ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, , ০৯ মে ২০২৫

English

জাতীয়

তনু হত্যার ৯ বছর: এখনও তদন্ত চলছে

উইমেনআই২৪ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২১ মার্চ ২০২৫

তনু হত্যার ৯ বছর: এখনও তদন্ত চলছে

সংগৃহীত ছবি

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের আবাসিক এলাকায় টিউশনি করাতে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী তনু৷ ঘটনার পর সারাদেশে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ প্রথমে থানা পুলিশ, পরে সিআইডি হয়ে এখন মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)৷


সেখানেও একবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে৷ তারপরও মামলার তদন্তে নেই কোনো অগ্রগতি৷ তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তার মরদেহের দুইবার ময়না তদন্ত হয়েছে৷ লাশের জামা কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষায় অন্তত: তিন জন পুরুষের শুক্রাণু পায় সিআইডি৷ কিন্তু ওই তিনজন কে, তা আজো চিহ্নিত করা হয়নি৷

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমি কার কাছে বিচার চাইব? আমি আর বিচার চাই না৷ ৯ বছরে তো কোনো বিচার পাইনি৷ মামলার তদন্তের কোনো অগ্রগতি আমার জানা নেই৷ সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞেস করুন৷ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যের ঘটনা৷ আপনাদের কাছে বলে আমার কী হবে? আমি তো আসামির নামও বলেছিলাম৷ সার্জেন্ট জাহিদ৷ তাকে তো গ্রেপ্তার করা হয়নি৷''

তনুর বড় ভাই নাজমুল হোসেন বলেন, ‘‘নতুন তদন্ত কর্মকর্তা ফোন করে বলেছেন, আমাদের পরিবারের সবার আবার জবানবন্দি নেবেন৷ আমাদের এতো জবানবন্দি নিয়ে কী হবে? আর কত বার আমরা জবানবন্দি দেব৷ আগের কর্মকর্তারা তো নিয়েছেন৷ তারা তো তদন্তও করেছেন৷ তারা যা পেয়েছেন তা ধরে কাজ করলেই তো হয়৷ একটা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ঘটনা৷ সেটা একটা রেস্ট্রিকটেড এরিয়া৷ সেখানে একজন জিওসি আছেন, একজন স্টেশন কমান্ডার আছেন, একজন ব্রিগেড কমান্ডার আছেন৷ তারা থাকার পরও তারা যদি বলেন জানেন না, তাহলে আপনি কী বলবেন? দুনিয়ায় আর কিছু বলার থাকে? আমার বাবা-মা তো বার বার সার্জেন্ট জাহিদের নাম বলেছেন৷ তাকে তো আটক করা হলো না৷ সে এখন কোথায়?''

‘‘এখন মনে হচ্ছে আমাদের মেরে ফেলতে চায়৷ আমাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ আমরা দুই ভাই কোথাও যেতে পারছি না৷ আমাদের একরকম ঘেরাও করে রাখা হয়েছে,'' বলেন তিনি৷ কারা এসব করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কারুর নাম বলতে চাই না৷''

‘তদন্তে অগ্রগতি আছে'

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলামের কাছে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মামলার তদন্তে অগ্রগতি আছে৷ তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ অপরাধীদের চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে৷''

মামলা অভিযোগপত্র দ্রুত দেয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখনো বলা যাবে না৷ আমরা তদন্ত করছি৷ তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে৷ কতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাও বলা যাবে না৷ তবে আমরা আবারো নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব৷''

‘তিনভাগ মামলায় শাস্তি হয়'

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে বাংলাদেশে ধর্ষণসহ নারী-শিশু নির্যাতনের যেসব মামলা হয় তার মধ্যে শতকরা তিনভাগ মামলায় আসামির শাস্তি হয়৷ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানও একই কথা বলেন৷ বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷

ইশরাত হাসানের মতে, ‘‘আসলে ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কম৷ আর মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শেষ পর্যন্ত সাক্ষী পাওয়া যায় না৷ থানা সঠিক সময়ে মামলা না নেয়ায় আলামত নষ্ট হয়ে যায়৷ আর ধর্ষণ মামলার আসামি যখন জামিন পায় তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হয়৷ প্রভাবশালীরা ভিকটিম ও সাক্ষী সবাইকে হুমকির মধ্যে রাখে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত বিচার পান না ধর্ষণের শিকার নারী৷''

মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘‘আমরা যে মামলাগুলোর দায়িত্ব নিই তার প্রায় শতভাগ মামলায় ধর্ষণের শিকার নারী বিচার পান৷ কিন্তু অন্যরা তো পায় না৷ আমরা আইনজীবী নিয়োগ করি৷ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার ব্যবস্থা করি৷ ভিকটিমদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করি৷ সেটা যদি সরকারের পক্ষ থেকে সব মামলার ক্ষেত্রে হতো তাহলে শাস্তির হার বেড়ে যেত৷''

তিনি বলেন, ‘‘কুমিল্লার তনুকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভিতরে৷ আমার মনে হয় এটার দায় তারা নিতে চায় না৷ তাই হয়তো ৯ বছরেও এই মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না৷ এই সরকার এসেও উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ এটার তদন্ত ও বিচার হবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷''

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা ৩০০টি ধর্ষণ মামলা নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ তার কথা, ‘‘আমার গবেষণায় আমি দেখেছি ১০ বছর পর্যন্ত যেসব শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ওইসব ক্ষেত্রে সময়মতো মামলা হয়৷ ১০ বছরের বেশি বয়সি যারা ১৮ বছর পর্যন্ত যারা তারা কনসিভ করে ফেলে৷ সেক্ষেত্রে অধিকাংশ ঘটনাই সালিশের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘মামলা দায়ের করা থেকে শুরু করে আসামি ধরাসহ সবক্ষেত্রে পুলিশকে টাকা দিতে হয়৷ ফলে টাকার প্রভাবে বিত্তশালী ও প্রভাবশালীরা মামলাগুলোকে শেষ পর্যন্ত অচল করে দেয়৷''

সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে ৮৫টি ধর্ষণ এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ তবে মামলা হয়েছে ৭০টি৷ আর ৪ থেকে ১২ বছর বয়সি ২০টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ ২০২৪ সালে ৪০১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷

আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ

সম্প্রতি মাগুরায় শিশু ধর্ষণের পর সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠলে সরকার আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়৷ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় মামলার তদন্তে ১৫ দিন এবং বিচারের জন্য তিন মাস সময় নির্ধারণ করে দিয়ে আইন সংশোধন অনুমোদন করা হয়েছে৷ বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের শাস্তি করা হয়েছে সাত বছরের কারাদণ্ড৷ আর মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল আছে৷

অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘‘তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে কোনো লাভ নেই৷ প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিচারক ও আদালত৷ আর সময় নির্ধারণ করে দিলেও আপিল আদালতে তো আর সময় নির্ধারণ করে দেয়া যায় না৷''

মালেকা বানু বলেন, ‘‘আইন পর্যাপ্ত আছে৷ প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ এবং বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা৷''

বাংলাদেশে যেসব ধর্ষণের ঘটনা আলোচিত হয়, সেইসব মামলায় বিচার পাওয়া যায়৷ দেখা যায় ওই দুই-একটি মামলার বিচার হলেও বাকিগুলোর খবর থাকে না, বলেন ইশরাত হাসান৷

২০২০ সালের ৩ অক্টোবর কুষ্টিয়ার মিরপুর থানা এলাকায় মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় দ্রুত তদন্ত ও বিচারের রায় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়৷ ওই মামলায় ১০ দিনে চার্জশিট এবং বিচার শুরু হওয়ার তিন দিনের মধ্যে রায় দেয়া হয়৷ রায়ে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল কাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২০১৮ সলের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধু৷ ওই মামলায় রায় দেয়া হয় ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি৷ রায়ে ১০ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়৷

২০১৯ সালের মার্চে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও হত্যা মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে ওই বছরেরই ২৪ অক্টোবর আদালত ফাঁসির আদেশ দেন৷

কিন্তু ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট এমসি কলেজ হোস্টেলে তরুণী ধর্ষণ মামলার বিচার এখানো শেষ হয়নি৷

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘নানা প্রক্রিয়ায় ধর্ষণের ঘটনার বিচার বাধাগ্রস্ত করা হয়৷ তারমধ্যে একটি প্রক্রিয়া আছে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে সমাধান করা৷ নারী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হলে টাকা পয়সা দিয়ে মীমাংসা করা হয়৷ আর রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা বিচারের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে৷''

তিনি বলেন, ‘‘কুমিল্লার তনু ধর্ষণ এবং হত্যা হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে৷ এই কারণে কর্তৃপক্ষ তাদের গায়ে আঁচড় যাতে না লাগে সেজন্য এই মামলাটির সুরাহা এখনো হয়নি৷ কর্তৃপক্ষ চাইলে অনেক আগেই এর তদন্ত এবং বিচার হয়ে যেত৷''

সূত্র: ডয়চে ভেলে

//এল//

জনসমাগম কমলেও আওয়াবী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন চলছে

মধ্যরাতে আইভীর বাসায় পুলিশের অভিযান, বাড়ি ঘিরে রেখেছে জনতা

নতুন পোপ কার্ডিনাল রবার্ট প্রেভোস্ট

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ

মাহফুজ ও আসিফকে সরকার থেকে সরে আসতে বললেন এনসিপি নেত্রী

বেনজীর কন্যার দুবাইয়ের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রীর প্লট-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়ল

মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: গভর্নর

জোড়াতালি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সম্ভব নয়: তথ্য উপদেষ্টা

ওয়ালটনের অত্যাধুনিক স্মার্ট ফ্রিজ উন্মোচন

ভারতের ১৫ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের, দাবি দিল্লির

ভারতের ৪০-৫০ সেনাকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর

বৈদেশিক সহায়তা হ্রাসে সংকটের মুখে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম