
ছবি সংগৃহীত
গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-র বিদেশি কর্মীরা বন্দি শিবিরে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মীদের মধ্যে জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, জোর করে ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খাওয়ানো এবং প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের মতো গুরুতর অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন কর্মী ও সাংবাদিক।
শনিবার (৪ অক্টোবর) ফ্লোটিলার মোট ১৩৭ কর্মীকে ইসরায়েল থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ফেরত পাঠানো হয়। এদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক ছিলেন। খবর আল জাজিরার।
গ্রেটা থুনবার্গকে 'অপমানজনক ব্যবহার'-এর অভিযোগ
মুক্তিপ্রাপ্ত কর্মী ও সাংবাদিকদের বক্তব্যে গ্রেটা থুনবার্গকে নিয়ে তোলা অভিযোগগুলি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক:
-
শারীরিক হেনস্তা: তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন চেলিক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন, বন্দি শিবিরে গ্রেটাকে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
-
প্রচারণার হাতিয়ার: মালয়েশীয় অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি এবং মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিবার অভিযোগ করেন, থুনবার্গকে ঠেলে সরানো হয় এবং তাকে জোর করে ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খাওয়ানো হয়। তাকে শরীরে ইসরায়েলি পতাকা জড়িয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং কট্টর ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের প্রবেশের সময় তাকে প্রচারণার হাতিয়ার বানানো হয়।
-
ট্রফির মতো প্রদর্শন: ইতালির সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনো বলেন, মাত্র ২২ বছরের এক সাহসী নারী গ্রেটা থুনবার্গকে ‘অপমানজনকভাবে’ ইসরায়েলের পতাকায় মুড়িয়ে ‘ট্রফির মতো প্রদর্শন’ করা হয়।
আটক কর্মীদের অমানবিক আচরণের বর্ণনা
গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়াও অন্যান্য কর্মীরা ইসরায়েলি হেফাজতে অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন:
-
খাদ্য ও পানীয় সংকট: তুরস্কের টিভি উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার অভিযোগ করেন, তাদের সঙ্গে ‘কুকুরের মতো’ আচরণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তিনদিন না খাইয়ে রাখা হয়, পানি দেওয়া হয়নি— এমনকি তাদের টয়লেটের পানি খেতে হয়েছে।
-
অসুবিধা ও বঞ্চনা: মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিবার দাবি করেন, আটক কর্মীদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
-
নির্যাতনের চিহ্ন: ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন আদালাহ জানায়, আটক কর্মীদের হাত জিপ-টাই দিয়ে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়, ওষুধ দেওয়া হয়নি এবং আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগে বাধা দেওয়া হয়েছে।
-
ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতিচ্ছবি: তুরস্কের কর্মী আয়সিন কানতোগ্লু জানান, তারা আটক কেন্দ্রে রক্তাক্ত দেওয়াল ও আগের বন্দিদের লেখা বার্তা দেখেছেন, যেখানে ‘মায়েদের নাম ও সন্তানদের নাম খোদাই করা ছিল’। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার সামান্য অভিজ্ঞতা পেয়েছেন।
ফ্লোটিলার অবস্থান ও ইসরায়েলের দাবি
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা, যেখানে ৪৪টি দেশের ৫০০ জন কর্মী ছিলেন। যদিও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, ২৬ ইতালীয়কে বহিষ্কার করা হলেও এখনো ১৫ জন ইসরায়েলি হেফাজতে রয়েছেন। ইতালির সংসদ সদস্য আর্তুরো স্কোত্তো এই আটকের নিন্দা করে বলেন, ফ্লোটিলায় থাকা মানুষজন আইনসম্মত কাজ করছিলেন, অবৈধ কাজ করেছে তারা, যারা গাজায় সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।
তবে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটক কর্মীদের ওপর নির্যাতনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, আটক ব্যক্তিদের পানি, খাবার, টয়লেট এবং আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ইউ