
ছবি সংগৃহীত
মহাকাশে ব্ল্যাকহোলের শিকার ধরার ঘটনা বহুবার দেখেছে নাসার টেলিস্কোপ। অ্যানাকোন্ডার মতো শিকারি কৃষ্ণগহ্বর আবার নক্ষত্রের শরীর পেঁচিয়ে ধরে গপগপ করে গিলে খায়। ছিন্নভিন্ন তারার শরীর থেকে বেরিয়ে আসে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। এবার এক ব্ল্যাকহোলকে আজব কাণ্ড করতে দেখলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। তারা গেলা শুধু নয়, গিলে তা উগড়েও দিচ্ছে সেই রাক্ষুসে কৃষ্ণগহ্বর।
আদিম, বুনো এক শিকারপর্ব চলছে মহাকাশে। ওঁৎ পেতে থেকে শিকার ধরছে এক বিশাল কৃষ্ণগহ্বর। যথেষ্ট শক্তিশালী এবং ওজনে ভারী হলেও, সেই কৃষ্ণগহ্বরের গ্রাস থেকে তার রেহাই নেই। পেঁচিয়ে ধরে তারার শরীর ছিঁড়েখুঁড়ে দিচ্ছে সে। একবার গিলছে, আবার উগড়ে দিচ্ছে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে সেই তারার দেহের বিভিন্ন অংশ। এই শিকারি খুবই হিংস্র। মুখের খাবার ছাড়তে রাজি নয়। আবার খেয়ে হজমও করতে পারছে না।
ব্ল্যাকহোলের এই কাণ্ডকারখানায় প্রচণ্ড উত্তাপ তৈরি হচ্ছে। ঝলসে যাচ্ছে চারপাশ। বিকট বিস্ফোরণে অন্ধকারের বুক চিরে আলো ছড়িয়ে পড়ল বিদ্যুৎ শিখার মতো।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন, একটি গ্যালাক্সির গ্যাসীয় স্তরে ভেসে বেড়ায় কোটি কোটি নক্ষত্র। বিশালাকার সেইসব তারাদের মধ্যে অবিরত ধাক্কাধাক্কি, মারামারি চলে। যার ফলে ভয়ানক বিস্ফোরণ হয়, যাকে বলে সুপারনোভা। এই প্রলয় যেমন মৃত্যু ঘটায়, তেমনই জন্ম দেয় নতুন নক্ষত্রের। আবার এমনও দেখা যায়, গ্যালাক্সির ভিতর লুকিয়ে থাকা কোনও ভারী ব্ল্যাক হোল তার প্রবল অভিকর্ষজ বলের ক্রিয়ায় তারাদের নিজের দিকে টেনে নিতে থাকে। ব্ল্যাক হোলের ভিতরে এই নক্ষত্রেরা তলিয়ে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড বেগে একে অপরকে ধাক্কা মারে। এই সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয় এক্স-রে। যা আমরা দেখতে পাই না। তবে সেগুলিও তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ। এই রশ্মির বিকিরণ প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও আলোর ছটা তৈরি করে।
কখন হয় সুপারনোভা? মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, সুপারনোভার সময় তারার শরীরের ভেতরে থাকা পারমাণবিক জ্বালানি খুব দ্রুত জ্বলেপুড়ে যেতে শুরু করে। এক ধরনের বল বা ফোর্সের সৃষ্টি হয়। এই বল নক্ষত্রকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দিতে চায়। পরিবর্তে তারাও নিজের অভিকর্ষজ বল প্রয়োগ করে। এই দুই ফোর্সের প্রভাবে এক চরম টানাপড়েন চলতে থাকে তারার ভিতরে। একটা সময় পারমাণবিক জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। তখন তারার নিজস্ব শক্তি বেড়ে যায়। সবটুকু শক্তি একজোট হয়ে তারার কেন্দ্রে জমা হতে থাকে। তখনই ঘটে বিস্ফোরণ।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এই বিস্ফোরণের কারণেই নিউট্রন নক্ষত্রের জন্ম হয়। তারার শরীর ছিঁড়ে গিয়ে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরও তৈরি হতে পারে। তারার ধ্বংসাবশেষ মহাকাশে থেকে যায়। একসময় তার থেকে হোয়াইট ডোয়ার্ফ স্টার বা সাদা বামন তারার জন্ম হয়। নাসা এর আগে আবিষ্কার করেছিল দু’টি স্টেলার-মাস ব্ল্যাক হোল, যারা আড়ে বহরে সূর্যের প্রায় দ্বিগুণ। সেই ব্ল্যাক হোলটিও ছিল বিশালাকৃতি। আকারে-আয়তনে চারটে চাঁদের সমান। তার খিদেও ছিল সর্বগ্রাসী। শুধু নক্ষত্র নয়, গ্যালাক্সির কাছাকাছি চলে আসা যে কোনো মহাগাজতিক বস্তুকে নিজের দিকে বিপুল অভিকর্ষজ বলের ক্রিয়ায় টেনে নেয়ার ক্ষমতা রাখত সে। তবে সদ্য আবিষ্কৃত রাক্ষুসে ওই ব্ল্যাকহোল বহু বছর ধরেই তারাকে হজম করার চেষ্টা করছে। না পেরে এখন মহাকাশে পেটের সবকিছু উগড়ে দিচ্ছে। ফলে প্রচণ্ড ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ তৈরি হচ্ছে। এই তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। দ্যা ওয়াল
ইউ