ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

English

মতামত

চা শ্রমিকদের মুখে হাসি দেখতে চাই 

সৈয়দা হুমায়রা হেনা 

প্রকাশিত: ১৭:২০, ২৪ আগস্ট ২০২২; আপডেট: ১২:৩৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

চা শ্রমিকদের মুখে হাসি দেখতে চাই 

সৈয়দা হুমায়রা হেনা 

কিছুদিন আগে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার গিয়েছিলাম একটি NGO Gi project Evaluation team এর সাথে। কুষ্ঠ রোগ নিয়ে প্রজেক্টটা ছিল। এর আগে চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়নি।  শুধু ছবিতে দেখেছি আর মুগ্ধ হয়েছি তাদের চা পাতা তোলার নান্দনিক কৌশল দেখে। কিন্তু চারদিন ধরে তাদের সাথে কাজ করে জেনেছি, বুঝেছি  চা পাতা তুলতে কত কষ্ট এবং তাদের কষ্টের জীবনের নানা কথা। জেনেছি, শত বছরের শোষণের শিকার হতদরিদ্র চা শ্রমিকদের বঞ্চিত হবার হরেক গল্প।

সকালে এক কাপ চা পান না করলে অনেকের দিনই শুরু হয় না। সকল থেকে রাত অবধি কাজের ফাঁকে চা যেন অপরিহার্য। আবার ক্লান্তি দূর করতে চায়ের জুরি নেই। পাশাপাশি, অতিথি আপ্যায়ন বা অড্ডা জমাতে চা যেন আবশ্যিক অনুসংঙ্গ। কখনো কখনো শহুরে জীবনে চা ছাড়া এক ধরনের বিলাষিতায যেন অপূর্ণ থেকে যায়। যেমন, কে, কোথায় এবং কত দামের চায়ে আপ্যায়িত করলো।

রাজধানীসহ সারাদেশেই এখন বাহারি চায়ের পশরা বসে। চা কেন্দ্রিক ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও শুধু চা নিয়েই ব্যবসায়িক সমাগম। চায়ের জন্যই হাট-বাজার। দুধ চা, রং চা, লেবু চা, আদা চা, মশলা চা, মাল্টা চা, আপেল চা, তেঁতুল চা এবং মরিচ চা এমন অসংখ্য ভাবে পরিবেশিত হচ্ছে চা। পাঁচ তারকা হোটেলে এক কাপ চা ৬শ থেকে হাজার টাকায় পরিবেশিত হয়। 
দেশের অন্যতম রফতানি পণ্য চা নিয়ে প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চা অনেক মূল্যবান। আর বৃটিশ আমল থেকেই চা রফতানিতে আমাদের সুনাম আছে। 

কিন্ত আমরা জানিনা সেই এককাপ চা এর জন্য কত পরিমান চা পাতা তুলতে হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কত কষ্টে চা শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। হাড্ডিসার ক্লান্ত দেহ দিনের শেষে কত টাকা পারিশ্রমিক পায় তা ছিলো আমাদের জানার বাইরে। 
শ্রমিকদের সাথে রহঃবৎারবি করতে গিয়ে জেনেছি,  শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা। অর্থ্যাৎ ১২০দ্ধ২৬= ৩১২০ টাকা মাসে আয় হবে যদি সে প্রতিদিন ২৪ কেজি চা পাতা তুলতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের মেয়েরাই শুধু পাতা তোলার কাজ করবে, আবার একই পরিবারের দুজনের বেশী কাজ করতে পারবে না।  

বেশীর ভাগ শ্রমিকই তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। এছাড়া জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ বাসস্থান,  নিরক্ষরতা, অসচেতনতা যেন চা শ্রমিকদের জন্যই। আবার, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। অনেকেই সঠিক চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত। আর নাগরিক সুবিধা বা অধিকার যেন চা শ্রমিক নামের এই মানুষদের জন্য নয়। অধিকার বঞ্চিত এই মানুষ গুলো সব সময়ই থাকে আমাদের ভাবনা ও দৃষ্টির আড়ালে।

দুপুরে এক থালা ভাতের সাথে চা পাতা দিয়ে এক ধরনের ভর্তা তাদের প্রধান খাদ্য।  আমার কৌতুহল মেটাতে এক নারী একটু চা পাতা ভর্তা আমাকে খেতে দিয়েছিলেন। এই ভর্তাকে কখনোই সুস্বাদু বলা যায় না। এভাবেই তারা পুষ্টিহীনতায় দিনে দিনে আরো রুগ্ন হচ্ছেন। চা শ্রমিকদের চেহারা দেখলেই মনে হবে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা হারিয়ে নানা রোগের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন তারা।

হতভাগ্য চা শ্রমিকদের কাছ জীবন মানেই যেন দিনটি পার করে দেয়া। প্রতিনিয়ত "ভালো আছি" বলে বেড়ানো এই মানুষ গুলোর জীবনে যেন রং নেই। আছে না পাওয়ার চরম হতাশা। আসলে স্বপ্ন দেখার সাহসও হারিয়ে ফেলেছেন তারা। 
শত বছরের শোষণের শিকার চা শ্রমিকরা সম্প্রতি আন্দোলনে নেমেছেন। স্বপ্নের মত সাহস দেখাচ্ছেন তারা। দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা দাবি তাদের। আসলে দ্রব্যমূল্য উর্ধগতির এই বাস্তবতায় দৈনিক তিনশো টাকা মজুরিও যথেষ্ট নয়। তিন/ চার জনের পরিবারের জন্য তাদের এই চাওয়া সুখ এনে দিতে পারবে না।

চা রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে দেশ। চা বাগানের মালিকরা নতুন নতুন গাড়ি কিনছেন। পুরনো হবার আগেই বদল করছেন বাড়ি। অথচ, শ্রমিকদের জন্য যেন কোন দরদ নেই তাদের। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় একদিনে যা খরচ করেন তা হয়তো শ্রমিকদের পুরো মাসের আয়ের চেয়েও বেশি। চা বাগান মালিকদের সন্তানরা একদিনে যে পরিমাণ খাবার নষ্ট করে তা হয়তো শ্রমিকদের সন্তারা এক বছরেও দেখে না। আর উৎসব আয়োজনে নুতন পোশাক যেন ভাবতেও পারে না চা শ্রমিকদা।

বিলাষিতা নয়, শুধু জীবন বাঁচানোর জন্যই রাজপথে নেমেছেন চা শ্রমিকরা। বর্তমান বাজারে দৈনিক মজুরি তিনশো টাকা পেলে শ্রমিকদের জীবনে কখনোই বাড়ি-গাড়ি হবে না। তবে দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা মিলবে। চা শ্রমিকদের নিষ্পাপ শিশুদের মুখে হাসি ফুটবে। 

সবাই এগিয়ে আসুন, চা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিতে সমর্থন দিন। চা শ্রমিকদের মুখে হাসি দেখতে চাই।
লেখিকা : সৈয়দা হুমায়রা হেনা , সাধারণ সম্পাদক, ইচ্ছাশৈলি নারী ফাউন্ডেশন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪টি জিআই পণ্যের সনদ বিতরণ

জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর মিষ্টি পান

চুয়াডাঙ্গায় হিটস্ট্রোকে সার্জেন্টের মৃত্যু

দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর

শিক্ষক নিয়োগে চুক্তি ১৪ লাখ টাকায়, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার

এই গরমে কাঁচা আম খেলে যেসব উপকার পাবেন

রোজ ৫০টি চড়-থাপ্পড়েই বাড়বে নারীদের সৌন্দর্য!

নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে মেলবোর্নের পথে জায়েদ খান

মিলারদের কারসাজিতে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট: ক্যাব

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস: ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৫

চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

বগুড়ায় বোরো ধানের সোনালী রঙে কৃষকের হাসি

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজ ডুবি

হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’