
প্রতীকী ছবি
-আচ্ছা ভাইজান আব্বায় কি চোর?
- ক্যান? কেডা কইছে তোরে এ কথা?
- সবাই আমারে কয় চোরের পোলা চোর।
- তুই কি চুরি করছোস?
- না, ভাইজান, আম্মা কইছে চুরি করতে নাই। আল্লাহ পাপ দেয়।
বড় জনের বয়স ১৩ কি ১৪। ছোটটার বয়স ৭ কি ৮। বাপের নাম রমজান। রমজান মাসে বাপে হইছিল বলে দাদা মসজিদে জিলাপি দিয়া, মিলাদ পড়ায়ে বাপের নাম রাখছিল রমজান। দাদার একসময় জমিজমা ছিল। নদীর ভাঙ্গনে কপাল ভাঙ্গছে বহু বছর হলো। বাড়িতে বাবা, মা, দাদা, দাদীসহ ওরা দুই ভাই। বৃষ্টির দিনে পানি পরলেও গরমের দিনে তেমন গরম লাগে না। রেলের ধারে ওদের খুপরি ঘর।
রাতে ঘুম ভাঙ্গলে দেখে বাজান মায়েরে কইতাছে ভালো করে তেল মাইখা দে। সরিষার তেল বুঝি বাজানের পছন্দ?
-মায়ে কইতাছে আজ না গেলে হয় না? মনে কু ডাক ডাকতাছে।
- চুপ হারামজাদি।আমি কি শখ করে যাইতাছি? বিয়ান বেলা ৬ জনের ভাত কি তোর বাপে দিয়া যাইব। তারা করে তেল লাগা হারামজাদি।
রাত হলেই বাজান কই যে যায় কে জানে। চুপ করে ঘুমের ভান করে পাটকাঠির বেড়ার কোনে চুপ করে থাকে দুই ভাই। বাজান মাথায় হাত বুলায় দিয়ে চলে যায়। বাইরে পেন্সিল লাইটের আলো। মনে হয় লোকমান চাচা। চুপ হয়ে শুয়ে থাকে। দাদা ডাকে বৌমা রমজানে কই যায়? দাদা চেখে দেখে না তয় কেমনে বোঝে? মা কয় কই আব্বা, হে তো ঘুমায়তাছে? আপনার কি জার লাগে? খ্যাতা দিমু? তোমার দাদীরে দাও। বড় বংশের মাইয়া। জার সইতে পারে না।
সকালে দুই ভাই মক্তবে পড়তে যায়। কেও ওগো লগে কথা কয় না। কয় চোরের পোলা চোর। ছোটটার মাথা বেজায় ভালো। সব পড়া একবারে মুখস্থ কয় তাও হুজুরে মারে ক্যান? বড় ভাই কয় হুজুরে মারলে ওই জায়গা আগুনে পোড়ে না।
দুই বছর পরে বড় ভাই কয় তুই মন দিয়া পড়। আমি পড়মু আবার কামও করমু। দেখিস কেও বাজানরে চোর কইতে পারবে না। আমিও কাম করুম ভাইজান। আরে পাগল তুই পড়বি আর বাড়ির কাজ করবি। মারে সাহায্য করবি। একদিন রাতে বাজান মাথায় হাত বুলায় বাইরে যাইতে গেছে অমনি বড় ভাই বাপের পা দুটো জড়ায় কয় বাজান তেমার জ্বর। তুমি শুয়ে থাক। জানো বাজান আজ মহাজনে ১৮০ টেকা দিছে। এই নাও কইয়া পেটের কাছে গিঁট মারা লুঙ্গি থেকে টাকা বের করে বাজানরে দেয়। ছেটটাও বলে জানো বাজান আমি আজ ৮০ টাকা কামায়ছি আমড়া বেচে। এই নাও। তুমি শুয়ে থাক। বাজান রেগে গিয়া কয় তোর পড়া বাদ দিছোস?
না বাজান। দুই ভাই প্রায় একসঙ্গে বলে উঠে। আমি বাজান ক্লাসে সেকেন্ড হইছি। স্যারে কইছে আমার আর বই কেনা লাগব না। স্যারে দিব।ভাইজানরেও দিব। রমজান গতোবার বাপ মায়ের মৃত্যুতে কাঁদচিলো। আজও কাঁদলো। সুখের কান্না। দুই বাপজানরে বুকে জড়ায় ধরে কান্না।
পরের দিন স্টেশনে মানুষের ভীর। দুইভাই স্কুল থেকে ফিরতাছিল। ভিড় দেখে আগায় গিয়ে দেখে বাপের সারাগায়ে রক্ত। কি লাল রক্ত। দৌড়ায় গিয়া বাপেরে জড়ায় ধরে ছোটটা চিৎকার দিয়া কয় আমার বাজানরে কেন মারছেন? ক্যান? লোকমান চাচা কয় চোরেরে মারব না তে কি সোহাগ করব?
দুই ভাই বাজানের মাথা কোলে লইয়া কয় বাজান তুমি সত্যি চুরি করছো? একদলা থুতু ফেলে বাজান কয়, নারে আমি তো আর চুরি করি না বাজান। থুতুর সাথে রক্ত গড়িয়ে পরে। ছোটটা দৌড়ে গিয়ে একটা ঠ্যালা নিয়ে আসে।বাপরে লইয়া হাসপাতালের দিকে যাইতে যাইতে দেখে বাজান হাসতাছে।
আব্বা তোমার খুব ব্যাথা লাগছে?
নারে বাজান আমার কোন ব্যাথা নাই। তোমারে মারলো কেন?
শোন বাজান এটা আগে যখন চুরি করতাম তার ফল। এতে পাপ কাটা যায়।যখন চুরি করতাম লোকে চোর কইত তয় গায়ে হাত দিতে পারত না। এখন আমি চুরি করতে দেই না, তাই মারছে। তোগো আর কেও চোরের পোলা কইব না।
কথা কইতে কইতে ওরা হাসপাতালের সামনে গিয়া দেখে এক ঝাঁক জালালি কবুতর আসমানে উড়ে গেল। চোখগুলো কালোর মাঝে লাল সূর্যের মতো। সাদা আসমানে আলোর মেলা।
ইউ