ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, , ২৩ অক্টোবর ২০২৫

English

সাক্ষাৎকার

‘যদি বাঁচি, ভালোভাবে বাঁচা উচিত’

প্রকাশিত: ০০:০০, ৫ জুন ২০২১

‘যদি বাঁচি, ভালোভাবে বাঁচা উচিত’

উইমেনআই২৪ ডেস্ক: মাদক তার জীবনের সব আশার আলোই কেড়ে নিচ্ছিলো৷ সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও উদ্যোক্তা হিসেবে কীভাবে দেশে-বিদেশে সুপরিচিত হয়েছেন, সেই প্রত্যয়ী গল্প গণমাধ্যমকে শুনিয়েছেন আনুশেহ্ আনাদিল ৷

প্রশ্ন: আপনি মাদকের অন্ধকার জগতে কিভাবে ঢুকে পড়েছিলেন?

আনুশেহ্ আনাদিল: কোনো না কোনো কারণ তো আছেই৷ কারণ ছাড়া কেউ এই অন্ধকার জগতে ঢোকে না৷ আমি আসলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে এই জগতে ঢুকে পড়ি৷ আমি পড়তাম হলি ক্রসে৷ সেখান থেকে আমাকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করা হলো৷ আমার বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি ক্যানাডায় গিয়ে পড়ালেখা করি৷ তখন আমি ইংরেজির কিছুই জানতাম না৷ আমার বয়স ১২-১৩ বছর হবে৷ তখন আমি হতাশা বা নিরাপত্তাহীণতায় ভুগতে থাকি৷ আমি ক্রিয়েটিভ মানুষ, গান করি৷ আমাদের স্কুলে যে সিস্টেম তা এটাকে নার্সিং করে না৷ তারা পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে যেটা স্টুডেন্টরা নিতে পারে না৷ সেই হতাশা থেকেই আমি এর মধ্যে ঢুকে পড়ি৷ আমি তো হেরোইনের নেশা করতাম৷ আমি ১০ বছরের মতো নেশা করেছি৷

প্রশ্ন: তখন আপনাকে নিশ্চয়ই ‘খারাপ' পরিবেশে থাকতে হয়েছে, ‘খারাপ' মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়েছে? কীভাবে ওই সময়টা পার করেছেন?

আনুশেহ্ আনাদিল: আমি আসলে ওই চোখে দেখি না৷ মানুষ ভাবে যে, যারা নেশা করছে ওরা খারাপ মানুষ৷ আসলে ওরা কিন্তু খারাপ মানুষ না৷ অভাবের কারণে হয়ত তারা এগুলো বিক্রি করছে৷ খারাপ মানুষ হচ্ছে যারা এগুলো আনে৷ আমি মনে করি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, জাবির খান- এরা খারাপ মানুষ৷ এরা তো আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷ নেশা করার কারণে কিন্তু আমি সব ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশতে শিখেছি৷ আমি যখন নেশা করতাম সেখানে কিন্তু একটা রিক্সাওয়ালাও নেশা করে, বড় লোকের ছেলেও করে, সবাই কিন্তু মিশে যায়৷ অনেকের ধারণা, আমার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে অন্য কারো কারণে৷ আসলে অন্য কেউ আপনাকে নষ্ট করতে পারে না৷ নেশা করাটা যেমন আমার সিদ্ধান্ত, আবার ছাড়াটাও আমার সিদ্ধান্ত৷ বাবা-মা কিন্তু জোর করে আমাকে ছাড়াতে পারতো না৷ যারা নিজেরা ছাড়তে পারে না, ওরা এখনও নেশা করছে৷

প্রশ্ন: এক ধরনের হতাশা তো আপনার মধ্যে ছিলই, কিন্তু এই পথে যাওয়ার পেছনে কি কোনো বন্ধু বা অন্য কারো ভূমিকা ছিল?

আনুশেহ্ আনাদিল: আমার কোনো বন্ধু না, আসলে বিষয়টি পুরোপুরি পারিবারিক৷ যদি কোনো বন্ধু কিছু করেও থাকে, সে তখন আমার মতো ইনোসেন্ট৷ সে-ও তো বাচ্চা৷ তাদের তো দোষ দেওয়া যাবে না৷ আমি বাউল ফকিরদের ফলো করি৷ আমার লাইফস্টাইল ভিন্ন৷ আমি প্রকৃতির সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি৷ কংক্রিটের জঙ্গলে আমরা থাকি৷ আমাদের দেশে প্রচুর নামকরা লেখক, গায়ক, তারাও কিন্তু নেশা করে৷ অনেকেই এই জগত থেকে ফিরে এসেছেন৷ আমার সঙ্গে বসে কিন্তু পুলিশরা পর্যন্ত নেশা করেছে৷

প্রশ্ন: আপনার নেশার টাকার উৎস কি ছিল? আর পরিবার বিষয়টি কিভাবে দেখতো?

আনুশেহ্ আনাদিল: অনেকদিন পর্যন্ত পরিবার বোঝে নাই৷ বাসা থেকেই টাকা হয়ত এদিক-ওদিক করে নিতাম৷ বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করতাম৷ আর নেশা করলে একটুখানি চুরি করার প্রভাবও চলে আসে৷ আমার পরিবার যখন বুঝতে পেরেছে, তখন তারা পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে৷ এরপরও অনেক বছর কাজ করেনি৷ এরপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছি৷ আসলে আমার নানা তখন বেঁচে ছিলেন৷ তিনিই প্রথম বিষয়টি বুঝতে পারেন৷ উনি আমাকে অনুরোধ করেন এই পথ থেকে ফিরে আসতে৷ তখন আমি বিয়েও করে ফেলেছি৷ আরেক বাসায় থাকতাম৷ আসলে যারা বিক্রি করে তাদের ধরা হচ্ছে, কিন্তু যারা আসলে এগুলো নিয়ে এসেছে, তাদের কি ধরা গেছে? জাবির খানকে কি এখনো ধরা গেছে? সে তো বহু মেয়েকে নষ্ট করেছে৷ থাইল্যান্ড থেকে সে-ই প্রথম ইয়াবা নিয়ে আসে৷ সে আসলে একটা জেনারেশনকে ধ্বংস করে দিয়েছে৷

প্রশ্ন: আপনি যখন ওই জগতে ছিলেন, তখনকার কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা কি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করা যায়?

আনুশেহ্ আনাদিল: অবশ্যই৷ আপনি নেশা করবেন আর খারাপ অবস্থায় পড়বেন না, এটা তো হতে পারে না৷ আমার সামনেই নেশা করতে করতে যে নারীর কাছ থেকে আমি কিনতাম, উনি মারা গেছেন৷ আমার কিছু বন্ধু মারা গেছে৷ এক বন্ধু তো পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ফিরে হুট করেই পড়ে মারা গেল৷ এক বন্ধু তো পঙ্গু হয়ে গেছে৷ আপনাকে তো সবসময় পুলিশকে ডিল করতে হচ্ছে৷ সবসময় লুকাতে হচ্ছে৷ একবার তো আমি যে বস্তিতে মাদক নিতাম, সেখানে পুলিশ রেইড দিলো৷ আমি বস্তির মহিলাদের শাড়ি পরে তাদের মতো করে শুয়ে থেকেছি৷

প্রশ্ন: এই যে আপনার সামনে একজন মারা গেল, তখন আপনার অনুভূতি কী ছিল?

আনুশেহ্ আনাদিল: ভয় হতো, আমিও হয়তো ওদের মতো একদিন মারা যাবো৷

প্রশ্ন: আপনি যে ফিরলেন, আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল?

আনুশেহ্ আনাদিল: যদি বাঁচি, ভালোভাবে বাঁচা উচিত৷ আর মরে গেলে মরে যাওয়াই উচিত৷ এই ভাবনা থেকেই আমি ফিরে এসেছি৷ অর্ধেক মরা হয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই৷ যে নেশা করে, সে জানে ওটার মধ্যে কত কষ্ট৷ এটা কিন্তু শারীরিক একটা কষ্ট৷ হেরোইন এমন একটা নেশা, একবার নেওয়ার পর আবার না নেওয়া পর্যন্ত আপনার শরীরে যন্ত্রণা হতে থাকে৷ এই কারণে দেখবেন যারা নেশা করে তারা এতটা দুর্বব্যহার করে৷ তখন আমার ওজন হয়ে গিয়েছিল ৯৮ পাউন্ড৷ আমাকে দেখেই যে কেউ বলতে পারতো আমি মারা যাবো৷ বাঁচতে চাওয়ার কারণেই আমার ফিরে আসা৷ আমার নানা ফিরে আসার ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রেখেছেন৷ আমি তখন গান শুরু করেছি, ব্যবসাও শুরু করেছি৷ আসলে এর মধ্য দিয়ে আমার যাত্রাও শুরু হয়ে গেছে৷ নেশার কারণে আমি অফিস ম্যানেজ করতে পারছিলাম না৷ অফিসের টাকা আমি নষ্ট করে ফেলছিলাম৷ আমার মা আমাকে অনেক বাজে রিহ্যাবে রেখে চলে এসেছেন৷ সেখানে তো আমাকে অ্যাবিউজ করা হয়েছে৷

প্রশ্ন: ফিরে আসার সময় আপনার কষ্টটা কেমন ছিল?

আনুশেহ্ আনাদিল: আপনি যদি ১০ বছর ধরে নেশা করেন তাহলে আপনার বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা থাকবে না৷ ওই জগত আর বাস্তব জগত তো পুরোই আলাদা৷ আমার অনেক সময় লেগেছে৷ আমি যখন সর্বশেষ রিহ্যাবে ছিলাম, তখন কিন্তু অনেক কিছুই ভাবতাম৷ আসলে ওটা তো অন্য জগতের ভাবনা৷ পরে যখন ফিরে আসি, তখন আস্তে আস্তে বুঝতে শিখি আমার আসলে কী করতে হবে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

অবশেষে কমলো রুপার দাম

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের নতুন কঠোর নির্দেশনা

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের নতুন কঠোর নির্দেশনা

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের নতুন কঠোর নির্দেশনা

ইরানে উসমান (রা.)-এর সময়ের কুরআন প্রদর্শনী

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানাল এনসিপি

মানবসম্পদ: প্রযুক্তি বনাম মানবিকতা

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আইন থাকলেও বাস্তবায়ন নেই

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

ওআইসি’র সহযোগিতা চাইলেন রিজওয়ানা হাসান

ইবতেদায়ী শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট, উপদেষ্টার পদত্যাগ চান

নতুন পুত্রসন্তানের বাবা হলেন গায়ক জেমস

সরকার নিরপেক্ষভাবেই কাজ করছে: আসিফ নজরুল

সততা দেখান, ভয় পাবেন না: ইসি

নোয়াখালীতে ফরম ছিঁড়ে প্রার্থীর ভাইকে মারধর