
ফাইল ছবি
এপ্রিল ফুল উদযাপনের ইতিহাস নিয়ে কয়েকটি ভার্সন আছে। বহুল প্রচলিত মুসলমান হত্যার গল্পের জন্য না, মানুষকে বোকা বানানো ভালো কথা না বলেই কখনও কাউকে বোকা বানাইনি। তারমানে এই না যে আমি নিজের কখনই বোকা হইনি। এরকম একটা বোকা হবার গল্প বলি।
আমি তখন বোকার হদ্দ বলতে যা বোঝায়, তাই। মফস্বলে কড়া পারিবারিক অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়েছি। বাড়ির চারদেয়ালের মাঝে বই পড়ে জগৎ চিনেছিলাম। বলা যেতে পারে 'ওয়ার্ল্ড অব ইনোসেন্স' এ ছিলাম। এরমধ্যেই, ঢাকায় এলাম সংসার করতে। কাকতালীয়ভাবেই খুব লোভনীয় চাকরির অফারও পেয়ে গেলাম খুব তাড়াতাড়ি। ২০০৭ এর কথা, কাজ শুরু করলাম কূটনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে। বয়স আর অভিজ্ঞতা খুব কম হওয়াতে প্রথমে ডিউটি ছিল ফরেন মিশনগুলোর কালচারাল আর কম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট কভার করা।
প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন কালচারাল ইভেন্টে যাচ্ছি, কত কত দামী মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছে! যাদের টিভিতে দেখে দেখে বড় হয়েছি, তাদের সাথে সামনাসামনি বসে গল্প করছি, আড্ডা দিচ্ছি। তখনও আমার গায়ে মফস্বলের গন্ধ কিন্তু তাতে করে তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। সবাই খুব স্নেহ করা শুরু করলেন খুব অল্পদিনের মধ্যেই। এরমধ্যে একদিন আমার এডিটর ডেকে বললেন, তোমার তো ভালো পরিচিতি হয়েছে, এক কাজ কর হোটেল সোনারগাঁতে গিয়ে একটা বিজ্ঞাপন দিতে বল ওদের। তুমি বললে, ওরা দিবে আশা করি।
আমি উনার কথামতো গেলাম সেখানে। একজন কর্মকর্তার সাথে মোটামুটি লাইনঘাট করে ফেললাম, মোটামুটি নিশ্চিত বিজ্ঞাপন আমরা পাচ্ছি। এরমধ্যেই সেই কর্মকর্তা একদিন ডাকলেন ইফতার করতে, ব্যক্তিগত দাওয়াত। আমি ইতস্তত করেও গেলাম। উনি বললেন, আপনার কাজ হয়ে যাচ্ছে, এবার আমার কাজ করে দেন। আমি সরল মনে বললাম, অবশ্যই বলুন কি কাজ।
উনি জানালেন, উনি একটা টিভি শো প্রডিউস করবেন, ফান্ড রেডি। আমাকে উনার খুব যোগ্য মনে হয়েছে, আমি রাজি থাকলে উনি আমাকে হোস্টিং এর দায়িত্ব দিবেন। আমি একপায়ে রাজি।
আমাদের লম্বা মিটিং চলল বেশ কয়েকদিন। আমি রোজার মধ্যে অফিস করে নানা ঝক্কি পার করে, বাসে ঝুলে ঝুলে যেতাম সেসব মিটিং এ। কিন্তু, ফাইনাল কিছুই দাঁড়াচ্ছিল না। একদিন কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে ফেললাম। আমার বিরক্তি দেখে উনি কিছুক্ষণ কি ভেবে বললেন, ওকে, যা হবার আজই ফাইনাল হবে। চলেন আমার বাসায় যাই। আমি অবাক, বাসায় যেতে হবে কেন?
উনি জানালেন, ফাইনাল কাগজপত্র উনার বাসায়। আমি বললাম, ঠিক আছে তাহলে আগামীকাল বসব আমরা। উনার জেদ না আজই সব ফাইনাল করতে হবে। এসপারওসপার আজই হবে। আমি এরমধ্যে যে অন্যকিছু থাকতে পারে সেটা তখনও বুঝে উঠার মতো বুদ্ধিমান ছিলাম না। ইফতার করে সরল মনে সোনারগাঁ থেকে উনার গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি তখন কেবল গোলচক্করে, উনার ফোনে একটা কল ঢুকল। উনি নার্ভাস হয়ে কল রিসিভ করলেন। ওপারে সম্ভবত উনার স্ত্রী। উনি হরবর করে বললেন, তোমার না আজ দুই শিফট ডিউটি? আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি হোটেলের সামনে? আমি তো কেবল বের হয়েছি, আগে বলবা না?
উনি ফোন রেখেই আমাকে বললেন, আপনি দ্রুত নামুন গাড়ি থেকে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রায় চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে আমাকে গোলচক্করেই নামিয়ে দিলেন। আমি কি হলো বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলাম।
সোনারগাঁ গোলচত্বরের কাছাকাছি বসে আছি জ্যামে। গল্পটা মনে পড়ে এদিকে আসলেই। আমি মনে মনে হাসি এখনও।
মারিয়া সালামের ফেসবুক প্রোফাইলের পোস্ট থেকে সংগৃহীত…
ইউ