ঢাকা, বাংলাদেশ

সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

English

মতামত

আবারও কি শেখ হাসিনার সরকার!! ম্যাজিক কোথায়?

মো: মাহমুদ হাসান :

প্রকাশিত: ১১:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

আবারও কি শেখ হাসিনার সরকার!! ম্যাজিক কোথায়?

মো: মাহমুদ হাসান,ফাইল ছবি

নব্বই এর দশকে দুর্বার গণ আন্দোলনে স্বৈরশাসনের অবসানের পর উর্দি জমানার অবসান হলেও, গত তিন দশকে তিনটি কলঙ্কের দায়, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের এড়ানোর সুযোগ নেই। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিনা ভোটে তৈরি রাবার পার্লামেন্ট, ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক, ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচন আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাসে কলঙ্কলেপন করেছে। তিনটি ঘটনায় দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী ভোটাধিকার বঞ্চিত হলেও, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন ছিল। এর প্রথমটি ঘটেছিল, বেগম খালেদা জিয়ার আমলে। শেষের দুটি ঘটেছে, শেখ হাসিনার শাসনকালে। তবে প্রথমটির সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয়টির কিছুটা গুণগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 


৯৬ সালে প্রায় শতভাগ আসনে বিএনপি'র তথাকথিত বিজয় সাধারণ জনতাকে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে, রাজপথের তীব্র গণ আন্দোলনে দ্রুততম সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। শেষোক্ত দুটি নির্বাচন, গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করলেও সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলেনি। যার ফলশ্রুতিতে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছাড়াই, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগ এখনও শাসন ক্ষমতায়। বৈশ্বিক মহামারী কোভিডের চ্যালেঞ্জ, ইউক্রেন -রাশিয়া সংকটে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা, অসাধু অর্থলোভীদের মুদ্রা পাচারের মহোৎসব, ব্যাংকিং খাতের অনাচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোন কিছুই জনগণকে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা যেমন বিনষ্ট হয়নি, প্রধানমন্ত্রীত্বের চতুর্থ মেয়াদ শেষান্তে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ আরেকটি নির্বাচনের মুখোমুখি। শাসনকালের মেয়াদে, রেকর্ড গড়েছে আওয়ামীলীগ। এমন সময়ে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, আবারো আসছে শেখ হাসিনার সরকার!! তাহলে ম্যাজিকটি কোথায়?   


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআরআই পরিচালিত জরিপের গ্রহণ যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এমন একটি খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ফলাফলও বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কি আবারও সরকারে আসছেন শেখ হাসিনা ও তাঁর দল!! অনেকটা একপেশে সংসদ, নাগালহীন দ্রব্যমূল্য, ব্যাংকিং জগতের অনাচার, অসাধু ব্যবসায়ীদের পরাক্রমশালী সিন্ডিকেট, নাগরিক জীবনে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য এর কোন কিছুই কি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার লাগাম টানতে পারেনি? তাহলে বঙ্গবন্ধু কন্যার ম্যাজিকটি কোথায়? 


শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আর আওয়ামী লীগ প্রধান। সেই সকল পরিচয়ের চেয়েও যে পরিচয়ে তিনি অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেটি হচ্ছে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। মহান জাতীয়তাবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু জাতির প্রয়োজনে আমৃত্যু লড়াই সংগ্রাম করেছেন। কারো রক্ত চক্ষু তাঁকে তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচলিত করতে পারেনি। দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেয়ার সুযোগ না পেলেও, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন একটি স্বাধীন দেশ ও মানচিত্র উপহার দিতে পেরেছেন। অবিচল দৃঢ়তা আর দুর্দান্ত সাহসিকতা আর সুদৃঢ় নৈতিক ভিত্তি ছিলো তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার অন্যতম মৌল সোপান। বাবার পথ ধরে শেখ হাসিনাও কি তাহলে সে পথেই হাটছেন?


সাহসিকতা আর দৃঢ়তায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অবিনশ্বর আত্মাকেই যেন অনুসরণ করে চলেছেন! অর্থনীতির কান্ডারী তৎকালীন বরেণ্য মন্ত্রীসহ দেশের সব বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করে দেশের অর্থ দিয়ে নির্মাণ করলেন পদ্মা সেতু। বিশ্ব ব্যাংকেকে চ্যালেঞ্জ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ স্থাপন করলেন। মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার দিয়ে বদলে দিলেন রাজধানীর দৃশ্যপট। কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করে, দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। 


কে জানতো, মহেশখালী থেকে বিচ্ছিন্ন এক ছোট্ট দ্বীপ মাতারবাড়ি হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির প্রাণ। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেটিও সম্ভব করে দেখালেন। চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে প্রমাণ করলেন দৃঢ়তা থাকলে যে কোন সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব। বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে!! সেই আকাশ কুসুম ভাবনাটিকেও বাস্তব করে তোলেন শেখ হাসিনা। রেলপথ যাবে কক্সবাজার!! দু’দশক আগে এমনটি কি কেউ ভেবেছিলেন? নান্দনিক কারুকার্য খচিত কক্সবাজারের রেল ভবন আজ দর্শনার্থীদের একটি বিস্ময়কর আকর্ষণ। যোগাযোগের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতটিকে ঘিরে, এ অঞ্চলের অর্থনীতি যে বদলে যাবে, এটি ভাবতে কোন দার্শনিক হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর এসব মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তিদের সাথে হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক বিচক্ষণতা বহুমুখী প্রতিভার এক বিস্ময়কর প্রমাণ। 


হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাওয়া উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। এমন দেশগুলোর পক্ষে পরাশক্তির চোখ রাঙানো এড়িয়ে যাওয়া মোটেও সহজসাধ্য বিষয় নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে নিষেধাজ্ঞার জুজু দেখায়, তথ্য প্রমাণ দিয়ে শেখ হাসিনা তখন তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের চোখে তখন ফিলিস্তিনের নৃশংসতম বীভৎস চিত্র ফুটে ওঠে। গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের কথা বলার নৈতিক অধিকার হারায় বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জনতার আকর্ষণ থেকে ছিটকে পড়ে পিটার হাস আর ডোনাল্ড লু’র তথাকথিত গণতন্ত্র মিশন। ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহবান জানিয়ে মানবাধিকারের ম্যাজিক ম্যান হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা!! 


একদিকে বিএনপি, জামাত সহ কিছু বিরোধী দল সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন, সংগ্রাম করছেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল নিয়ে ৭ই জানুয়ারিকে সামনে রেখে নির্বাচনী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন হাজার হাজার প্রার্থী। চারিদিকে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। তাহলে বিএনপি আর তার সমমনা দল গুলোর আন্দোলন কি ব্যর্থ? প্রোপাগান্ডা, বাইডেনের নকল উপদেষ্টা, কিছু সাইবার দুর্বৃত্ত, সাংবাদিক ফজল আনসারী আর স্বার্থান্বেষী, প্রবাসী মিশন গুলো হয়ে ওঠে বিরোধীদের নির্ভরতার প্রতিক। বিরোধীরা বলছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আসলেই কি তাই? 


প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, জনগণের পার্সেপশানটাই মূখ্য। জনগণ যদি তাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারে, তবে সেটিই হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আর গণতন্ত্রের ভাষায়, যে পদ্ধতিতে নির্বিঘ্নে, উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনের সুযোগ পায়, সেটিই হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। প্রশ্ন থেকে যায়, ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পূর্ব শর্তগুলো পূরণে সক্ষম হবে? 


নির্বাচন বর্জন বা অংশগ্রহণের অধিকার সকল যোগ্য নাগরিকেরই আছে, তবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার পরিবেশ তৈরির দায়িত্বটি বহুলাংশে নির্বাচন কমিশন আর সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। সরকার তথা আওয়ামীলীগ যদি দল ও প্রশাসন যন্ত্রের অতি উৎসাহীদের নিয়ন্ত্রণ করে ৭ই জানুয়ারী জনগণের শান্তিপূর্ণ ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়, নির্বাচন কমিশন যদি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারে তবে উৎসবমুখর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই যথাযথ রায় নিয়েই সরকারে আসীন হবে শেখ হাসিনা ও তাঁর দল। সেটি হলে জনগণের ভোট হারানোর যন্ত্রণা যেমন প্রশমিত হবে, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্ভর রাজনীতির শেষ পরিণতি হবে মুসলিম লীগের মতোই। গনতন্ত্রকামী মানুষের কাছে সেটিই হবে বঙ্গবন্ধু কন্যার আসল ম্যাজিক। 


লেখক: কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক 

//এল//

প্রতিপক্ষের জালে সাবিনা-মারিয়াদের ১৯ গোল!

‘অস্ত্র নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হোক মানুষের কল্যাণে’

কক্সবাজারে বাস-মাইক্রোর সংঘর্ষে নিহত ৪

বৃষ্টি ও গরম নিয়ে আবহাওয়ার সবশের্ষ বিজ্ঞপ্তিতে যা জানা গেল

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৯০০

নেত্রকোণা  ৪০০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ আটক ৩

৪০০ কেজির মিষ্টি কুমড়ায় নৌকা বানিয়ে ভাসালেন নদীতে

ফের ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল ঢাকার তাপমাত্রা

সোনারগাঁওয়ে বৈশাখীমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি

নারী ক্রিকেটের প্রচারণায় তিন স্কুলে জ্যোতি-মারুফারা

গাজীপুরে এএসআইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

বঙ্গবন্ধুর হত্যা ‘প্রতিরোধ যোদ্ধাদের’ চিহ্নিত করতে কমিটি

নোয়াখালীতে পুকুরে ডুবে ২ ভাইয়ের প্রাণহানি

নাটোরে আরো ২০ নারীকে সেলাই মেশিন বিতরণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপ

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়