
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
নারী সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে যৌন কর্মীদের কাজের মান উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যৌন কর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তারা এই পেশায় থাকবে কি থাকবে না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও তাদের রয়েছে । যৌন কর্মীদের লাইসেন্সের আওতায় আনার প্রতিও জোর দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু লাইসেন্সের আওতায় এলে তারা স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশের নানা রকম হয়রানির সম্মুখীন হবে কিনা তাও আলোচনায় উঠে এসেছে ।
নারীপক্ষর প্রান্তিক নারীর অধিকার আন্দোলন শক্তিশালীকরণ "যৌনকর্মীদের কাজের স্বীকৃতি ও অধিকার : নারীবাদী আলোচনা" শীর্ষক দু'দিন ব্যাপী এক মতবিনিময় সভার দ্বিতীয় দিনে বিশিষ্টজনেরা এ মন্তব্য করেন।
বুধবার (১৬ জুলাই( নারীপক্ষের আয়োজনে রাজধানীর ইকবাল রোডে ওয়াইডাব্লিউসিএ সকাল সাড়ে ১০টায় এ মতামত সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন নারীপক্ষের প্রকল্প সমন্বয়কারী জাহানারা খাতুন, সোয়াশা বাংলাদেশের জান্নাত হুসনা, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের শামীম আরা, আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টর অর্চি হক।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক খায়রুজ্জামান কামাল, যৌনকর্মী উল্কা নারী সংঘের হেনা আক্তার, রাজধানীর মুগদার কল্যাণময়ী নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ বেগম, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর সভানেত্রী ফরিদা পারভীন, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ারকাস ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন, মংলার বাণীসান্তার জাগরণী সংঘের রাজিয়া প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন নারীপক্ষের সদস্য সৈয়দা সালমা পারভীন।
এছাড়াও যৌনকর্মী, শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নারী অধিকার কর্মীরা আলোচনায় অংশ নেন।
জান্নাত হুসনা বলেন, কৌশল নির্ধারণ করার আগে আমাদের ঐক্য মতে আসতে হবে। বৈশ্বিকভাবে যৌন কর্মীদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করে দুটি বিষয়। এক. যৌনকর্ম, দুই. পাচার। দুটি শব্দের অর্থ ভিন্ন। কিন্তু যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের কথা যখন বলা হয়, তখন তারা ধরেই নেয় পাচার হওয়ায় যৌনকর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা দেখা যায়, যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা মতবিরোধ দেখা দেয়। অন্যদিকে যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের কথা বলতে গেলে আমরা আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসবো কিনা! কিন্তু আইনে এটাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এটা যে অপরাধ নয়, তা সংশোধন করা হবে কিনা? এখানে কৌশল নির্ধারণের আগে সকলকে একমত হওয়ার ধারণা পরিষ্কার করা দরকার। আমাদের এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে এটাকে অপরাধমুক্ত করতে চাই নাকি আইনের স্বীকৃতি চাই ।
জাহানারা খাতুন বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যৌনকর্মীদের উপর বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনার ঘটেছে এর কোনো বিচার হয়নি। যৌনকর্ম পেশাকে যদি আমরা কলঙ্কমুক্ত বা অপরাধমুক্ত করতে চাই তাহলে নারী সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে যা তুলে ধরা হয়েছে তাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই পেশাকে কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে।
শামীম আরা, শ্রমিকদের রক্ষাকবচ শ্রম আইন এখনো আমরা পাইনি।
অর্চি হক বলেন, যৌনকর্ম পেশা একটা ধোয়াশার জায়গা। আমাদের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, গণিকা বৃত্তি, জুয়া খেলার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যৌনকর্মকে নিরুৎসাহিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থার কথা বলা হলেও আইনে কিন্তু তা বলা হয়নি। বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩৭২-৩৭৩ ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি '১৮ বছরের নিচে ' কাউকে যদি এই পেশায় নিয়োগ করে অথবা নিয়োগের জন্য চেষ্টা করে তবে ১০ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত হবে। ১৮ বছরের উপরের ব্যক্তির সম্মতি থাকলে এই পেশায় দন্ডের কথা উল্লেখ নেই।
তিনি আরো বলেন, হাইকোটের ২০০০ সালের রায়েও যৌনকর্মকে অবৈধ বলা হয়নি, বরং যৌনকর্মীদের বাসস্থান বা পল্লী উচ্ছেদ করাকে অবৈধ বলা হয়েছে। এখানে বৈধতা, অবৈধতা কোনোটাই উল্লেখ করা হয়নি। এটাকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়ার চেয়েও অপরাধ মুক্ত করা উচিত।
রাজিয়ার মতে, আমরা ২ হাজার ৯৪ জন যৌনকর্মী ব্যাংক একাউন্টের আওতায় আসতে পেরেছি সংহতি ও নারী পক্ষের মাধ্যমে। আমাদের উচিত এই টাকাটা না ভাঙ্গা। কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সকলের মাঝে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
ইউ