
প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক:
পৃথিবীর অর্থনৈতিক শক্তি, সামরিক শক্তি, এবং বাণিজ্য শক্তি সহ সর্ব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, প্রায় সাড়ে পঁচিশ ট্রিলিয়ন ডলারের জি ডি পি (নমিনাল) I এর বিশাল অর্থনীতি আমার জানামতে আমেরিকায় ঘটা করে করে দেশের পুরো বাজেট পেশ করা হয় না I কংগ্রেশনাল বাজেট কমিটি বছরের যেকোনো সময় প্রতিটি সেক্টর জন্য প্রয়োজনীয় ফাইনান্সিয়াল নিয়ে আলোচনা করে প্রস্তাব করে I এছাড়া তারা সারা বছরের আয়/ব্যয় সহ বিস্তারিত প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রতিটি সেক্টরের জন্য আলাদা আলাদা করে সামগ্রিক একটি অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরী করে দশ বছরের জন্য, প্রতিবছর যেটা সমরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়মিতভাবে পরিবর্তন / পরিবর্ধন হয়ে থাকে I তাছাড়া আমেরিকান কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve) সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য নীতি নির্ধারণ করে থাকে, এর বাইরেও বাজেট উপর অনির্ভরশীল কিছু ফিনান্সিয়াল কার্যক্রম চলে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগামী দশ বছরে (২০২৩-২০৩৩) ৩ ট্রিলিয়ন বাজেট ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বাজেট পলিসি ঘোষণা করেছে I ২০২২ সালে মার্কিন সরকারের রাজস্ব আদায় ছিল ৪.৯ ট্রিলিয়ন ডলার আর সরকারের ব্যয় ছিল ৬.২৭ ট্রিলিয়ন, ফলে গত বছরের বাজেট ঘাটতি ১.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার I ২০২৩ সালের প্রক্ষেপিত বাজেট ঘাটতি ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার আর ২০৩৩ সালে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার I ২০২৩ সালে বাজেট ঘাটতি জি ডি পি এর ৫.৩% হতে পারে এটা ২০২৪ ও ২০২৫ সালে আরো বেড়ে শতকরা ছয় ভাগের উপর চলে যেতে পারে , সুতরাং শুনতে অবাক লাগলেও সত্য আমেরিকা সবসময়ই ঘাটতি বাজেট এ চলছে, গত ৫০ বছরের আমেরিকার এভারেজ বাজেট ঘাটতি ৩.৬%।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ, প্রতিবছর বড় ধরণের ঘাটতি নিয়েই চলছে I এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ঘাটতি বাজেট কিভাবে সরকার ম্যানেজ করে ? সরকার প্রাইভেট, পাবলিক সেক্টর এবং আন্তর্জাতিক ভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে I ফেডারেল গভর্নমেন্ট জন্য এই ঋণের একটি স্ট্যাটুটারি লিমিট থাকে যেটা ডেট সিলিং নামে পরিচিত I বর্তমান এ এই সিলিং ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার I এছাড়া ফেডারেল ফিন্যাসিয়াল ব্যাংক থেকে ছাড়া বন্ড এই হিসাবের বাইরে ধরা হয় I প্রতিবছর কংগ্র্যাশনাল বাজেট কমিটির দেয়া প্রক্ষেপিত বাজেট ঘাটতি অনুযায়ী ফেডারেল গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করে ফান্ড কালেকশন করে যেমন সোশ্যাল সিকিউরিটি ট্রাস্ট ফান্ড, আরোও মজার বিষয় হচ্ছে এই গভর্নমেন্ট ইস্যু করা এই ট্রেজারি বন্ড এর বাজেট অথবা অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি কোন প্রভাব নেই।
আমেরিকার ডেফিসিট কন্ট্রোল একট (Deficit Control Act) দ্বারা এই ঋণ (loan) নিয়ন্ত্রিত হয় I প্রতিবছর কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস বাজেট ঘাটতির একটি প্রক্ষেপন দাঁড় করে, আর কমপ্লায়েন্স কমিটি এটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে I আমেরিকার বার্ষিক ঋণ সবসময়ই জি ডি পি (GDP) চেয়ে বেশী থাকে I ২০২২ সালের দেশি/বিদেশী ঋণ মিলিয়ে সর্বমোট ৩১.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার অথচ আমেরিকার মোট জি ডি পি প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার এর কাছাকাছি I তারঅর্থ ২০২২ সালে মার্কিন জাতীয় ঋণ ছিল জি ডি পি র ১২০%, চট করে মনে হবে একি ভয়ংকর অবস্থা!
এখন খুব সহজ একটি প্রশ্ন সবার মনে আসবে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ আমেরিকা সত্যি সত্যিই কি ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছে? উত্তর "মোটেও নয়" কারণ আমেরিকার ঘাটতি বাজেট এর একটি বড় অংশ খরচ করতে হয় সারা পৃথিবীর উপর আধিপত্য টিকে রাখার চেষ্টায়, যেমন বর্তমানে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহায়তা করছে, এছাড়া সারা পৃথিবীর স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলার পিছনেও প্রতি বছর প্রচুর ডলার খরচ করতে হয়।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় সুবিধা আই এম এফ এর সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর ৬০% কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ফরেন কারেন্সী রিজার্ভ রাখে মার্কিন ডলার এ, কাজেই আমেরিকার ডলার সারা পৃথিবীর বাণিজ্যে প্রভাব রেখে চলেছে আর আমেরিকা এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার I বাণিজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ নিয়ে একদমই চিন্তা করতে হয় না I যেহেতু গত পঞ্চাশ বছরের গড় ঘাটতি বাজেট ৩.৬% কাজেই ঘাটতি নিয়ে তাদের পলিসি মেকাররা মোটেও চিন্তিত নয় বরং এটাই তাদের নরমাল এখন।
প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরি