
ফাইল ছবি
নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সব প্রকার সংবাদ বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। ৯ মে (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ৯টায় জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন এমন সিদ্ধান্ত? ১৬২ তম রবীন্দ্রনাথ জন্মোৎসব পতিসরে সাংবাদিকদের জন্য কোন আসন বরাদ্দ ছিল না। আসন না থাকায় তাৎক্ষণিক মেঝেতে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
ঘটনা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ কবির জমিদারি শুরুর দিকের একটা বিষয় মনে পড়ে গেল। জমিদার হবার পরেই রবীন্দ্রনাথ পূন্যাহ উৎসব যোগ দিতে যান শিলাইদহে। পূন্যাহ হল জমিদারিতে নতুন বৎসরের খাজনা আদায়ের সূচনা উৎসব। উৎসব উপলক্ষে কাছারিবাড়িতে চলছে নানারকম আয়োজন। বন্দুকের আওয়াজ, রোশনাই আলো, উলু আর শঙ্খধ্বনিতে কাছারিবাড়ি মুখর। সেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও মর্যাদা অনুযায়ী বসবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হিন্দুরা সতরঞ্চির ওপর চাদর ঢাকা দেওয়া আসনে একধারে বসবেন। তার মধ্যে ব্রাহ্মণদের স্থান আলাদা করা হয়েছে। আবার মুসলমানদের বসবার জায়গায় শুধু সতরঞ্চি, চাদর নেই। সদর কাছারিতে ও অন্যান্য কাছারির কর্মচারীদের মর্যাদা অনুযায়ী বসবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমিদারের জন্য রাখা হয়েছে সিংহাসন। এই প্রথা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সময় থেকে চলে এসেছে। কবি অনুষ্ঠানে আসলেন যথাসময়ে কিন্তু সিংহাসনে বসলেন না। তিনি সদর নায়েবকে বললেন যে পূণ্যাহ হল মিলনের উৎসব। এখানে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করা চলবে না এবং আসনের জাতিভেদ তুলে না দিলে তিনি কিছুতেই বসবেন না। তিনি প্রজাদের আলাদা আসন ব্যবস্থা সরিয়ে দিয়ে একসঙ্গে বসতে বললেন। প্রজারাও সব চাদর ও চেয়ার সরিয়ে দিয়ে ঢালাও সতরঞ্চির ওপর বসে পড়লেন। মাঝখানে বসলেন রবীন্দ্রনাথ। এই ছিলেন আমাদের বিশ্বকবি। উনি সাম্যে বিশ্বাস করতেন।
আজ তাঁরই জন্মোৎসবে কারো জন্য বসার ব্যবস্থা আছে, কারো জন্য নাই। যার জন্মদিন উপলক্ষে এত বড় উৎসব, তাঁরই নীতির বিপরীতে সব আয়োজন। কেমন অবাক কাণ্ড! রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আয়োজন করতে হলে শুধু আড়ম্বর থাকলেই তা সার্থক হবে না। আয়োজকদের থাকতে হবে রবীন্দ্রনাথের জীবন আর কর্ম পাঠের অভিজ্ঞতা। তাদের অবশ্যই রবীন্দ্রনাথকে মনে ধারণ করতে হবে।
মারিয়া সালামের ফেসবুক প্রোফাইলের পোস্ট থেকে সংগৃহীত...
ইউ