
ফাইল ছবি
বাংলা সাহিত্যের বিপ্লবী কণ্ঠস্বর কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধুই বিদ্রোহ ও সাম্যের কবি নন, ছিলেন নারীর অধিকারের অন্যতম সাহসী ও অগ্রপথিক কণ্ঠ। বিশ শতকের শুরুর সমাজব্যবস্থায় যেখানে নারী ছিল অন্তরালবন্দি, সেখানে নজরুল তাঁর কবিতায় নারীর মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সমঅধিকারের পক্ষে উচ্চারণ করে সাহিত্যে সৃষ্টি করেছিলেন নতুন ইতিহাস।
নজরুলের কবিতায় নারী কেবল কারো বোন, কন্যা বা প্রেয়সী নন-তিনি এক শক্তিমান, স্বাধীন সত্তা। তাঁর কবিতা ‘নারী’-তে কবি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন-
'বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'
এই পঙক্তিগুলোর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সভ্যতার সব অগ্রগতিতে নারী-পুরুষ উভয়ের অবদান সমান, এবং কোনো পক্ষকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। নারীর এই মূল্যায়ন তখনকার সময়ের জন্য ছিল এক বিরল ও বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গি।
নজরুল নারীকে কেবল ঘরকোণ বা সেবাপরায়ণ চরিত্রে আবদ্ধ রাখেননি, বরং তাঁকে যোদ্ধারূপেও কল্পনা করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘নারী’ ও ‘নারী ও পুরুষ’ এ নারীর প্রতি সামাজিক অবমূল্যায়নের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি লিখেছেন-
‘আমি কবি, আমি প্রেমিক, আমি দ্রোহী,
আমি বেদনারে বাসর রাতের চিরচেনা অতিথি।
আমি নারীকে দিয়েছি রণতুর্য,
নারী আজ আর নিঃসহায় নয়!’
নজরুলের আরেক বিখ্যাত কবিতা ‘নারী’-তে রয়েছে নারীর শক্তি ও সাহসিকতার মহিমা। তিনি বিশ্বাস করতেন, নারী নিজেই তার ভাগ্যনিয়ন্ত্রক, এবং তাকে মুক্ত করে দিতে হবে সামাজিক শৃঙ্খল থেকে। তাঁর লেখায় বারবার ফিরে আসে নারীকে অবদমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
সমসাময়িক সমাজব্যবস্থায় যখন নারীর অধিকার নিয়ে নানা বিতর্ক ও আন্দোলন চলছে, তখন কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়-নারীকে সম্মান করা মানেই মানবতাকে শ্রদ্ধা জানানো। নজরুলের সাহিত্যে নারীর স্বাধিকার নিয়ে যে স্পষ্ট ও সাহসী অবস্থান দেখা যায়, তা আজো প্রাসঙ্গিক, আজো প্রেরণাদায়ী।
তার জন্মদিনে তাই নতুন করে ফিরে দেখা দরকার তাঁর সেই কবিতাগুলো, যেখানে নারী ছিলেন গৌরব, সম্ভাবনা এবং সংগ্রামের প্রতীক।
ইউ