সমুদ্রমৃত্যুর পুর্ণিমা
উড়ে যাচ্ছে যেন রৌদ্র বাতাসের বাষ্প হয়ে, এমন একটা বোধে ঘাই খেয়ে, ফের নিজের
মধ্যে ফিরে আসে, নাহ! আর পারা যায় না,মিলির জিভ তো
নয়, শব্দের তলোয়ার। ভীতু পুরুষের বউরা বোধ হয় এমনই হয়।
মিলির দু বার বিয়ে ভেঙেছে। এখন
ওমরের বসের সাথে দিব্যি চুটিয়ে প্রেম করছে।
যখন ওমর তাদের তার বাড়ি যেত, অদ্ভুত সফেদ কফিন যেন মিলি,,
জগৎ বিস্মৃত হয়ে ঠায় বসে থাকতো।
মাথার ওপর অন্ধকার মাদুরের মতো
ছায়া বিছায়িত করে থাকত।
খালাত ভাই ওমর মিলির এই রূপ সহ্য করতে পারত না।
বলত, তুমি আমার সাথে একটু বাইরে বেরোবে?
মিলি চুপ।
তুমি এমন ভাব করছ,যেন কেউ মরে গেছে, বিয়ে ভাঙা
এ কোন খুব বড় ঘটনা?
ওমরের কথাগুলো স্তব্ধ ছায়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসত।
হঠাৎ দেখা যায়,একটা দামী গাড়ি মিলির বাড়িতে আসা যাওয়া করছে,আ
র এরমধ্যেই মিলি হুট করে বলে,আমার জীবনের সাথে পথ চলবে চলবে ওমর?
ওমর যেন সাত সমুদ্রের ভ্রমর হয়ে ওঠে। তন্দ্রায়, স্বপ্নে
অহর্নিশ যেন মন আরেক মন কে, শরীর আরেক শরীর
আকুল পান করায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।
বিয়ে হয়ে যায়।
কিন্তু মিলি নিজেকে ছুঁতে দেয়না,বলে তোমাকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছি,
সমাজে মাথা তুলে চলছ,আর কী চাই.?,,
মিলির অপুর্ব মুখখানায় ক্রোধ নেই,যেন ডাহুক
তিরতির কন্ঠে ডেকে সত্য জানান দিচ্ছে,
মাথা তুলে চলছি না, ওমর আহত কন্ঠে
বলে,চারপাশে জঘন্য কথা হয়,
রীতিমতো ঢি ঢি পরে গেছে,শুনতে পাও না?
তোমার মতো থার্ডক্লাশ লোকেরা তোমাকে শোনায়, আমাকে নয়।
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। মিলি বস আর ওমর।
ড্রাইভারের পাশে বসে পেছনের
নানারকম হাসির চ্ছটায় কান্না পেতে থাকে ওমরের।
কয়েকটা মাস ধরে সারা অস্তিত্বে রীতিমতো সাপের
ছোবল খেয়ে খেয়ে জীবন কাটাচ্ছে সে। চাকরির জায়গায়
আশেপাশে তাকে মাগী বলেও তাচ্ছিল্য করে কত,
কিন্তু সে মিলির কাছ থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার
পথ খুঁজে পায় না।
নিঃসঙ্গ ওমরের কাছের ছিটকে থাকা মানুষ
বলে, ডিভোর্স দিয়ে দাও,এটা কোন পুরুষের জীবন?
ভেতরে মিনমিন করে বহু টাকার কাবিন,মাথার ওপর
প্রভাবশালী,, আসলে তাও,না,আমার আজীবনের
প্রেম,হোক একতরফা, প্রেম তো?
সেই শৈশব থেকে মিলি ওমরের প্রাণের সাথে জুড়ে আছে।
আর মিলি জানে না, এর আগে দুবার বিয়ে ভাঙানোর কাজটা
অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে ওমরই করেছিল।
একদিন ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করেছিল বস তোমাকে বিয়ে করে না কেন?,
মিলি হাসে, বলে বুদ্ধু সে তার ওয়াইফকে অনেক ভালোবাসে।
ওমরের কন্ঠ থেকে ভাষা খসে পড়ে,
সে বিস্ময় নিয়ে ভাবে জগতে আহ! জগতে
কত রকম ভালোবাসা!
ও আমার সারাজীবন স্বপ্ন ছিলো, যেভাবেই হোক মিলি আমার সাথেও আছে,
এই বা কম কী? প্রায়ই নিজের সাথে মগ্ন থাকে ওমর।
আজও সেই আকুতিতে সেই মুহূর্তের ভাঁজ তরঙ্গ তার শরীরকে উত্তপ্ত করে তোলে।
গাড়ি এসে একটা দামি হোটেলের সামনে দাঁড়ায়, ওমর লাগেজ ধরলে বস বলে
আরে থামো থামো, হোটেলের লোক
এসে নিয়ে যাবে। তিনটি রুম ভাডা হয়েছে, বা
ইরে গিয়ে রুম শেয়ার করতে অসহ্য লাগে মিলির।
এরপর যার যার রুমে দুজন ফ্রেশ হতে চলে যায়।
রাতের একটা খাম্বা ধরে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে ওমর।
অতপর দরজা খোলার শব্দ। মিলে নাইট গাউন গায়ে দিয়ে
বসের রুমের পাশে যেতেই দরজা খুলে যায়, ধেয়ে
আসে কন্ঠ, ওমর কই?
মিলি বলে নিজের রুমে হয়ত, না না,
মনে হয় সমুদ্রের কাছে গেছে, এর আগে কোনদিন দেখেনি তো!
নিভৃত দরজা দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
সিঁড়ি ভেংগে নিচে যায় সে। সমুদ্র পূর্ণিমাপ্লাবিত মেরুদণ্ডহীন
আমাকে সারাক্ষণ একটা মিনমিনে সত্তা
মাথা নিচদিকে ঝুলিয়ে রাখে।
এভাবে বাঁচার অর্থ নেই। আমি না থাকলে মিলি কীভাবে কার ঘাড়ের ওপর
পা ফেলে এমন মস্তি করে সেও একটা দেখার ব্যাপার।
গনগনে ক্রোধে বিস্ফোরিত হতে থাকে ওমর।
পরক্ষনেই নিভে যায়,অবশ্য, সেই দেখা আর জীবনেও আমি দেখব না।
ঘোর আচ্ছন্ন ওমর মন্দারমণির সীমাহীন সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়।
কাপুরষ বলবে কল্লোরিত মানুষ?
বলুক,আমার সীমাবদ্ধতা কেবল আমিই জানি।
সমুখে যেন অনেক জোনাকির কলরোল,যেন স্বপ্ন
কুড়ানো সারসার খুকি জলের ফেনায় উচ্ছ্বসিত হয়ে,
তীরের দিকে আছড়ে পড়ছে।
না,মিলি আর তারমধ্য কোন ভুল নেই। ওমরই
তাদের মধ্যে কুৎসিত এক অবয়ব হয়ে লটকে আছে।
ঝাঁকড়া জলস্রোতের ফেনা ওমরের পা ভিজাতে ছুটে আসছে।
ওমরের সারা অস্তিত্বে ভূত চেপেছে যেন,
অদ্ভুত জোসনার তুমুল ঘোরে পড়ে যেতে থাকে,ওমর
ভুলে যেতে থাকে তার জীবনে কী ছিলো, কী নেই,
সমুদের পুর্নিমার উচ্ছ্বাস তাকে উন্মাদের মতো
হাতছানি দেয়।
ওমর মাঝসাগরে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়।
//জ//