ঢাকা, বাংলাদেশ

বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪

English

মতামত

কানাডা যখন কাশিপুর!!

মোঃ মাহমুদ হাসান 

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

কানাডা যখন কাশিপুর!!

সংগৃহীত ছবি

২০০৭ সালের ৩রা অগাস্ট। ঘড়ির কাঁটা বারোটা পেরিয়ে রাত তখন দেড়টা। প্রথম সন্তান সিজারিয়ান হলেও, অনড় চিকিৎসক টিমের অব্যাহত প্রচেষ্টায় স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম নেয় আমাদের দ্বিতীয় সন্তান তারিফ। নামটি যখন ঠিক করেছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই প্রত্যাশা ছিল, সে সকলের 'তারিফ' হয়ে উঠুক।

বয়স এখন তার ষোল পেরিয়েছে। মেধা ও বিচক্ষণতায়ও মন্দ নয়, কানাডা তার জন্মভূমি হলেও মাতৃভূমি বাংলাদেশ  আর মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তার অপার ভালোবাসায় সে পুলকিত হয়। তার ভালোবাসার  শিহরণ দেখে আমরাও আন্দোলিত হই। সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণা পত্রের বিষয় হিসেবে সে যখন ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ কে বেছে নেয়, সেটি তখন আমাদের পরম আনন্দে বিমোহিত করে।  


মাতৃভূমির প্রতি আকর্ষণ এক চির শাশ্বত সত্য। বিপরীত ধর্মী ভাষা আর ভিন্ন সমাজ সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা শিশু মনে পিতৃ-মাতৃভূমির প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি যেন এক অব্যাহত সংগ্রাম। পাশ্চাত্য সমাজে এ সংগ্রামটি যেন আরো সুকঠিন!! তাই শিশু সন্তান তারিফের জন্মের সাথে সাথে পিতৃ-মাতৃভূমির সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির কৌশল নিয়ে এলোমেলো ভাবনা আমায় তাড়া করে ফিরছিল। ঠিক সেই সময়ে আমার শিক্ষক পিতার বিনয়ী আদেশে যেন সম্বিত ফিরে পাই। বাংলাদেশের সদাশয় সরকার প্রবাসে জন্ম নেয়া শিশুদের স্থায়ী ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধনের অনুমোদন দেয়। সেই সুবাদে উভয় দেশের পাসপোর্ট গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। শেকড়ের প্রতি বন্ধন সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়েই হবিগঞ্জ জেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। উল্লেখ্য নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি তখন ডিজিটালাইজড ছিল না।


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০০৬ সালের ১৪ই আগস্ট এক পরিপত্রের মাধ্যমে ২০০৮ সালের মধ্যে সার্বজনীন জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রকাশ করে। জন্ম নিবন্ধন টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে পরিচালিত নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০৮ সালের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে নিয়োগ দেয়া হয় স্বেচ্ছাসেবীদের। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেসব স্বেচ্ছাসেবক যথাযথ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। আমার পরিবারের সকল সদস্যরা সরকারের এই মহতী উদ্যোগের সুযোগ গ্রহণ করে। রেজিস্ট্রেশন শেষে হলদে রঙের একটি নিবন্ধন কার্ড দেয়া হয়। পিতা-মাতার নামসহ ঠিকানা সংবলিত কার্ডটিতে জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান উল্লেখিত আছে।


২০১০ সালের জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ইতিপূর্বে নিবন্ধিত সকল নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত তথ্য ডিজিটালাইজ সার্ভারে প্রতিস্থাপিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় জন্ম নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে নিবন্ধনকৃত নাগরিকদের তথ্য অনলাইনে প্রতিস্থাপন করার দায়িত্ব পালন করে। করণিক বা তথ্য  প্রতিস্থাপনকারী আমার সন্তানের জন্মস্থান ‘কানাডা’র পরিবর্তে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে ‘কাশিপুর’ লিখে দেন। ঘটনাটি ২০১০ সালের হলেও, প্রয়োজনের নিরিখে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সেটি আমাদের গোচরীভূত হয়। বাংলাদেশি পাসপোর্টের আবেদনে ডিজিটালাইজড জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। আমি যখন অনলাইন নিবন্ধনটি সার্চ করে ডাউনলোড করতে যাই, তখনি কানাডা, কাশিপুরে প্রতিস্থাপিত হওয়ার বিষয়টি আমার নজরে আসে। 


শুরু হয় ভ্রম সংশোধনের তোড়জোড়। স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের ভাষায়, সংশোধন জটিল প্রক্রিয়া, ‘নতুন আর একটি রেজিস্ট্রেশন করে নেন’! বিষয়টি আমার কাছে আইনসম্মত মনে না হলেও স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের পরামর্শ কে মেনে নেয়া ছাড়া সে সময় কোন বিকল্প উপায় ছিল না। যে কথা সে কাজ!! শুরু হয় আরেকটি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া। বিধি বাম! একই নামে, একই পিতা-মাতার নাম সংবলিত আরেকটি নিবন্ধন সার্ভারে সংযুক্ত থাকায়, নতুন রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সফল হয়নি! বিকল্প একটাই ‘ভ্রম সংশোধন’। প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্টসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব নিজস্ব উদ্যোগে উপজেলার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদনটি অনলাইনে  দাখিল করে। কোন রকম যাচাই বাঁচাই যারা উপজেলার রাজ সিংহাসনে বসা নির্বাহী অফিসার মহোদয় আমার আবেদনটি বাতিল করে দেন। ভুলটি কর্তৃপক্ষের, নজরে আনার পর দুঃখ প্রকাশ করে সংশোধনের দায়িত্বটি ছিল তাঁদে। উল্টো ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবেদনটি বাতিল করে দিলেন!! জন্ম নিবন্ধন একজন নাগরিকের জন্মগত অধিকার! এর কোন কিছুকেই ইউএনও মশাই পাত্তা দিলেন না! 


‘প্রবাসী বাংলাদেশিী’’ শব্দটি নিয়ে নানা গাল গল্প হয! কেউ তাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা বলেন, আবার কেউবা নিজেদের প্রবাসী বান্ধব সরকার দাবি করেন। বাস্তবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিড়ম্বনাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন, এমনটি হলফ করে বলার কোন সুযোগ নেই। তদবিরের দেশে ক্ষমতার বাহার না থাকলে জীবন বড়ই জটিল। ডিজিটালাইজেশনের ফাঁদে পড়ে বিড়ম্বনার মাত্রাটি যেন আকাশ ছোঁয়ার পথে। এনআইডি, স্মার্ট কার্ড, জন্ম নিবন্ধন এসব নিয়ে প্রবাসীদের সাথে চলছে তুঘলকি কারবার। এমনিতেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায় সম্পদ নিয়ে টানাটানি চলে। ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নাই, এনআইডি নাই এসব অজুহাতে নিপীড়নের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আবার অনেক কুটনীতিক প্রবাসে থাকা বাংলাদেশীদের গড়পড়তা সরকার বিরোধী, পালিয়ে আসা লোক বলে মনে করে। এ আরেক নতুন যন্ত্রণা! অভিবাসী জীবন যেন যন্ত্রণারই স্বর্গ রাজ্য। 


যত বাঁধাই আসুক, জন্ম নিবন্ধনটি সংশোধন ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। যে কিশোর সন্তানটি নিবন্ধন শেষে তাঁর পিতৃ-মাতৃভূমির সবুজ পাসপোর্টের স্বপ্ন দেখছে, তাকে নিরাশ করার উপায় কোথায়? প্রবাসে বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে নিজ মাতৃভূমি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির অবকাশই বা কোথায়?  স্থানীয় পরিষদ চেয়ারম্যানের তদবির, সচিবের আবদার প্রয়োজনীয় ফি সহ দলিল দস্তাবেজ, কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার এক খোঁচায় আবেদনটি বাতিল করে দিলেন ইউএনও মহোদয়। হাতে সময় আছে মাত্র দু'দিন। এর মধ্যে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন হাতে না পেলে পাসপোর্টের জন্য খরচ দাঁড়াবে তিন হাজার ডলার যা প্রায় তিন লক্ষ টাকার সমমান। না, এতো সাধ্য আমার নেই। তদবির ছাড়া উপায় কি? 

//এল//

বৃষ্টি আইনে ভারতের কাছে হারল বাংলাদেশ

 ‘অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে’

এপ্রিলে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন

ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের নির্বাচনের ফলাফল

হিটস্ট্রোক হলে কী করবেন

কারাগারেও মাদকের আখড়া

ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে বিএনপিসহ ৪ প্রার্থীর

গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ

ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক সভা

মাধবদীতে প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে প্রেমিকের যাবজ্জীবন

নরসিংদীতে নগদের এজেন্টকে গুলি করে ৬০ লক্ষ টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩

৭ দিনে হিটস্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু

ওয়ালটন ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ ক্যাম্পেইন মেয়াদ বাড়লো

পিরোজপুরে কলেজছাত্র হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবি এলাকাবাসীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাকচাপায় কলেজছাত্রের প্রাণহানি