
ছবি সংগৃহীত
বর্তমানে নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
মঙ্গলবার (২৭ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো নারীবাদি সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বর্তমান সময়ে ক্রমাগতভাবে সরাসরি এবং অনলাইনে নারীর মানবাধিকার লংঘন, নারীকে হেনস্থা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের একটি উগ্র নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী নারীর স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দিয়ে মব সহিংসতা করার অপচেষ্টায় ব্যস্ত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নারীর সুরক্ষা এবং মর্যাদা রক্ষায় কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ লক্ষ্য করা যায়নি, উপরন্তু নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করে এমন একের পর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ এর খসড়ায় নারী কোটা না রেখে বিধিমালার খসড়া তৈরিসহ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে (এনসিটিআরসিএ) ৩০% (শতাংশ) নারী কোটা বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মহিলা পরিষদ মনে করে যে, একের পর এক নারী কোটা বাতিলের এ ধরণের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নারীর ক্ষমতায়ন ও বিভিন্ন পেশাসহ সকল কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াবে যা সামগ্রিক দেশের অগ্রযাত্রাকেই ব্যাহত করবে এবং টেকসহই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘বর্তমানে নারীর প্রতি বিদ্বেষ, বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা নারীর স্বাধীন চলাফেরাকে বাধাগ্রস্থ করে তুলছে। যেখানে সেখানে নারীর পোশাক, সাজসজ্জা,স্বাধীন চলাফেরা নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গণনারী কেউ এই হেনস্তা থেকে বাদ যাচ্ছেনা। গণপরিসরে নারীকে নানাভাবে শারীরিক ও মৌখিকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ‘
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি নরসিংদী সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে স্বাধীন মত প্রকাশ এবং নিজের অধিকার দাবি করায় ধর্ম অবমাননার অজুহাত তুলে তাকে নানাভাবে হুমকি এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাকে হেনস্থা করা হয়। সমাজের নারী বিদ্বেষী একটি গোষ্ঠীর সহিংস আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সুরক্ষা না দিয়ে বরং অন্যত্র বদলি করা হয় যা গণতান্ত্রিক একটি দেশের জন্য নেতিবাচক একটি উদাহরণ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে এই শিক্ষককে বদলী করার মধ্যমে নারীর বাকস্বাধীনতাকে অস্বীকার এবং নারীকে নিজ অধিকার আদায়ের কথা না বলার জন্য অদৃশ্য ভীতি প্রদর্শন করা হলো।’
নারীবাদি এই সংগঠনটি সরকারের কাছে নাদিরা ইয়াসমিনের বদলি আদেশ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা লক্ষ্য করছি নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। বিশেষত একের পর এক নারীর শিক্ষায় ও চাকুরিক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার সংকুচিত করা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা এবং নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠীর নারীর জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘‘সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি, বিভিন্নভাবে সম্প্রদায়িক সহিংসতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। যশোরের অভয়নগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মাতুয়া সম্প্রদায়ের একটি গ্রামে ধর্মীয় উৎসব চলাকালে হামলা চালিয়ে ১৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া ঝিনাইদহে নাট্য শিল্পী প্রশান্ত হালদারের বাড়িতে এবং শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাগিতে আগুন দেয়া হয়।’
‘এই সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গভীর উদ্বেগ গ্রকাশ করছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে এবং সরকারকে নারীর মানবাধিকার ও নায্যতার বিষয়ে সংবেদনশীল হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।’’
ইউ