
বিষাক্ত বই, পড়লেই মৃত্যু .................................. ছবি: সংগৃহীত
জ্ঞান সঞ্চয় বা সময় কাটানোর জন্য বইয়ের চেয়ে ভালো সঙ্গী নেই। অনেকেই আছেন যারা পড়ুয়া। বই পড়তে ভালোবাসেন। কিন্তু বই পড়লেই মৃত্যু- এমন হলে পড়ুয়ারাও বই পড়ার কথা ভুলে যাবেন। ভাবছেন, রূপকথা? বিষয়টি সত্য।
ইউরোপজুড়ে এক সময় এমন বই ছাপা হতো দীর্ঘ সময় সেই বই পড়লে পাঠকের নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিত। এমনকি এতে মৃত্যুও হতো। এটি উনিশ শতকের শুরুর দিকের ঘটনা। বইগুলো প্রতিদিন পড়লে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ত। অথচ এ ব্যাপারে পাঠক বা বই বিক্রেতারা জানত না। আসলে বই বাঁধাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হতো ক্ষতিকর যৌগ।
আর্সেনিকের ক্ষতির কথা কে না জানে? আর্সেনিক মুক্ত পানির আন্দোলন আমাদের দেশেও হয়েছে। কারণ আর্সেনিক মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। ১৮১৪ সালে জার্মানির শোয়ানফুর্ট শহরে হোয়াইট লিড কোম্পানি উইলহেলম ডাই সবুজ রঙের রাসায়নিক পদার্থ আবিষ্কার করেন। মূলত রং হিসেবে এর ব্যবহার হতো। তবে এই রঙে যে বিষাক্ত ক্ষতিকর পদার্থ আছে তা জানত না জার্মানরা। ফলে কৃত্রিম ফুলে, ওয়াল পেপারে এবং বই বাঁধানোর কার্ডে ব্যবহার করা হতো এই রঙ।
প্রাচীনকাল থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত বই বাঁধানোর কাজে ব্যবহার হতো পশুর চামড়া। ধীরে ধীরে পশুর চামড়ার চাহিদা বাড়ার ফলে বেড়ে যায় দাম। বই বাঁধাই করার বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে প্রকাশকরা। তখন তারা চামড়ার বদলে কাপড়ে সেই সবুজ রঙ মেখে সেই কাপড় দিয়ে রঙিন করে বই বাঁধাই শুরু করে তারা। পাঠকও লুফে নেয় এই পরিবর্তন। লাভজনক হওয়ায় জার্মানসহ ইউরোপের নানা দেশে এ ভাবে বই বাঁধানো শুরু হয়।
গবেষক মেলিসা টেডোনে একদিন ডেলাওয়্যারের উইন্টারথর মিউজিয়ামে যান। সেখানে গিয়ে তার নজরে আসে বিশেষ এই রঙের বই। এরপর রঙ নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন তিনি। গবেষণার পর চমকে ওঠেন মেলিসা। বিশেষ করে এই সবুজ রঙের মোড়কে আছে আর্সেনিক ট্রাইঅক্সাইড। আরও রয়েছে ক্রোমিয়াম, কপার অ্যাসিসেট, সীসা, পারদের মতো পদার্থ।
মেলিসা জানান, আর্সেনিকের এই যৌগের ফলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নানান ক্ষতি হতে পারে। জ্বর, শরীরে অবসাদ, হাতে পায়ে বাত ও ডায়রিয়া হতে পারে। মানুষের মৃত্যুর জন্য যতটুকু আর্সেনিক প্রয়োজন তার ১.৪ শতাংশ আর্সেনিক রয়েছে এসব বইয়ে। অথচ এই বই ব্যবহারকারী জানতেই পারছেন না এই বই পড়লে তার মৃত্যুও হতে পারে। অনেকের হয়তো মৃত্যুও হয়েছে এ জন্য।
মেলিসা মনে করেন, উনিশ শতকের শেষে এই রঙের ব্যবহার বন্ধের অন্যতম কারণ ছিল বিষয়টি জেনে গিয়েছিলেন অনেকে। যদিও এ সম্পর্কে ইতিহাসে কোনো প্রমাণ নেই। এই গবেষণা শেষে মেলিসা পয়জনাস বুক প্রোজেক্ট নামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই ধরনের মলাটে আবদ্ধ নানা দেশের মিউজিয়ামেই বইগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তিনি। যেন মিউজিয়ামে আসা গবেষণা, সাহিত্যিক, পর্যটকরা এসব বই হাতে নিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন না হন। এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করছেন মেলিসা।