সংগৃহীত ছবি
উত্তর জনপদের লালমনিরহাট জেলার গ্রামের পথে ধারে ও বসত ভিটায় এক সময় শিমুল গাছের ছিল ছড়া ছড়ি। সেই আধিক্যতা এখনো আর নেই। তবুও হারিয়ে যায়নি গ্রামের বসতভিটা, ফসলে আইলে অথবা পথের ধারে শিমুল গাছ। এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। সেই শিমুল গাছের শাখে শাখে রং লেগেছে, বসন্ত এলো বুঝি। শিমুল শাখের ফোটা ফুল বলে দিচ্ছে শীতের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে, এখন বসন্তের আগমান ঘটতে যাচ্ছে। মাঘে মাসের শেষ, আসছে আগুন ঝরা দিন ফালগুন মাস।
প্রকৃতি হতে বিদায় নেই নেই করছে তীব্রশীত শৈত্য প্রবাহ। এক সপ্তাহ আগের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম জেলায় সেই তীব্র কনকনে ঠান্ডার বীভৎস বিরুপ আচরন এখন নেই বলেই চলে। তবে শীত রয়েছে। শীত বিদায় নিতে হয়তো আর দুই সপ্তাহ লাগবে। শীতের একটি আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। শীতের সৌন্দর্য রুক্ষতায়। খসখসে খটখটায়। বাংলার চিরচেনা শীতে গ্রামের প্রতিটি ঘরে এনে দেয় পিঠার পায়েসের উৎসব। সেই শীতের বিদায় ঘন্টা বেজে যাচ্ছে। তাই প্রকৃতি রুক্ষতাকে বিদায় জানিয়ে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিতে প্রকৃতিকে সাজাচ্ছে। তাইতো গ্রামের পথে ঘাটে, বসত ভিটায় , জমির আইলে অযন্ত্রে অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিমুল গাছের ডালে ডালে ফুটছে রঙ্গিন ফুল। প্রকৃতি যেন, নিজগুলে সেজে উঠছে। শিমুলের একটা আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। শিমুলের ফুলের গন্ধ নেই, তবে তার মুগ্ধ করা রূপ রয়েছে। সেই রুপে মুগ্ধ হয়ে শিমুল শাখে পাখিরা আহারে টানে ছুটে আসে। প্রতিটি শিমুল গাছ ফুলে ফুলে যেমন শোভা পাচ্ছে, তেমনি শিমুলের ডালে ফোটা ফুলের ফাঁকে ফাঁকে নানা জাতের দেশীয় পাখির কিচির কিচির ডাক দিন ভর শোনা যাচ্ছে। পাখি আর ফুল প্রকৃতিতে মিলে মিশে একাকার।
বসন্তের আগমনে রঙের ছটা একে একে প্রকৃতিতে ফুটে উঠছে। তবে মাঘের শীতের আমেজ একে বারে মুছে যায়নি। বসন্তের সেই রক্তিম রেশ ধরে ক্ষনে ক্ষনে রক্তিম হয়ে উঠছে শিমুলের ডালে। ফুটেছে সফলের মাঠে সরিষার ফুল হলদে মাখা টকটকে কাচা হলুদ রঙ্গে। ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুর রয়েছে আলাদা রুপ, রং বৈশিষ্ট। এ দেশে হুটহাট করে উতু পরিবর্তন হয় না। ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা রয়েছে। শীতের পর বসন্তে খররোদে তপ্ত দিনের আভাস দিচ্ছে। শীতের বিদায় বেলা রোদ্দুর দিনে এখন প্রতিটি গ্রাম গঞ্জের ফসলের মাঠে কৃষক ব্যতিব্যস্ত ধানের চারা রোপনের কাজে। পথে পথে চলতে তেপান্তরের ফসলের মাঠ গুলো সদ্যরোপনকৃত ধানের চারায় ঘন সবুজ পত্রপুঞ্জে ভরে গেছে। তার রূপের বর্ণনা হতে পারে কবির ভাষায়, গানে, গজলে। শীতের শেষে রোদ্দ উজ্জ্বল হয়ে উঠা প্রকৃতিতে যেন, হাফ ছেড়ে বেঁঁচেছে শীতের কবল হতে। মানুষ বসন্তের আগমনে শীতের সৌন্দর্য ভুলতে বসেছে। তাই রং লেগেছে শিমুলের চূড়ার ডালে ডালে। লাল রং বিজয়ের, লাল রং আনন্দের, লাল রং প্রতিবাদের ও লাল রং বিপদের সংকেত। প্রকৃতির এই রং আগামীর সৌন্দর্য বয়ে আনার। গ্রামের পুষ্পশোভিত করে তুলতে শিমুল চূড়া অনন্য। ফাগুনে সেই শিমুল পাবে পরিণতি। চৈত্রে শিমুল পাবে পরিক্ক ফল। সেই ফল চৈতালি হাওয়ার ঝাপটায় বাতাসে উড়বে শুভ্র সাদা মেঘের ভেলা হয়ে। এমন দিনও আসবে আমনে পাতা ঝরে অতি রুক্ষ। দিয়াশলাইয়ের একটি কাঠি টুক করে জ্বালিয়ে দিলে মনে হবে সব পুড়ে শেষ। তখন লাল শিমুলের রং সেই বিপদের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। মুহুর্তে অনাবিল আনন্দের অনুভূতির মনকে ক্ষণিকের প্রশান্তক ভুলে বিষাদের ভরে দেয়। প্রকৃতির এই বৈচিত্র কেবল আনন্দানুভূতির সঙ্গেই নয়, কখন যেন জড়িয়ে গেছে আমাদের চেতনার অনুষঙ্গে। তাই তো আমাদের পতাকায় রক্তিম লাল রং টি চেতনার দৃঢপ্রত্যয় । শহীদের রক্তের স্মৃতি বহন করে তাকে। শিমুলের অনন্য রূপমাধুরী দিয়ে মানুষের মন ভরিয়ে দিয়েছে, তেমনি মানুষও তাকে ভালোবেসে আপন করে নিয়েছে। স্থান দিয়েছে কাব্যে, হৃদয়ে। আসলে শিমুল ভালোবাসায় দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয় চিরকাল, আপন করে তোলে অপরকে।
//এল//