
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম ................ ছবি: সংগৃহীত
উপরের আবরণ টকটকে লাল, ভিতরে টলটলে রসালো ফল বলতেই মনে আসে বেদেনা বা ডালিমের কথা। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও রসালো মিষ্টি। পুষ্টিগুণেও ভরপুর এই সুস্বাদু ফল। ভিটামিন, ফোলেট, পটাশিয়াম এবং নানা রকম অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে এই ফলে। সব মিলে স্বাস্থ্যের যত্ন নেয় বেদেনা।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেদেনার বীজে রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগুণ, হৃদরোগ এবং ক্যানসার-সহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগভোগের হাত থেকে রক্ষা করে আমাদের।
তিনি বলেন, তাই রোজের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন বেদেনা বা ডালিম। বেদেনা বা ডালিম খাওয়ার উপকারিতা সর্ম্পকে তিনি আরো বলেন, বেদেনায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। শরীরের সার্বিক সুস্থতার জন্য প্রতিটি মানুষের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আর বেদানার বীজে ও থাকে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতে রয়েছে পলিফেনলের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
পরিচালক আরো বলেন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগও প্রতিরোধ করতে পারে। বেদেনার বীজ হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এই ফলের বীজে ফাইবারের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। অন্ত্র এই ফাইবার থেকেই পুষ্টিগুণ শোষণ করে থাকে। যে কারণে বেদেনা খেলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ও দূর হয়। তাছাড়া, এর বীজে ফাইবার এবং প্রদাহ-বিরোধী গুণ থাকার কারণে হজমও ভালো হয়। হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা দ্রুত নিরাময় হয়।
এই ফলে হার্ট সুস্থ থাকে, বীজ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে, রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালীগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে বেদেনার কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমায়। ফলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই ফল। বেদানার রস ত্বকের বলিরেখা কমায়, ট্যান পড়া আটকায়, ব্রণ কমায়, কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে ডিটক্সিফাই করে। অকাল বার্ধক্যের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। তাই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং তারুণ্যময় ত্বক পেতে হলে রোজ অবশ্যই খান বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
তিনি আরো বলেন, বেদেনার বীজ ক্যানসারও প্রতিরোধ করতে পারে। এর বীজে এমন কিছু যৌগ রয়েছে, যেগুলি শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর স্বাভাবিকভাবে ক্ষতিকারক কোষগুলিকে নির্মূল করতে পারে। যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে ক্যানসারের প্রকোপ থেকে বাঁচতে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় বেদানা রাখতেই পারেন।
বেদানার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, ফোলেটের মতো বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, ভিটামিন কে হাড় সুস্থ রাখে। অন্যদিকে, পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ফোলেট কোষ মেরামতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, বেদেনায় রয়েছে তিন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট-ট্যানিন, অ্যান্থোসিয়ানিন ও এলাজিক অ্যাসিড। অ্যান্থোসিয়ানিন দেহ কোষ সুস্থ রাখার ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে পারে বলে জানান তিনি।
//জ//