ঢাকা, বাংলাদেশ

মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

English

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

বৌবাজার ও উনবিংশ শতকের কলকাতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

অশোক সেনগুপ্ত

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ২০ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ২১:৩৯, ২০ মার্চ ২০২৩

বৌবাজার ও উনবিংশ শতকের কলকাতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বৌবাজার ও উনবিংশ শতকের কলকাতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

কলকাতার অতীতের পরশ পাওয়ার আশায় গোপী (মোহন) বোস লেন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে। হঠাৎ নজর কাড়ল অপরিসর রাস্তাটির দুপাশে পেল্লাই দুটি ভবন। তিন তলা উচ্চতায় ভবনদুটি রাস্তার ওপর যুক্ত ঝুলনপথ দিয়ে। এক দিকে সুদৃশ্য লাল ভবন— এটি সেন্ট জোসেফস কলেজ। রাস্তার অপর দিকে সেন্ট জর্জেস স্কুল। মুঠোফোনে ধরে নিলাম কিছু ছবি। 

ওপরের দুই যমজ প্রতিষ্ঠানের কথায় যাওয়ার আগে কীভাবে কলকাতার সমসাময়িক নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়ে উঠছিল, তার ওপর এক ঝলক চোখ বোলাই। বাংলার রেনেসাঁ আন্দোলনে রাজা রামমোহন, রাধাকান্ত দেব, রসময় দত্ত প্রমুখের উদ্যোগে ১৮১৭-র ২০ জানুয়ারি  তৈরি হল হিন্দু স্কুল। তৈরি হল হিন্দু কলেজ। ১৮১৮-তে হেয়ার স্কুল। ১৮২৪-এ সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল। 

১৮৪৯ সালে মির্জাপুরে রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের দান করা সুকিয়া স্ট্রীটের জমিতে হিন্দু মহিলা বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। প্রথমে নাম ছিল হিন্দু ফিমেল স্কুল। ২১ জন ছাত্রী নিয়ে সূচনা। ভর্তি হয়েছিলেন মদনমোহন তর্কলঙ্কারের দুই মেয়ে, কুন্দমালা আর ভুবনমালা। এক বছরে ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮০। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে সরকার এটিকে অধিগ্রহণ করে এবং ১৮৬২-'৬৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এর নাম পরিবর্তন করে বেথুন স্কুল রাখা হয়। মেয়েদের স্কুল তৈরির বিষয়ে বরাবরই বেথুন সাহেবের প্রধান সহকারী, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই স্কুলের কার্যকারী সমিতির প্রথম সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। মির্জাপুরে নিজের জমি ছেড়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণারঞ্জ‌ন। কিন্তু সবাই বেশ ভালই বুঝল অত দূরে মেয়েদের স্কুল হলে আর একটি ছাত্রীও অবশিষ্ট থাকবে না। শেষ পর্যন্ত জমি নেওয়া হল হেদুয়ার পশ্চিম পাড়ে। কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটের এক কোনে জমি কিনে শুরু হল স্কুলের স্থায়ী ভবন। এর সামনে ধাতব পাতে খোদাই হল ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ কথাটা। ১৮৫১-তে মারা গেলেন বেথুন সাহেব। সরকার ১৮৫৬-তে  স্কুলের দায়িত্ব নিল। ১৮৬২-তে নামকরণ হল বেথুন স্কুল। ১৮৭৯-তে হল বেথুন কলেজ। ইতিমধ্যে, ১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়ার প্রাচীনতম বহুমুখী ও ইউরোপীয়-ধাঁচের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৭৪-এ তৈরি হয়েছিল সাউথ সুবার্বন স্কুল। 

এর পাশাপাশি কলকাতার তৈরি হতে থাকে খ্রিস্টান মিশনারীদের নানা স্কুল। ১৮৩০ সালের ১৩ জুলাই খ্রিস্টান সংখ্যালঘু হিসাবে ডঃ আলেকজাণ্ডার ডাফ তৈরি করলেন স্কটিশ টার্চ স্কুল। এটির নিয়ন্ত্রক চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া। ১৮৬০ সালের ১৬ জানুয়ারি খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক ও পুরোহিত ডেপেলকিনের নেতৃত্বে জেসুইটরা সেন্ট জেভিয়ার্স প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৪০ সালে সেন্ট ইগনেটিয়াস অফ লয়োলা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক ‘সোসাইটি অফ জেসাস’ গোষ্ঠীর প্রবর্তন করেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে বর্তমান পাঁচ তলা কলেজ ভবনটি নির্মিত হয়।
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের মহিলা সদস্যরা তৈরি করেন সেন্ট পলস মিশন স্কুল। ১৮৮৪-তে ৫, স্কট লেনে (কল ৯) বিদ্যালয়ভবনের শিলান্যাস হয়। এটির নিয়ন্ত্রণে চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়ার ডায়োসেস অফ ক্যালকাটা। 

সেকালের কলকাতায় আধুনিক পঠনপাঠনের এই অধ্যায়ে ১৮৩০ সালে গোয়া থেকে আসা মিঃ কুপার ৬৯, বৌবাজার স্ট্রিটে বাচ্চাদের পড়ানোর একটা স্কুল খুললেন। পরে এটির দায়িত্ব বর্তায় ‘ক্যালকাটা ব্রাদার্স’-এর ওপর। ১৮৪২ সালে কলকাতার ভাইকার অ্যাপস্টলিক মঁসিয়ে ক্যারু দেখলেন এ শহরের বেশ কিছু ব্রিটিশ এবং ইওরোপীয়র মৃত্যুতে তাঁদের সন্তানরা অনেকটা অনাথ হয়ে পড়েছে। এই সব ‘ওয়ার অরফ্যান’দের দেখাশোনার জন্য প্রয়োজন হল সিস্টার এবং ব্রাদারদের। বাড়তে লাগল প্রতিষ্ঠান। অনাথ ছাড়াও অনেকে পড়তে লাগল এই স্কুলে। এখনও স্থানীয় দোকানগুলোর বোর্ডে দেখতে পাবেন অরফ্যানগঞ্জ লেন ঠিকানা। প্রভাতি বিদ্যালয় হিসাব বৌবাজারে ‘কংগ্রিগেশন অফ খ্রিশ্চান ব্রাদার্স’ সেন্ট জর্জেস স্কুল স্থাপন করে ১৮৪৮ সালে। সেই হিসাবে, ২০২৩-এ ১৭৫ বছর। 

১৮৯০ সালে তৈরি হল সেন্ট জোসেফস কলেজ। ১৮৯৪ সালে বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি হল লাল রঙের সুদৃশ্য ভবন। বিশাল স্কুলভবন ফাঁকা। খুব বড় মাপের মেরামতির কাজ হচ্ছে। ইতিহাস-ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিশদে জানার অবকাশ হল না। তবে আগ্রহীরা ‘খ্রিশ্চান ব্রাদার্স’-এর অনেক তথ্য আন্তর্জালে পেয়ে যাবেন। 

কলকাতা অনেক বদলে গিয়েছে। আরও বদলে যাবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রমবিকাশের পাঁচালি সংগ্রহ ও সঙ্কলন হয়ত ভবিষ্যতে মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। বিনোদিনী, তীর্থপতি, জগবন্ধু— এ রকম বহু স্কুল কিভাবে বা কার নামে চিহ্ণিত হয়েছে, অনেকের তা জানা নেই। কলকাতা এবং কলকাতার বাইরে উনবিংশ শতকে আরও অনেক স্কুল তৈরি হয়েছে। সেগুলোর উল্লেখ মূলত লেখাটি বড় হয়ে যাবে বলে আলোচনায় আনলাম না। এই লেখার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানলাম কেবল ভারতে নয়, গোটা এশিয়ার মধ্যে পুনের ভিদেওয়াদায় মেয়েদের প্রথম বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন জয়তীরাও ফুলে। সমগোত্রীয় দ্বিতীয়টি বেথুন স্কুল। আর বেথুন কলেজ ভারতে প্রথম মেয়েদের কলেজ। 

//এল//

এফডিসিতে মারামারি, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত

‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

এক বছরে কৃষিতে এডিপি বাস্তবায়ন বেড়েছে ৮ শতাংশ

সরিষাবাড়ীতে চিনাবাদাম প্রদর্শনীর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

স্বর্ণের দাম আরো কমলো 

পদ্মায় নিখোঁজ ৩ মাদরাসাছাত্রের মরদেহ উদ্ধার

এমপি একরামুলের শাস্তি দাবি করল জেলা আওয়ামী লীগ

বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি সাবেক চেয়ারম্যানের

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

হিটস্ট্রোক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ নির্দেশনা

নোয়াখালীতে রেজাল্ট শীট আনতে গিয়ে শিশুর প্রাণহানি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন

রাজধানীর সড়কে ‘হিট স্ট্রোকে’ চাকরিজীবীর মৃত্যু