
ফাইল ছবি
দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৪ সালে ৯২ শতাংশ শিশু ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং পার্টুসিস (ডিটিপি) টিকার তৃতীয় ডোজ পেয়েছে, যা টিকাদান অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সূচক। এটি ২০২৩ সালের পর থেকে ২ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ডিটিপির প্রথম ডোজ প্রাপ্ত শিশুদের অনুপাত ৯৩ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশে বেড়েছে। শূন্য ডোজ শিশু নামেও পরিচিত টিকার একক ডোজ না পাওয়া শিশুদের সংখ্যা ২৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা বছরে ২.৫ মিলিয়ন থেকে কমে ১.৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
এছাড়াও, কিশোরী মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) এর বিরুদ্ধে টিকাদানের আওতায় ২০২৩ সালে ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, ২০২৩ সালে এইচপিভি কর্মসূচি শুরু করার পর থেকে ৭১ লাখেরও বেশি মেয়েকে টিকা দিয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যানগুলো কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থাকে ছাড়িয়ে একটি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন দেখাচ্ছে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় সরকারগুলোর প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করছে। অর্থাৎ সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ এবং অংশীদারিত্ব সর্বোচ্চ টিকাদান কর্মসূচীতে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ইউনিসেফের ওয়েভসাইডে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ টিকাদান কর্মসূচী সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতিটি শিশুকে টিকা-প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য এই অঞ্চলের অভিযানে এটি একটি মাইলফলক।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা বলেছেন, ‘এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। কর্মঠ স্বাস্থ্যকর্মী, শক্তিশালী সরকারি নেতৃত্ব, দাতা ও অংশীদারদের সমর্থন এবং পরিবারের অটল আস্থার জন্য আজ আগের চেয়েও বেশি শিশু সুরক্ষিত। কিন্তু আমরা লাখ লাখ শিশুর কথা ভুলে যেতে পারি না, যারা টিকার আওতায় আসেনি। এখন সময় আরো এগিয়ে যাওয়ার, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি শিশুকে জীবনের প্রথম দিকের বছরগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করা উচিত।’
প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত এবং নেপালে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী। ভারত তাদের শূন্য-ডোজ শিশুদের সংখ্যা ৪৩ শতাংশ কমিয়েছে (২০২৩ সালে ১.৬ মিলিয়ন থেকে ২০২৪ সালে ০.৯ মিলিয়নে) এবং নেপাল ৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে (২০২৩ সালে ২৩ হাজার থেকে ২০২৪ সালে ১১ হাজারে)। পাকিস্তানও ৮৭ শতাংশে সর্বোচ্চ ডিটিপি৩ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। তবে, আফগানিস্তান এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই অঞ্চলে গত বছর কভারেজের পরিমাণ ১ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়া হাম নির্মূলে সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে, ৯৩ শতাংশ শিশু প্রথম ডোজ এবং ৮৮ শতাংশ শিশু দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে, যা যথাক্রমে ৯০ এবং ৮৭ শতাংশ থেকে বেড়েছে। হামের ঘটনা ৩৯ শতাংশ কমেছে, যা ২০২৩ সালে ৯০ হাজারেরও বেশি ছিল, ২০২৪ সালে এসে প্রায় ৫৫ হাজারে দাড়িয়েছে। তবে, টিকাদানের আওতা প্রাদুর্ভাব রোধে প্রয়োজনীয় ৯৫ শতাংশেরও কম।
ডবিêউএইচও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্টের পরিচালক ড. থাকসাফোন থামারাংসি বলেন, ‘মহামারী-পূর্ববর্তী প্রবণতাকে ছাড়িয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে টিকাদান সর্বোচ্চ হারে পৌঁছেছে দেখে আনন্দিত ডবিêউএইচও। আমাদের এই গতিতে এগিয়ে যেতে হবে এবং প্রতিটি শিশুর কাছে এই জীবন রক্ষাকারী টিকা পৌঁছানোর প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। একসাথে আমরা পারি, এবং আমাদের অবশ্যই করতে হবে’।
বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন
দক্ষিণ এশিয়ার কিশোরী মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) এর বিরুদ্ধে টিকাদানের আওতা ২০২৩ সালে ২ শতাংশ থেকে বেগে ২০২৪ সালে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, ২০২৩ সালে এইচপিভি কর্মসূচি শুরু করার পর থেকে ৭১ লাখেরও বেশি মেয়েকে টিকা দিয়েছে। একইভাবে, ভুটান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা ২০২৪ সালে যথাক্রমে ৩ শতাংশ পয়েন্ট (৯১ শতাংশ থেকে ৯৪ শতাংশ), ১৫ শতাংশ পয়েন্ট (৬০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ) এবং ১৭ শতাংশ পয়েন্ট (৩১ শতাংশ থেকে ৪৮ শতাংশ) বৃদ্ধি করেছে। নেপাল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় এইচপিভি টিকাদান অভিযান শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি মেয়েকে টিকা দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান এই বছরের শেষের দিকে তাদের এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চালু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউ