
ছবি: গ্রহাণু ‘সাইকি’
মহাকাশেই কীনা গচ্ছিত আছে গুপ্তধন। যা রয়েছে মহাকাশের নিকষ কালো অন্ধকারে। পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি কিলোমিটার দূরের ‘গ্রহাণু সেই’ গুপ্তধন। সাত রাজার ধন মানিক লুকিয়ে আছে গ্রহাণুর রুক্ষ পিঠে। খুঁড়লেই মিলবে তাল তাল সোনা, প্ল্যাটিনাম, লোহা, নিকেল–কত শত ধাতু। মহা মূল্যবান এক গ্রহাণু ঘুরপাক খাচ্ছে মহাকাশের নিকষ কালো অন্ধকারে। পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি কিলোমিটার দূরেই। সেই গ্রহাণুইএখন পাখির চোখ নাসার।
নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সাঁই সাঁই করে সাইকির দিকে ছুটে যাবে নাসার মহাকাশযান। ৫ অক্টোবর গ্রহাণুর পথে যাত্রা করবে নাসা। চাঁদ-সূর্য-তারার পরে এবার ‘জার্নি টু অ্যাস্টেরয়েড’।
মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে অ্যাস্টেরয়েড বেল্টেই এই গ্রহাণুর ঠিকানা। নাম ’১৬ সাইকি’। নাসার হাবল টেলিস্কোপ এই গ্রহাণুর হদিশ দিয়েছে। ভাল করে দেখেশুনে অবাক হয়েছেন নাসার মহাকাশবিজ্ঞানীরা। আর পাঁচটা গ্রহাণুতেও ধাতু থাকে। তবে এই গ্রহাণুরই ব্যাপারই আলাদা। লোহা, নিকেল, সোনা সবই থরে থরে সাজানো। তাও বিপুল পরিমাণে। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধুমাত্র রুক্ষ পাথরে ঠাসা নয় সাইকি। এর এবড়ো খেবড়ো পিঠের নিচেই ধাতুর আস্ত ভাণ্ডার গচ্ছিত রয়েছে।
পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৩৭ কোটি কিলোমিটার। ধাতুর ভারে ভারী এই গ্রহাণুর খোঁজ মিলেছিল ১৮৫৩ সালের ১৭ মার্চ। ইতালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যানিবেল দে গ্যাসপারিস এই গ্রহাণুর হদিস দিয়েছিলেন। নাম রাখা হয়েছিল গ্রিক দেবী সাইকি-র নামে।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর সৌরমণ্ডলের মধ্যেই এমন এক গ্রহাণুতে ধাতুর ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে সেটা আগে বোঝা যায়নি। অনেকটা আলুর মতো আকারের এই গ্রহাণুর পরিধি ১৪০ মাইল। মহাকাশযান নামিয়ে সাইকির মাটিতে খোঁড়াখুঁড়ি করার জোরদার পরিকল্পনা করছে নাসা। ‘প্ল্যানেটারি সায়েন্স’ জার্নালে সাইকির খবর প্রকাশ্যে এনেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
নাসার সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে হাবল টেলিস্কোপ তাক করে সাইকিকে নজরে রেখেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। আলট্রাভায়োলেট রশ্মির সাহায্যে সাইকির অন্দরের খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, গ্রহাণুর উপরে পরতে পরতে জড়িয়ে আছে লোহার স্তর। তবে ঠাস বুনোটে নয়। লোহার সঙ্গেই আছে নিকেল ও অন্যান্য ধাতু।
বিজ্ঞানী ট্রেসি বেকার বলেছেন, প্রাথমিক গবেষণায় জানা গেছে- আয়রন অক্সাইড রয়েছে সাইকিতে। সূর্যের আলো লোহাতে প্রতিফলিত হচ্ছে। সৌরঝড়ের দাপটও রয়েছে গ্রহাণুতে। সাধারণত এত ভারী ধাতু সৌরমণ্ডলের কোনও গ্রহাণুতে থাকে না। সাইকি সেখানে ব্যতিক্রম। বিরল ঘটনাও বটে। সূর্য থেকে ছিটকে আসা কণা, মহাজাগতিক রশ্মি এই গ্রহাণুর পৃষ্ঠদেশে ধাক্কা খেয়ে ঠিকরে বের হচ্ছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গ্রহাণুর শরীর ধাতু দিয়ে মোড়া।
সাইকি গ্রহাণুর মাটি খামচে আনার জন্যই মহাকাশযান পাঠাবে নাসা। ফ্লোরিডার কেপ কানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন হেভি রকেট পাঠানো হবে মহাকাশে। এই রকেটই সাইকির পাড়ায় ঘুরে আসবে। ধাতব নমুনা জোগাড় করে আনবে। ২১ মাস লাগবে সাইকিতে পৌঁছাতে। মিশন সাইকির প্রস্তুতি রমরম করে চলছে।
মহাকাশের এই মূল্যবান গ্রহাণুর দাম কিন্তু অনেক। নাসা জানিয়েছে, এই গ্রহাণুর মূল্য হবে ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন ডলার। এক কোয়াড্রিলিয়ন মানে হাজার ট্রিলিয়ন, আর এক ট্রিলিয়ন মানে হল হাজার বিলিয়ন, আবার এক বিলিয়ন মানে ১০০ কোটি। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কী পরিমাণ ধনসম্পত্তি গচ্ছিত আছে ওই গ্রহাণুতে। দ্যা ওয়াল
ইউ