ঢাকা, বাংলাদেশ

সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

English

মতামত

নিষ্পাপ মুখ নিয়ে মিথ্যা বলা

মির্জা নাহিদ হোসেন:

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

নিষ্পাপ মুখ নিয়ে মিথ্যা বলা

সংগৃহীত ছবি

যারা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা করেন , তারা কমবেশি আজকের লেখাটির সাথে একমত হবেন। আমরা প্রায়ই লক্ষ করি বাচ্চারা নিষ্পাপ মুখ নিয়ে প্রচুর মিথ্যা বলে। প্রথমে কয়েকটি ঘটনা আলোচনা  করি তারপর মূল কথায় আসছি।


ঘটনা -১


প্লে'র স্টুডেন্ট রাইমা( ছদ্মনাম) বাসায় গিয়ে বাবা মায়ের কাছে অভিযোগ করেছে তাকে ইংলিশ টিচার মেরেছে। অথচ ইংলিশ ম্যা'ম ওই মেয়েকেই সবচেয়ে বেশি আদর করে। এটা নিয়ে অভিভাবক তো হৈ চৈ ফেলে দিল। এতটুকু বাচ্চাকে কিভাবে মারল?
সত্যি বলতে বাচ্চার বাসায় নতুন একটা বোন হয়েছে। যেহেতু ছোট বাচ্চাটাকে সবাই কোলে রাখছে,সেটা দেখে রাইমা ইনসিকিউরড ফিল করে এবং সে স্কুলে না আসার জন্য এই মিথ্যা বলছে। আর অভিভাবক সেটা বুঝার চেষ্টাও করেননি। উল্টো টিচারকেই শাসিয়ে গেছেন।

ঘটনা -২


চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মাহি ( ছদ্মনাম)। ক্লাসে সে প্রায় অমনোযোগী থাকে। পড়া দিতে পারে না, টিচার ক্রস দিলে( অনেক স্কুলে পড়া শেখার উপর ভিত্তি করে একটা কলামে টিক চিহ্ন বা ক্রস চিহ্ন দেয়ার একটা প্রচলন আছে, যা দেখে অভিভাবক বুঝতে পারেন সহজেই বাচ্চা কতটুকু পড়া শিখেছে। শিক্ষকদের উপর কড়া নির্দেশ আছে যেন এই টিক বা ক্রস দেয়ার বিষয়ে যেন শতভাগ সততা বজায় থাকে।) সে বাসায় বলে সে পড়া পারার পরও তাকে ক্রস দেয়া হয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে করুন মুখ করে বলে, আমি পড়া পেরেছি। কিন্তু তার পাশের স্টুডেন্ট বলে সে পড়া পারেনি। অথচ বাসায় বাবা মায়ের শাসনের ভয়ে বলে, সে পড়া পেরেছে। তার এই মিথ্যে টুকুর উপর ভিত্তি করে অভিভাবক প্রধান বরাবর অভিযোগ করেছেন।


ঘটনা - ৩


নূর ক্লাস সিক্সে পড়ে। সে তারই ক্লাসের একটা মেয়েকে পছন্দ করে। ক্লাসের ফাঁকে সে মেয়েটির গায়ে কাগজ ছুঁড়ে মারে। মেয়েটিকে হাতের ইশারায় হার্টশেইপ দেখায়। ছবি এঁকে সেখানে প্লাস চিহ্ন দিয়ে তার এবং মেয়েটির নাম লিখে ক্লাসের সবাইকে দেখায়। মেয়েটি ক্লাসে না আসলে সে স্কুল পালিয়ে মেয়েটির এলাকায় যায়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে বাসায় গিয়ে বলে স্কুল ছুটি হয়ে গেছে তাই সে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছে গেছে। এরকম সে কয়েকবার করার পর মায়ের সন্দেহ হলে তার মা টিচার কল করে জিজ্ঞেস করলেন স্কুল আদৌও কখন ছুটি হয়েছে। ছেলের এই আচরণের কথা তার অভিভাবককে জানালে তারা বিশ্বাসও করেনি এইটুকু ছেলে কারো প্রেমে পড়েছে।

ঘটনা -৪


সায়না নামের এক ছাত্রী একদিন বাসায় গিয়ে অভিযোগ করেছে যে টিচার তাকে ৪র্থ পিরিয়ডে ওয়াশরুম যেতে দেয়নি। তাই সে টিফিন আওয়ার সহ ষষ্ঠ পিরিয়ড পর্যন্ত ওয়াশরুমে না গিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে ওর কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। অভিভাবকের বিশাল অভিযোগ কেন ওয়াশরুম যেতে দেয়া হলো না। অভিযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল সে ওই পিরিয়ডে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য অনুমতিও চায়নি। এরপর টিফিন আওয়ারেও ওয়াশরুমে যায়নি, আবার ক্লাস আরম্ভ হলে পরবর্তী দুটো পিরিয়ডেও কোন টিচারকেও ওয়াশরুম যাওয়ার কথা বলেনি। স্কুল ছুটির পরও ওয়াশরুমে চাইলে যেতে পারতো, তবুও যায়নি। সে আরও প্রায় দশমিনিট পরে বাসায় যেতে যেতে ওর কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। মায়ের বকুনির ভয়ে সে মিথ্যা বলে।

এবার আসি মূল কথায়। উপরের ঘটনা গুলো স্কুল গুলোতে হরহামেশাই ঘটে বলে এগুলো উদাহরণ হিসেবে দিয়েছি। একসময় বিচার কার্যে শিশুদের বয়ানকে গুরুত্ব দেয়া হতো। কারণ ওরা নিষ্পাপ এবং বানিয়ে কথা বলা বা মিথ্যা বলতে পারে না বলে। কিন্তু রোজকার জীবনে এই ধরনের ছোট বড় অবাস্তব মিথ্যা শিশুরা ইদানীং অনায়াসে বলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন বলে?

একজন শিশুর শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবার থেকে। যখন কোন শিশু কাঁদে তখন আমরা তাকে প্রথমেই প্রশ্ন করি, কে মেরেছে বাবু?
এই যে মারার বিষয়টা আমরা তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেই। সে কিছু হলেই প্রথমেই বলে অমুক মেরেছে বা তমুক মেরেছে। আদর পাওয়ার লোভে কেউ ছুঁলেও বলে মেরেছে। এই ছোট্ট মিথ্যাটুকুকে আমরা এড়িয়ে যাই বা দেখেও না দেখার ভান করি বা আহ্লাদের বহিঃপ্রকাশ ভেবে থাকি। শুরুটা এভাবেই হয়।
বাবা-মা উভয়েরই বাড়ির বাইরে কাজ করার সম্ভাবনা বেশি হওয়া সত্ত্বেও, আজকের বাবা-মায়েরা অতীতের বাবা-মায়ের তুলনায় তাদের বাচ্চাদের সাথে ঠিক ততটা (বা হয়তো আরও বেশি) সময় কাটান। তারা মাল্টিটাস্কিং করে এটি করে। যখন আপনার বাবা-মা অবশ্যই ব্যস্ত ছিলেন, তারা হয়তো একবারে একটি বা দুটি কাজ করছেন।

আমি বলছি না যে শিশুরা সবসময় মিথ্যা বলে। উন্নত বিশ্বের প্যারেন্টিংয়ে দেখা যায় তারা শিশুদের সাথে খেলার ছলে বা আদর করেও কান্নারত শিশুকে বলে না কেউ মেরেছে কি-না। প্রথমেই জিজ্ঞেস করে সে দুঃখিত কেন?
এছাড়াও আমাদের দেশের বাবা মায়েরা সন্তানকে সারাক্ষণ শাসনের মধ্যে রাখেন। তারা সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব বলতে বুঝেন হাসি মুখে কথা বলা, ঘুরতে যাওয়া। গর্ব করে বলেন আমি আমার সন্তানের সাথে বন্ধুর মতো। আমার প্রশ্ন তাহলে কেন আপনার সন্তান আপনাকে সত্যি বলতে ভয় পায়?

আমাদের প্যারেন্টিংয়ে আরেকটা দোষ হলো আমরা নিজের বাচ্চাকে সবসময় নাবালক ভাবি। সবসময়ই ভাবি আমার সন্তানকে আমি তো মিথ্যে শেখাইনি বা সে আমার সাথে মিথ্যে বলার সুযোগ যেহেতু পায় না, তাহলে সে কখনোই মিথ্যে বলে না। আমরা এই বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে থাকি যে আমার সন্তান ভালো এবং সে আমি যেমন চাই সবসময়ই তেমন। সন্তানের দোষ আমরা চোখে দেখি না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে আমার সাথে সেই দোষ করেছে।

আরও কিছু বিষয় যেমন আমরা সন্তানকে বাচ্চা বা বয়সে ছোট মনে করে তাদের সামনে সেইসব আচরণ করি যা আমরা তাদের করতে নিষেধ করি। যেমন সন্তানের সামনে ধুমপান করা। নিজের সন্তানের সামনে ধুমপান করে যে বাবা,সেই বাবাই সন্তানকে ধুমপানের জন্য শাসন করে। যে মা শিশুর সামনে অন্যের সমালোচনা করে, সে-ই আবার সন্তানকে শাসন করে অন্যের কথা না বলার জন্য। শিশুকে আমরা শিখাই বড়দের সম্মান করতে,সেই আমরাই আবার শিশুর সামনে বয়োজ্যেষ্ঠ ( বিশেষ করে বড়দের ) বদনাম করি।

সত্যি বলতে ধীরে ধীরে আমরাই আমাদের সন্তানদের মিথ্যাবাদী, স্বার্থপর এবং জটিল চরিত্রের করে তুলছি। আমাদের আচরণের প্রভাব আমাদের কোমলমতি শিশুর মনোজগতে যে কি প্রভাব ফেলছে তার নজীর ইতোমধ্যে পত্র পত্রিকার সুবাদে,সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে সবাই দেখতে পাচ্ছি। হয়তো আমার সাথে ঘটছে না বলেই আমি অন্যেরটা দেখে চুকচুক করে দুঃখ প্রকাশ করে ভুলে যাচ্ছি। সেদিন দূর নেই যেদিন এমন ছোটখাটো মিথ্যা গুলো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এই যে ভাই ভাইকে হত্যা করছে,সন্তান বাবা মাকে লাঞ্ছিত করছে,সামান্য স্বার্থের কারণে প্রিয় বন্ধুর সাথে বেঈমানী করছে,ঘুষ নিচ্ছে, ধর্ষন রাহাজানি করছে এগুলো পিছনে খুঁজলে এই ধরনের হাজারো লাখো মিথ্যা এবং স্নেহান্ধ বাবা মায়ের প্রশ্রয় দেখতে পাওয়া যাবে।

কিছু বাবা মায়েরা এখনো এই একুশ শতকে থেকেও এটাই ভাবেন যে সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলে সন্তান তাদের মান্য করবে না। এতো লাই দিতে নেই সন্তানকে। আবার অনেকে সংস্কারবশত সংকোচ ছেড়ে সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে লজ্জা পান। ইদানীং সময় পালটেছে বলে অনেকেই দাবী করবেন।

আমাদের দেশে কোনো কোনো পিতা-মাতা সন্তানের শুধু মাত্র স্বাস্থ্য ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে চিন্তা করেন। আবার কেউ কেউ শুধু সন্তানের পড়ালেখা নিয়ে অতি ব্যস্ত থাকেন। যেমন, সকালে টিচার, সারাদিন স্কুল, বিকেলে কোচিং, রাতে আরেক টিচার ইত্যাদি। অনেকে আবার সন্তানের কোনো বিষয়েরই খোঁজ-খবর নেন না, কিন্তু পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলেই শুরু করেন মারধর, শাস্তি ইত্যাদি। এ সত্ত্বেও সকল পিতা-মাতাই মনে করেন তারা “সন্তানের ভাল চান”! তারা সন্তানকে খুব ভালোবাসেন! অথচ একজন আদর্শ পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্য কখনোই এমন হতে পারে না। তো কেমন হবে? বাস্তবতা হচ্ছে, পুঁজিবাদের এই যুগে সবাই চাকরীমুখী হওয়ায় “প্যারেন্টিং” নিয়ে আমাদের সমাজে স্বামী স্ত্রীগণ কোনো শিক্ষা/প্রশিক্ষণের প্রয়োজন মনে করেন না। এই দিকে প্রত্যেক অবিবাহিত ছেলে মেয়েই ভাবে “প্যারেন্টিং এ সে খুব দক্ষ”, অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে, প্যারেন্টিং নিয়ে তাদের কোনো পড়াশোনা নেই ।

একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন তো আদৌও পালটেছে কতো খানি ? আসলেই কি আমরা আধুনিক প্যারেন্টিং বিষয়ে জানি?

লেখক:  শিক্ষাবিদ, প্রবন্ধকার  ও গবেষক।

//এল//

প্রতিপক্ষের জালে সাবিনা-মারিয়াদের ১৯ গোল!

‘অস্ত্র নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হোক মানুষের কল্যাণে’

কক্সবাজারে বাস-মাইক্রোর সংঘর্ষে নিহত ৪

বৃষ্টি ও গরম নিয়ে আবহাওয়ার সবশের্ষ বিজ্ঞপ্তিতে যা জানা গেল

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৯০০

নেত্রকোণা  ৪০০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ আটক ৩

৪০০ কেজির মিষ্টি কুমড়ায় নৌকা বানিয়ে ভাসালেন নদীতে

ফের ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল ঢাকার তাপমাত্রা

সোনারগাঁওয়ে বৈশাখীমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি

নারী ক্রিকেটের প্রচারণায় তিন স্কুলে জ্যোতি-মারুফারা

গাজীপুরে এএসআইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

বঙ্গবন্ধুর হত্যা ‘প্রতিরোধ যোদ্ধাদের’ চিহ্নিত করতে কমিটি

নোয়াখালীতে পুকুরে ডুবে ২ ভাইয়ের প্রাণহানি

নাটোরে আরো ২০ নারীকে সেলাই মেশিন বিতরণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপ

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়