
ছবি সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য নীলক্ষেতে ৮৮ হাজার ব্যালট পেপার ছাপানোর ঘটনাটি নিয়ে অবশেষে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসু নির্বাচন কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত ব্যালট প্রচলিত নিয়ম মেনেই নষ্ট করা হয়েছে এবং ছাপানোর স্থান সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
ব্যালট ছাপানো ও সরবরাহ প্রক্রিয়া
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান জানান, ব্যালট ছাপানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত মূল ভেন্ডরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নীলক্ষেতে এই কাজ সম্পন্ন করেছিল।
-
ছাপানোর সংখ্যা ও প্রক্রিয়াকরণ: সহযোগী ভেন্ডর প্রশাসনকে জানিয়েছে, ২২ রিম কাগজ ব্যবহার করে ৮৮ হাজার ব্যালট ছাপানো হয়েছিল। প্রিন্টিং ও কাটিংয়ের পর প্রি-স্ক্যান পর্ব শেষে ৮৬ হাজার ২৪৩টি ব্যালট সিলগালা করে সরবরাহ করা হয়।
-
অতিরিক্ত ব্যালট নষ্ট: অবশিষ্ট অতিরিক্ত ব্যালটগুলো প্রচলিত পদ্ধতিতে নষ্ট করে ফেলা হয়।
-
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: ভেন্ডর কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলেছে যে, ব্যালট প্রস্তুত প্রক্রিয়া ও আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে চুক্তি মোতাবেক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
-
কর্তৃপক্ষকে না জানানোর কারণ: ব্যস্ততার কারণে তারা নীলক্ষেতে ব্যালট প্রিন্টিং ও কাটিংয়ের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে ভুলে যায় বলে স্বীকার করে।
-
সহযোগী ভেন্ডর নিয়োগ: রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ও প্রার্থীর স্বার্থে এবং দ্রুততম সময়ে ব্যালট ছাপানোর জন্য মূল ভেন্ডরের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমযোগ্য সহযোগী/অ্যাসোসিয়েট প্রতিষ্ঠানকে একই টেন্ডারের অধীনে কাজে সম্পৃক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
উপাচার্যের বিশ্লেষণ: প্রভাবমুক্ত নির্বাচন
উপাচার্য বলেন, ব্যালট পেপার ছাপানোর স্থান বা সংখ্যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে না। তিনি ব্যালট প্রস্তুত প্রক্রিয়ার একাধিক ধাপ তুলে ধরেন:
-
ব্যালট পেপার ছাপানোর পর তা নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটিং করা হয়।
-
এরপর সুরক্ষা কোড আরোপ করে ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যান করে মেশিনে পাঠযোগ্য হিসেবে প্রস্তুত করতে হয়।
-
চূড়ান্তভাবে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর এবং কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরযুক্ত হলেই তা ভোট গ্রহণের জন্য উপযুক্ত হয়।
-
এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যালট ব্যবহারের পরিসংখ্যান
ড. নিয়াজ আহমদ খান জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৪টি ব্যালট ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
-
মোট ভোটার: ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন (ভোটার প্রতি ৬টি ব্যালট)।
-
মোট ভোট দিয়েছেন: ২৯ হাজার ৮২১ জন ভোটার।
-
ব্যবহৃত ব্যালট: ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯২৬টি।
-
অবশিষ্ট ব্যালট: ৬০ হাজার ৩১৮টি।
সিসিটিভি ফুটেজ ও ভোটার তালিকা প্রদর্শন
সিসিটিভি ফুটেজ এবং ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা দেখানোর দাবি প্রসঙ্গে উপাচার্য পূর্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে নতুন পরামর্শের কথা জানান:
-
সিসিটিভি ফুটেজ: কোনো প্রার্থী যদি সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ের/প্রাসঙ্গিক ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান, তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তা দেখতে বা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
-
স্বাক্ষরযুক্ত ভোটার তালিকা: ভোটারদের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দেখানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞ আইনজীবীদের পরামর্শ হলো— কোনো প্রার্থী নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কারণে নির্দিষ্ট কারো স্বাক্ষর পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দেখানো যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইউ