়সে বিবাহ দেয়ার প্রচলন রয়েছে। শাহানা বলে, "আমি যৌতুক দেব না। আমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই”। 
শাহানার যাত্রা শুরু হয়েছিল দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে। রত্নাপালংয়ের অনেকের মতো তার পরিবারও খেয়েপড়ে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছিল। একাদশ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় যখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর, তার বাবা-মা সমাজের প্রচলিত রীতি অনুসারে তার জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করে। লম্বা সময় ধরে এটি চলতেই থাকে। সে বলে, "আমার বাবা খুবই গরিব ছিলেন, এবং সবাই ভাবত যেহেতু আমি দেখতে অতটা সুন্দর না, তাই তারা কোনও পাত্র খুঁজে পাচ্ছিল না"। একপর্যায়ে তার বাবা-মা আর তার পড়াশোনার খরচ বহন করতে না পেরে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে শাহানা একেবারে ভেঙে পড়ে। শাহানা তার অনেক বান্ধবীদের অল্প বয়সে বিয়ে হতে দেখেছে, একই সাথে তাদের দুর্বিষহ জীবনও দেখেছে- কেউ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় কষ্ট সহ্য করে বের হতে পারছিল না, কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম দিয়ে পর্যাপ্ত প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শাহানা কখনই এমন জীবন চায় নি। সে নিজের জন্য আরও ভাল কিছু চেয়েছিল, কিন্তু কিভাবে সামনে এগোবে তা বুঝে উঠতে পারছিল না। এক বন্ধুর মাধ্যমে সে রতনাপালং WLCC সম্পর্কে জানতে পারে।
WLCC হল, UNFPA এর সহায়তায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং আশেপাশের হোস্ট কমিউনিটিতে জেন্ডার সমতা বৃদ্ধি এবং ক্ষতিকর সামাজিক নিয়ম পরিবর্তনের প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি কার্যকরী সুবিধা। শাহানার জন্য, এটি কেবল একটি পরিষেবার সুবিধা নয়, বরং - এটি ছিল জীবন পরিবর্তনের একটি অন্যতম সুযোগ। শত প্রতিকূলতার মাঝেও শাহানা তার লক্ষ্যে অবিচল থাকে। সে বলে, “আমার বাড়ি এখান থেকে অনেক দূরে, রত্নপালংয়ের পাহাড়ি অংশে। ফলে, WLCC কেন্দ্রে হেঁটে যাওয়া সবসময়ই কঠিন ছিল এবং বর্ষাকালে রাস্তাগুলি বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠত। কিন্তু এর কোনোকিছুই আমাকে থামাতে পারেনি। আমি সবসময় শেখার দিকেই মন দিয়েছি”। WLCC কেন্দ্রে শাহানা পান পাতার মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং টেকসই উপকরণ দিয়ে টুপি, ব্যাগ এবং পুতুলের মতো হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ পায়। কথা বলার সময় শাহানার চোখেমুখ একেবারে দক্ষ প্রশিক্ষকের মতো মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে বলে, “সব পাতা-ই সব ধরণের কারুশিল্পের জন্য ব্যবহার করা যায় না। একেক পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট ধরণের পাতার প্রয়োজন হয়।” প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের একটি অংশ হল সঠিক পাতা সনাক্ত করা, সেগুলোকে বাজারজাত পণ্যে রূপ দেওয়া এবং কার্যকরভাবে একটি ছোট ব্যবসা পরিচালনা করা। 
জরুরী অবস্থায় জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা কর্মসূচির প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী শাহনাজ, শাহানার উদ্যোক্তা হতে চাওয়ার দিনের স্মৃতিচারণ করেন, “প্রশিক্ষণ শেষে, শাহানা মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। সে তার জীবনমান পরিবর্তনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়।” স্থানীয় এনজিওর সাহায্য এবং কিছু নিজের সঞ্চয় দিয়েই শাহানা তার বাড়ির কাছে একটি ছোট কেন্দ্র স্থাপন করে। তার গ্রামের অন্যান্য নারীদের একত্রিত করে তাদেরকে বেসিক প্রশিক্ষণ দেয় এবং স্থানীয় বাজারে খাবার সরবরাহ শুরু করে। খুব দ্রুতই ব্যবসাটি বাড়তে শুরু করে এবং বর্তমানে তার তত্ত্বাবধানে ৩০ জনেরও বেশি নারী কাজ করছে। স্থানীয় বাজার, এনজিওদের কাছে এবং ঢাকাসহ বিভিন অঞ্চলের ক্রেতাদের কাছে তার পণ্য সরবরাহ করছে। 
শাহানা তার উপার্জন দিয়ে স্কুল থেকেই তার পড়াশোনার ব্যয় বহন স্নাতক পর্যন্ত সম্পন্ন করেছে –যা সে একসময় অসম্ভব বলে মনে করত। অত্যন্ত গর্বের সাথে একজন নারী বলেন, "আমাদের পণ্যগুলির মান এবং ডিজাইনের জন্য বেশ চাহিদা আছে"। 
শাহানা অবিবাহিত বলে মোটেও চিন্তিত নয়, কারণ সে বিয়ের বিরোধিতা করে না, বরং সে এবিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করে বলে, "আমি আমার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে চাই এবং প্রথমে অর্থ সঞ্চয় করতে চাই, যদি আমি আমার পছন্দমত সঠিক সঙ্গী খুঁজে পাই, আমি বিয়ে করব। কিন্তু আমি কারও উপর নির্ভর করে থাকব না। আমি আমার নিজের মত করে বিয়ে করব।" একমসময় সমাজের লোকজন তাকে এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে কটুক্তি করলেও এখন তারাও চায় তাদের মেয়েরাও যেন শাহানার মত হয়। শাহানা বলে, "আমি চাই নারীরা আত্মনির্ভরশীল হোক," শাহানার সমবয়সী কোহিনূর বেগম মন্তব্য করেন, "শাহানা কেবল একটা ব্যবসা-ই দাঁড় করাচ্ছে না বরং একইসাথে অন্যদের জন্যও এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা সহজ করছে”। শাহানা প্রমাণ করেছে যে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কেবল আর্থিক বিষয় নয়। এটি পছন্দ, মর্যাদা এবং ভবিষ্যত নির্ধারণের সাথেও সম্পর্কিত।
"উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় শাহানার মতো অনেক নারীই তাদের জীবন পরিবর্তন করে যাচ্ছে। ইউএনএফপিএ এর ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে বলেন, “নারী ও কিশোরী মেয়েরা যাতে তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সুযোগ পায় সেজন্য জেন্ডার সমতা ও আরো অধিক বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণে ইউএনএফপিএ সব সময়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”। তিনি আরও বলেন, “নারীদের সম্ভাবনায় বিনিয়োগ করলে এবং তাদের সফল হওয়ার সুযোগ দিলে নারীরা যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করতে পারে শাহানা তার জীবন্ত উদাহরন।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং আশেপাশের স্থানীয় কমিউনিটির দশটি WLCC জুড়ে, নারী ও পুরুষ ক্ষতিকারক রীতিনীতি থেকে মুক্ত হয়ে আরও সমতা ভিত্তিক ভবিষ্যত গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এই কেন্দ্রগুলি নারীদের তাদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করছে। এর মধ্যে রয়েছে - জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ পরিষেবা, মনোসামাজিক সহায়তা, বাংলাদেশ সরকারের দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৫০-ঘন্টার অনানুষ্ঠানিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ (এনটিটিএফ) এবং রেফারেল পরিষেবা। শাহানার গল্প নারীর অধিকার সমুন্নত রাখার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের গুরুত্বকে তুলে ধরে, বিশেষ করে সংকটের সময়ে। একইসাথে এটি আরও প্রমাণ করে যে আশার আলো রয়েছে। সামান্য প্রচেষ্টা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে, বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নারী ও মেয়ে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও আশেপাশের স্থানীয় কমিউনিটির নারীরা শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বৃত্তিমূলক কাজের সুযোগ পেতে সক্ষম হবে । ফলশ্রুতিতে কেবল তাদের জীবনই নয় বরং তাদের কমিউনিটির  জীবনমানকেও বদলে দেবে। 
আরও অনেক শাহানা নিজদের মেলে ধরার জন্য অপেক্ষা করছে! 
*গোপনীয়তা এবং সুরক্ষার জন্য নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

//এল//

দেড় বছর পর সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা

বাড়ল স্বর্ণের দাম

ফিরলো ‘না ভোট’, বাতিল হলো ইভিএম

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার রায় জানানো হবে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখন পূর্ণাঙ্গ ক্যাশলেস ক্যাম্পাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ৩০ জন আহত

বলগেট উদ্ধার: চেইন ছিঁড়ে ২ শ্রমিকের অঙ্গহানি

গ্লেনরিচ স্কুলে নতুন প্লেগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি কারিকুলাম চালু

নির্বাচন পরেও থামবে না জুলাই বিপ্লব: মাহমুদুর রহমান

মানসিক সংস্কার না হলে অর্জন হাতছাড়া: সালাহউদ্দিন

উৎসবমুখর নির্বাচন করতে সব দলের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রবাসী করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা সহজ করল এনবিআর

অবশেষে কমলো রুপার দাম

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের নতুন কঠোর নির্দেশনা