ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

English

ফেসবুক থেকে

‘আমার প্রিয় তাহের ভাই’

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১৫ মার্চ ২০২৩

‘আমার প্রিয় তাহের ভাই’

ফাইল ছবি

‘‘ছবিটি তাহের ভাইয়ের। কেউ মারা গেলে তার পরিবারের নিকটতম সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ তাকে খুব মনে করে না। এমনকি জীবদ্দশায় যারা প্রাত:স্মরণীয় থাকেন, মৃত্যুর পর তাদের স্মরণ করার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ না থাকলে শিগগিরই তারা বিস্মৃতি অতলে হারিয়ে যান। আমি তাহের ভাইকে ভুলতে পারি না। আমরা একসাথে ঢাকা শহরের অলিগলিতে পায়ে হেঁটে ঘুরেছি, যোগ করলে কয়েকশো মাইল হবে, এক সঙ্গে যত সকাল নাশতা করেছি, জ্ঞান হওয়ার পর তত সংখ্যক সকাল পরিবারের সদস্যসহ আর কারো সঙ্গে নাশতা করেছি কিনা সন্দেহ। সেই তাহের ভাইয়ের অস্তিত্বহীনতায় এখনো বুকের এক কোনায় চিন চিন ব্যথা অনুভব করি।’

‘ক্লাসমেট, রুমমেট এবং বন্ধু  --  এই তিনটি সম্পর্কের রসায়ন এমন ছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ বছরে (সেশনজটের কারণে ৪ বছরের অনার্স, মাস্টার্স শেষ করতে ৭ বছর লেগেছিল) তাঁর সঙ্গে আমাকে অথবা আমার সঙ্গে তাকে না দেখলে পরিচিত জনের অনিবার্য প্রশ্ন ছিল, “তাহের/তাহের ভাই কোথায়?” অথবা “মঞ্জু/মঞ্জু ভাই কোথায়?” ফযর নামাজ থেকে শুরু করে নাশতা, ক্লাস, দুপুর ও রাতের খাবারের সময় আমরা একা থাকলে দু;জনকেই এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। দু’জনের সম্পর্কের এই গভীরতা সত্ত্বেও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আমি তার কোনো বক্তৃতা শুনিনি। তার ছবিটি দেখে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে তিনি জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন। আমি তার চমৎকার বক্তৃতার কথা লোকমুখে শুনেছি, কিন্তু আমার শোনার ভাগ্য হয়নি।’

‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে বেজোড় সংখ্যার রুমগুগুলো নিচতলায়, জোড় সংখ্যার রুম দোতলায়। হলে দুই বেডের রুম সংখ্যা মাত্র চারটি। দুটি ইস্ট হাউজে, দুটি ওয়েস্ট হাউজে। মাস্টার্স পরীক্ষার আগে ওয়েস্ট হাউজের দোতলায় দুই বেডের ১৫২ নম্বর রুম আমাদের দু’জনের জন্য বরাদ্দ হয়। দু’জন মাস্টার্স পরীক্ষার্থী আমাদের ধরেন, তাদের পড়াতে হবে। কারণ তারা কখনো ক্লাস করেননি। তাদের কোনো বই ছিল না। এমনকি কোন্ পেপারের জন্য কোন্ বই সাজেস্ট করা হয়েছে, তাও তাদের অজানা ছিল। দু’জনই আমাদের কয়েক বছরের সিনিয়র। কিন্তু যে শিক্ষাবর্ষে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার কথা, তারা কোনো কারণে তখন পরীক্ষা না দেওয়ায় আমাদের সতীর্থ হতে হয়েছিল।’

‘একজন আমাদের হলেরই সিনিয়র খায়রুজ্জামান বতু। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টির টিকেটে ফরিদপুরের নগরকান্দা আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এখন ‘মাস্তান’ বলতে যা বোঝায়, সেই অর্থে বতু ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মাস্তানই ছিলেন। তাকে সবাই ভয়জনিত সমীহ করতো। জুনিয়ররা তার চোখের দিকে তাকাতো না। সেই বতু ভাই কবিতাও লিখতেন। ভালো কবিতা। আমাকে কয়েকটি কবিত দিয়েছিলেন আমার কাগজে ছাপানোর জন্য। তার একটি কবিতার কয়েক লাইন এখনো আমার মনে আছে:

“কাজীর কেতাবে সব লেখা থাকে,
থাকে না শুধু সঙ্গমের কথা,
অথচ অনিবার্য সঙ্গম।
কাজীর কেতাবে দেনমোহর,
খোরপোশ, এমনকি থাকে
তালাকের কথাও,
শুধু উহ্য সঙ্গমের কথা ---,”’

‘আরেকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র। তিনি জীবিত আছেন। তার নাম উল্লেখ করছি না। কারণ, পরবর্তীতে তিনি ব্যাংকিং সেক্টারে এত উচ্চাসনে উঠেছিলেন, আমরা যে তাকে পড়িয়েছি, তা কারো কাছে যেমন বিশ্বাসযোগ্য হবে না, এবং কথাটি তার পরিচিতজন জানলে তিনিও বিব্রত বোধ করবেন। তিনি তার সম্মান নিয়ে থাকুন। আমরা প্রতিটি পেপারের সম্ভাব্য প্রশ্নগুলোর ওপর তাদের পালা করে লেকচার দিতাম। অধিকাংশ বিকেলে তাহের ভাই বাইরে থাকতেন বলে আমাকেই বেশি লেকচার দিতে হয়েছে। বিনিময়ে তারা দু’জন হলের ক্যান্টিনে আমাদের চা-সিঙ্গারা খাওয়াতেন। দু’জনই নি:সন্দেহে মেধাবী ছিলেন। দু’একবার লেকচার দিলেই তারা আয়ত্ত্ব করে ফেলতেন। তারা মাস্টার্স পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।’

‘আমরা ১৯৭৪ সালে অনার্সে ভর্তি হই, ১৯৮০ সালে আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষার পর হল ত্যাগ করি। তাহের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। এই বিচ্ছিন্নতা আমার জন্য বেদনাদায়ক ছিল। কয়েক বছর ঢাকায় কাটানোর পর তাহের ভাই তার মূল কর্মকাণ্ডের এলাকা চট্টগ্রামে চলে যান। যোগাযোগ আরো ক্ষীণ হয়। কিন্তু যখনই ঢাকায় এলেই সময় করে আমার অফিসে আসতেন। আমার বাসা অফিস থেকে আট-দশ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে ছিল। তিনি বলতেন, ‘চলেন, বুজি’র (আমার স্ত্রী) সাথে দেখা করে আসি।’ আমি তাকে বাসায় নিয়ে আসতাম। তাকে কখনো আধা ঘন্টার বেশি আটকে রাখতে পারিনি, অতএব কখনো তাকে চা-বিস্কুট ছাড়া আপ্যায়ন করা হয়নি। আমাদের অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে আমার বড় ভাই পাশেই জহুরুল হক হলে থাকতেন, তার সাথে তাহের ভাইয়ের পরিচয় হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার বহু পরও তিনি তাকে ভুলে যাননি। ভাইয়ের কথা খুটিয়ে খুটিয়ে জানতে চাইতেন। আমার শ্যালক হোসেনকেও তিনি চিনতেন, তার কথাও জানতে চাইতেন।’

‘তাহের ভাই তাঁর ধর্মনিষ্ঠা, সদাচার ও অন্যান্য মহৎ গুণের অধিকারী হওয়ায় মৃত্যুর পর ভালো মানুষের জন্য প্রতিশ্রুত যে স্থানে তার থাকার কথা, আমার মাঝে ওইসব গুণের অনুপস্থিতিতে আমার সেখানে পৌছার সুযোগ নেই। তাই পৃথিবীতে থাকতেই আমি শুধু বলতে পারি, ‘তাহের ভাই, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন!’’

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর ফেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলের পোস্ট থেকে সংগৃহীত…

ইউ

পালিয়ে আসা ২৮৫ সীমান্তরক্ষীকে ফেরত নিচ্ছে মিয়ানমার

গরম আরও বাড়ার আভাস 

বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী

ইরানে হামলার খবরে বেড়েছে তেল ও স্বর্ণের দাম

পর্তুগালে বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্য প্রদর্শনী

হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু

গরমে কষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে থাকা অসুস্থ শিশুদের

সরিষাবাড়ীতে উজ্জ্বল হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন 

সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম

সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি 

‘মানুষ এখন ডাল-ভাত নয়, মাছ-মাংস নিয়ে চিন্তা করে’

কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে  বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত 

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট