
ফাইল ছবি
সমাজের অর্ধেক অংশজুড়ে থাকা নারীদের জীবনমান উন্নয়ন শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং একটি জাতির সার্বিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। বর্তমান সময়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারে যতই অগ্রগতি হোক না কেন, এখনো বহু নারী জীবনমানের মৌলিক কিছু উপাদান থেকেও বঞ্চিত। অথচ নারীর জীবনমান হওয়া উচিত এমন-যেখানে থাকবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, আর্থিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি এবং সর্বোপরি সামাজিক সম্মান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীর জীবনমান উন্নয়নের মূল ভিত্তি হচ্ছে স্বাধীন সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার। পরিবার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবন-সব জায়গায় নারীর নিজস্ব মতামত ও পছন্দের গুরুত্ব থাকা উচিত।
একজন নারীর জন্য মানসম্মত জীবন কেবল অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার ওপর নির্ভর করে না। এর সঙ্গে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কর্মজীবী নারীদের বড় অংশ কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, হয়রানি কিংবা কাজ ও সংসারের ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে মানসিক চাপে ভোগেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টির ঘাটতি এখনো একটি বড় সমস্যা। অনেক নারী গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী জটিলতায় ভোগেন, যা প্রতিরোধযোগ্য।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও সমাজে বৈষম্য রয়ে গেছে। গ্রামের নারীদের এখনো উচ্চশিক্ষার পথ কঠিন, আর শহরের অনেক নারী পড়াশোনা শেষ করেও পরিবার ও সমাজের চাপে কর্মজীবন শুরু করতে পারেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীকে শুধু ‘মা’, ‘স্ত্রী’ বা ‘কর্মী’ হিসেবে দেখলেই চলবে না-তাকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে, যার রয়েছে নিজের স্বপ্ন, সিদ্ধান্ত, এবং নিজেকে প্রকাশের অধিকার।
এ বিষয়ে নারী অধিকারকর্মী রওশন আরা বলেন, ‘নারীর জীবনমান উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার একসঙ্গে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবে। সম্মান, সমতা ও সহযোগিতা—এই তিনটি জায়গায় উন্নতি হলেই নারীর জীবন মানে সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে।’
অতএব, নারীর জীবনমান উন্নয়নে কেবল আইনি সুরক্ষা নয়, প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, দায়িত্ববান পারিবারিক পরিবেশ এবং একটি ইতিবাচক সংস্কৃতি-যেখানে নারী নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে পারেন, নির্ভয়ে বাঁচতে পারেন এবং নিজের মতো করে জীবন গড়তে পারেন।
নারীর উন্নত জীবন মানেই একটি মানবিক, সচেতন ও প্রগতিশীল সমাজ।
ইউ