ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

English

বৃত্তের বাইরে

মুক্তিযুদ্ধে এক নারীর বীরত্ব গাঁথা; যেনো রূপ কথাকেও হার মানায়!

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১; আপডেট: ১৬:৩৩, ৬ জুলাই ২০২২

মুক্তিযুদ্ধে এক নারীর বীরত্ব গাঁথা; যেনো রূপ কথাকেও হার মানায়!

হারুন-অর-রশীদ:

 বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র নারী কমান্ডার আশালতা বৈদ্য; যিনি ২২টি বড় যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে আশালতা বৈদ্য ছিলেন এস. এস. সি পরিক্ষার্থী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে একদিন রাজাকাররা উনাদের বাড়িতে এসে বাবা হরিপদ বৈদ্যর কাছে কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে আশালতা ও তাঁর বোনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।

মহাবিপদের আশঙ্কায় হরিপদ বাবু মেয়েদের রক্ষায় সপরিবারে ভারতে চলে যাওয়ার চিন্তা করতে থাকেন। এই ঘটনার আদ্যপ্রান্ত সমস্তকিছু কানে যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিনের। তিনি আশালতাকে দেশত্যাগ করে ভারতে না গিয়ে নিজের মাতৃভূমিতে থেকে দেশমাতৃকা তথা মা বোনের সম্মান রক্ষার্থে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন।

আশালতা বৈদ্য সিদ্ধান্ত নিলেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার। শুধু তাই নয়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার নিজ এলাকার সাহসী ৪৫ মহিলাকেও আশালতা বৈদ্য উদ্বুদ্ধ করেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। তাদের নিয়ে গঠন করেন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা দল। মে মাসে এ দল পুরোপুরি সংগঠিত হলে তিনি তাদের নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। হেমায়েত বাহিনীর তত্বাবধানে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয় বরিশালের হেরেকান্দি হাইস্কুলে ও লেবুর বাড়ি প্রাইমারি স্কুলে। প্রশিক্ষণ হয় রাইফেল, মেশিনগান, গ্রেনেড চার্জ সহ বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র পরিচালনার।

স্বল্পসময়ের প্রশিক্ষণে আশালতা বৈদ্য অস্ত্র পরিচালনা এবং যুদ্ধকৌশলের উপর আশ্চর্যজনক পারদর্শিতা লাভ করেন, যার কারনে আরো ৩০০ জন মহিলা সহ মোট ৩৪৫ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব অর্পিত হয় উনার ওপর। বিশাল এই মহিলা মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব পেয়ে আশালতা বৈদ্য দায়িত্ব পালনে দুঃসাহসিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেন। এবার যুদ্ধে গেরিলা অপারেশন শুরু হওয়ার পালা।

১৯৭১ এর ২৪ জুন কোটালীপাড়া, হরিণাহাটি, ঘাঘর বাজার, শিকের বাজার ও রামশীলে খান সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গেরিলা যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে আশালতা বৈদ্যের দুঃসাহসিকতা, সুনিপুণতা, দক্ষতা রূপকথাকেও হার মানায়। সেইদিন তাঁর বাহিনীর হাতে বহু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয় এবং বন্দি হয় ২৫ পাকিস্তানি সেনা। বন্দি পাকিস্তানী সেনাদের ধরে আনা হয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখানে তাদের বিচার করা হয়। বিচারকদের একজন ছিলেন আশলতা বৈদ্য। বিচারে তাদের সবাইকে হত্যার রায় হয়। আশালতার নির্দেশে সে রায় কার্যকর করা হয়। অর্থাৎ সকল বন্দী পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা করা হয়।

দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্যের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, ১৯৭১ এর এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি জানতে পারলেন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মা-বাবা তাদের নিজের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা বন্দি হয়ে আছেন। এই ঘটনা জানতে পেরে আশালতা বৈদ্য নিজেই এক দুর্ধর্ষ গেরিলা অভিযান চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর মা-বাবাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাদের নিয়ে যান শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। নিজ উদ্যোগেই সেখানে তিনি তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেন।

রামশীল নদী পাড়ে একদিন লঞ্চে করে কয়েক হাজার রাজাকার পাকিস্তানি বাহিনীকে সাথে নিয়ে আসে। সেখানে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে আশালতা বৈদ্য এবং তাঁর সহযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধ ৩ ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল। হাজার হাজার রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী নিহত হয় মাত্র কয়েক’শ মুক্তিযোদ্ধার হাতে।

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শ্বাসরুদ্ধকর ৯টি মাসের ১টি দিনও তাঁর যুদ্ধ অথবা যুদ্ধের পরিকল্পনা ছাড়া কাটেনি। এই ৯ মাস দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তাই উনার মাথায় ক্ষণিকের জন্যও আসে নাই। মাত্র ১৫/১৬ বছর বয়সে ৩৪৫ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দিয়ে ৮ এবং ৯ নং সেক্টরের অধীন গোপালগঞ্জে ছোটোখাটো অনেক গেরিলা যুদ্ধ ছাড়াও ২২টি বড় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আশালতা বৈদ্য। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে নেতৃত্ব দেন তিনি। অনেক পাকিস্তানি সেনা হত্যা করেন নিজ হাতে।
তিনি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ ছাড়াও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন নিজ হাতে। সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সহযোদ্ধাদের সারিয়ে তুলে; তাদের সঙ্গে নিয়ে আবার যুদ্ধে গেছেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি আশালতা বৈদ্য চলে আসেন ঢাকায়। ওই দিনই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তার হাতে মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র সমর্পণ করেন।
দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে তিনি উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করেন। ৮০-এর দশকে নারী উন্নয়নের লক্ষে গড়ে তোলেন সূর্যমুখী সংস্থা। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও তিনি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

আশালতা বৈদ্য তার বৈচিত্র্যময় জীবনের সেবামূলক কাজের জন্য ২০০৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বাছাই কমিটিতে মনোয়ন পর্যন্ত পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি শ্রেষ্ঠ মহিলা সমবায়ের প্রেসিডেন্ট স্বর্নপদক, রোকেয়া পদক, প্রশিকা মুক্তিযোদ্ধা পদকসহ অনেক পুরষ্কার লাভ করেছেন।

 মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র নারী কমান্ডারের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

 


(Source - sahanamabd, Wikipedia)
 

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪টি জিআই পণ্যের সনদ বিতরণ

জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর মিষ্টি পান

চুয়াডাঙ্গায় হিটস্ট্রোকে সার্জেন্টের মৃত্যু

দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর

শিক্ষক নিয়োগে চুক্তি ১৪ লাখ টাকায়, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার

এই গরমে কাঁচা আম খেলে যেসব উপকার পাবেন

রোজ ৫০টি চড়-থাপ্পড়েই বাড়বে নারীদের সৌন্দর্য!

নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে মেলবোর্নের পথে জায়েদ খান

মিলারদের কারসাজিতে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট: ক্যাব

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস: ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৫

চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

বগুড়ায় বোরো ধানের সোনালী রঙে কৃষকের হাসি

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজ ডুবি

হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’