
ফাইল ছবি
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। তিনি শুধু বিদ্রোহের কবি নন, ছিলেন মানবতার কবি। তাঁর কলমে যেমন ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, তেমনি ছিল মেহনতি মানুষ, নিপীড়িত সমাজ আর ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের জন্য ভালোবাসা ও সহানুভূতির শক্তিশালী উচ্চারণ। নজরুলের কবিতা তাই শুধু সাহস নয়, তা এক ধরণের মানবিক বিবেকের জাগরণ।
নজরুলের লেখায় বারবার উঠে এসেছে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আহ্বান। তিনি চেয়েছেন এমন একটি সমাজ, যেখানে জাত, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণিভেদ থাকবে না; থাকবে শুধু মানুষের মর্যাদা। তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘সাম্যবাদী’-তে তিনি গেয়ে উঠেছিলেন সেই স্বপ্নের কথা, যেখানে সব বাধা, সব ব্যবধান মিলিয়ে এক হয়ে যায়। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই—এই বিশ্বাস তাঁর প্রতিটি কবিতায় ছড়িয়ে আছে।
তাঁর 'মানুষ' কবিতায় যেমন ধর্মীয় ভেদাভেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা যায়, তেমনি প্রেমের কবিতাগুলোতেও মেলে গভীর মানবিকতা। নজরুলের প্রেম শুধু একক বা ব্যক্তিগত নয়, তা হয়ে উঠেছে সমগ্র মানবজাতির প্রতি ভালোবাসার ভাষ্য। তার কবিতায় প্রেম আর দ্রোহ কখনো একে অপরের বিরোধী হয়ে ওঠে না, বরং একসঙ্গে গড়ে তোলে একটি মানবিক ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় যে বজ্রনিনাদ, তা কেবল শাসকের বিরুদ্ধে নয়, তা মানুষের প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক কণ্ঠস্বর। নজরুল নিজেকে শুধু একজন কবি হিসেবে নয়, মানবতার পক্ষের একজন যোদ্ধা হিসেবেই প্রকাশ করেছেন বারবার।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন সমাজে নানা ধরনের বিভাজন, ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে, নজরুলের কবিতা যেন নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তাঁর রচনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে গড়ে তুলতে হবে এক ভালোবাসা ও সম্মানের সমাজ।
আজ কবির জন্মদিনে তাঁর সেই চিরন্তন বাণীই উচ্চারিত হচ্ছে সর্বত্র—মানুষ হ, আগে মানুষ হ। নজরুলের কবিতা শুধু পাঠের জন্য নয়, তা জীবনের জন্য। কারণ তিনি ছিলেন এমন এক কবি, যিনি কলম দিয়ে গড়তে চেয়েছেন মানবতার জয়গান।
ইউ