ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, , ১৩ জুন ২০২৫

English

মতামত

অনলাইন জুয়া সামাজিক ব্যাধির অপর নাম

রিয়াজুল হক

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ২৮ মে ২০২৫

অনলাইন জুয়া সামাজিক ব্যাধির অপর নাম

ছবি: রিয়াজুল হক

ছোটবেলায় কারক বিভক্তিতে পড়তাম, তাস খেলে কত ছেলে পড়া নষ্ট করে। একটা সময় ছিল, যখন 'জুয়া' শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠত লুডু-ক্যারাম কিংবা তাসের খেলায় পাড়ার ছেলেদের আড্ডা। তখন জুয়া ছিল নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং সমাজেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। কিন্তু প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে এসে জুয়া পেয়েছে 'ডিজিটাল রূপ'। এখন মোবাইল ফোনেই বাজি ধরা যায়, কয়েক ক্লিকেই হারিয়ে যায় হাজার হাজার টাকা, আর চোখের পলকেই কেউ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এই অনলাইন জুয়াই এখন বাংলাদেশে নতুন সামাজিক ব্যাধির চেহারা নিচ্ছে।

অনলাইন জুয়া বলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বেটিং বা বাজির মাধ্যমে টাকা হারা কিংবা জেতাকে বুঝায়, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অথচ বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া একটি নীরব মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী, চাকরিজীবী, প্রবাস ফেরত—অনেকেই এই জুয়ার কবলে পড়ে আজ সর্বস্বান্ত। কেউ পরিবার হারিয়েছেন, কেউ জেল খেটেছেন, আবার কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন।

তথ্য মতে, দেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেটিং সাইটগুলোতে ভিপিএন ব্যবহার করে সহজেই প্রবেশ করা যায়। আবার ব্যক্তিগতভাবে তৈরি কিছু মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেশীয় তরুণদেরও এই জুয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে। অনেক সময় কোনো পরিচিত বন্ধু বা অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার প্রলুব্ধ করে এই ফাঁদে ফেলছেন।

প্রথমে ছোট একটি বাজি, সামান্য একশ বা দুইশ টাকার খেলা। এরপর একবার যদি বড় অংকের টাকা জেতার স্বাদ মেলে, তখন সেটিই হয়ে ওঠে নেশা। এক পর্যায়ে মানুষ এটিকে আর খেলা মনে করে না, মনে করে আয়ের উপায়। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা যায়, লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি। মজার বিষয় হলো, জুয়াড়িরা প্রায় সব সময় মনে করে, :একবার জিতলেই উঠে আসব', কিন্তু সেটি আর হয় না। এভাবেই চলতে থাকে অন্ধকারে নিমজ্জনের এক অন্তহীন যাত্রা।

অনলাইন জুয়ার আসক্তির সামাজিক প্রভাব অত্যন্ত গভীর। অধিকাংশই পরিবারের কাছে লুকিয়ে খেলে থাকেন। দিনের পর দিন নিজের, পরিবারের সঞ্চয় শেষ করে দেন। দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী টিউশনির টাকা কিংবা পরিবারের দেয়া পকেটমানি এই জুয়ায় ঢেলে দিচ্ছেন। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি এর মানসিক দিকটাও ভয়াবহ। জুয়া খেলতে খেলতে যারা সব হারান, তাদের মধ্যে হতাশা, আত্মগ্লানি কিংবা আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়। অনেকে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি, প্রতারণা কিংবা মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আমরা যদি একটু গভীরভাবে দেখি, তাহলে দেখব যে, অনলাইন জুয়া এখন শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। 

এই সমস্যা নিরসনে অনলাইন জুয়াকে একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন। সমাজের প্রতিটি স্তরে এ নিয়ে আলোচনা জরুরি। গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এই ব্যাধি রোধ করা সম্ভব নয়।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ২০ অনুযায়ী অনলাইন জুয়া খেলা, জুয়া সংক্রান্ত অ্যাপ বা পোর্টাল তৈরি ও প্রচারণা চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের জন্য ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য। এছাড়া, ২১ ও ২২ ধারায় জুয়া সংক্রান্ত লেনদেন, প্রতারণা বা জালিয়াতিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ।

অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এই বিষয়ে রিপোর্ট, আলোচনা, টক শো এবং ডকুমেন্টারি প্রচার করা উচিত। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের মাঝে অনলাইন নিরাপত্তা ও আসক্তির ক্ষতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা জরুরি।

এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে কাউন্সিলিং বা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে এখন আসক্তদের সেবা দেয়া হয়, কিন্তু অনলাইন জুয়ার জন্য আলাদা কোনো নিরাময় সেবা নেই। এই বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে, যাতে তারা অনলাইন আসক্তি বুঝে এর যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারেন।

মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা ছাড়া অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সাইটগুলো চিহ্নিত করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা যেতে পারে।

মনে রাখা দরকার, অনলাইন জুয়া নামক সমস্যা কোনো ব্যক্তির একার নয়। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। অনলাইন জুয়া শুধু একজনের জীবন ধ্বংস করছে না, পুরো একটি প্রজন্মকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যদি এখনই আমরা সজাগ না হই, সচেতন না হই, তাহলে এক সময় এই ডিজিটাল ব্যাধি আমাদের সামাজিক ভিত্তিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে উন্নয়নের জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়। মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটকে শত্রু নয়, বরং বন্ধু হিসেবে ব্যবহার করা শিখতে হবে। আর সেই শিক্ষাটা পরিবার, স্কুল, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দিতে হবে। আমরা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলেই এই অনলাইন জুয়া নামক সামাজিক ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নইলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ভয়ঙ্কর মূল্য দিতে হবে।

লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

কাপাসিয়ায় নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা সিলগালা

ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ

ভারতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪২ জনের মৃত্যু

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় অভিনেতা সমু চৌধুরী

ভারতে বিমান দুর্ঘটনা: ধ্বংসস্তূপ থেকে চলছে লাশ উদ্ধার

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল

মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬১৪ জন: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

এশিয়ান কাপে খেলার স্বপ্ন এখনও টিকে আছে বাংলাদেশের

ইউনূসের ‘চুরি হওয়া অর্থ’ ফেরত চেষ্টায় নীরব স্টারমার

ইরানে হামলার শঙ্কা: মধ্যপ্রাচ্য থেকে কর্মী সরাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশের পাশে যুক্তরাজ্য

অর্থপাচার: সমঝোতার পথে বাংলাদেশ

দুই সপ্তাহ পর খুলল চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের বহির্বিভাগ

২৪২ যাত্রী নিয়ে গুজরাটে বিমান বিধ্বস্ত, বহু হতাহতের শঙ্কা

প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও আদালত এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা