ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ১৩ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪

English

ফেসবুক থেকে

দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে মন্দাকিনীর সঙ্গ

মিলি সুলতানা

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ১ মার্চ ২০২৩

দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে মন্দাকিনীর সঙ্গ

ফাইল ছবি

‘‘তৎকালীন বম্বের মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের পার্টনার ছিলেন ‘রাম তেরি গঙ্গা মাইলি’র নবাগতা অভিনেত্রী মন্দাকিনী। রাজকাপুরের আবিস্কার নীল চোখের মন্দাকিনীকে সাদা ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি পরে জলপ্রপাতের নিচে গোসল করতে দেখে তাকে গ্যাংস্টারের মনে ধরে যায়। "রাম তেরি গঙ্গা মাইলি" পুরো সিনেমা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেছিলেন দাউদ ইব্রাহিম। স্ক্রিনে ধারালো ফিগারের মন্দাকিনীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেন, মন্দাকিনীকেই তিনি তার পার্টনার বানাবেন। তিনি তার বন্ধুদের সাথে গসিপ করেছিলেন যে জলপ্রপাতের নীচে সাদা শাড়ি পরে তাকে স্নান করতে দেখে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন। বলিউডের অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন দাউদ ইব্রাহিম। অসংখ্য অসংখ্য বিগ বাজেটের হিন্দি ছবিতে তিনি অর্থ বিনিয়োগ করতেন। তাই গ্যাংস্টারকে তোয়াজ করেই চলতেন সবাই। ফিল্মি পার্টির আয়োজন করতেন দাউদ।’

‘সেইসব পার্টিতে কে না আসতেন? হেমা মালিনী রেখা শ্রীদেবী জয়াপ্রদা মিনাক্ষী শেষাদ্রি  ভানুপ্রিয়া রাধিকা পুনম ধীলন পদ্মিনী কোলাপুরী টিনা মুনিম রতি অগ্নিহোত্রী জিনাত আমান সোনু ওয়ালিয়ার মত গ্ল্যামারাস নায়িকারা বাধ্য হয়ে দাউদ ইব্রাহিমের জমকালো পার্টির অতিথি হতেন। ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেকে আসতেন। কারণ মাফিয়া ডনের দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানানোর ক্ষমতা সম্পর্কে  সবাই অবগত ছিলেন। বলা হত, যারা দাউদের মেহমানদারি গ্রহণ করতেন না, তাদের ক্যারিয়ার সর্বনাশ করে দিতেন দাউদ ইব্রাহিম। এটাও শোনা যায়, দিব্যা ভারতীর স্বামী সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার সাথে দাউদ ইব্রাহিমের অন্তরঙ্গতা ছিল। ছবি বানানোর জন্য সাজিদকে অর্থায়ন করতেন দাউদ ইব্রাহিম। ঝলমলে  সুন্দরী দিব্যা ভারতীর উপর চোখ পড়ে দাউদের। দিব্যাকে রক্ষিতা বানাতে চেয়েছেন। সাজিদ বহু চেষ্টা করেছেন দিব্যাকে তার মাফিয়া ডন বন্ধুর হাতে তুলে দিতে। কিন্তু দিব্যা ভারতী  মাফিয়া ডনের রক্ষিতা হবার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তাই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।’

‘প্রায় সব অভিনেত্রীকে দাউদ ইব্রাহিমের কাছে আসতে হত। ঘনিষ্ঠ হওয়া লাগতো। কারণ তাকে সন্তুষ্ট না করলে চিত্রজগতে টিকে থাকা যাবেনা। এছাড়া জীবন দুর্বিষহ হবার ভয়ও ছিলো। এত এত নায়িকার কাছ থেকে মনোরঞ্জন পাওয়ার পর দাউদের নজর আটকে যায় ড্যান্স ড্যান্স,কমান্ডো,পরম ধরম, লোহা, দুশমন, প্যায়ার কে নাম কুরবান, রাম তেরি গঙ্গা মাইলিখ্যাত মন্দাকিনীর উপর। দাউদের সাথে দেখা করা এবং তার সাথে সম্পর্ক শুরু করা মন্দাকিনীর জন্য মোটেও কঠিন ছিল না। মন্দাকিনী স্বেচ্ছায় দাউদের পার্টনার হন। প্রায়ই তাদেরকে একসাথে দেখা যেত। বিশেষ করে শারজায় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত পাকিস্তানের মধ্যেকার ম্যাচ দেখতে যেতেন তারা। এভাবে মন্দাকিনী দাউদ একসঙ্গে অনেক সময় কাটাতে শুরু করেন। পরবর্তীতে বলিউডে বেশ কয়েকটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন মন্দাকিনী।  মন্দাকিনী যখন ছবির চুক্তিপত্রে সাইন করতেন সে সময় দাউদ ইব্রাহিমও উপস্থিত থাকতেন। ধীরে ধীরে মন্দাকিনী সম্পর্কে কয়েকজন নির্মাতা অনীহা দেখাতে শুরু করেন। দাউদ তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তারপরও মন্দাকিনী সম্পর্কে নেগেটিভ ইমপ্রেশন হয়।’

‘মন্দাকিনী শ্যুটিং করতে গেলে দাউদ ইব্রাহিমের অনুচররা শ্যুটিং স্পট ঘিরে থাকতো। এতে ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যরা খুব বিরক্ত হতেন। কিন্তু ভয়ে মুখে কিছু বলতেন না। এ জাতীয় ঘটনা নিয়ে "ড্যান্স ড্যান্স" ছবির নায়ক মিঠুন চক্রবর্তী ক্ষিপ্ত হয়ে লোকেশন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। দাউদের হুমকি পেয়ে চল্লিশ মিনিটের মধ্যে মিঠুনকে আবার শ্যুটিং স্পটে ফিরে আসতে হয়েছিল। তবে দাউদ ইব্রাহিম মন্দাকিনীকে তার আন্ডারওয়ার্ল্ড অপরাধ থেকে দূরে রেখেছিলেন। ১৯৯৩ সালের বোম্বে বিস্ফোরণে দাউদ ইব্রাহিম প্রধান সন্দেহভাজন ছিলেন। ঘটনার ঠিক আগে মন্দাকিনীকে বিভিন্ন জায়গায় দাউদের সঙ্গে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। বিস্ফোরণের ঘটনার পর মন্দাকিনী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। তিনি অনেকদিন ব্যাঙ্গালোরের একটি খামারবাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হন।’

‘মন্দাকিনী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম ছিল ইয়াসমিন জোসেফ। রাজকাপুর যখন তাকে আবিষ্কার করেন তার নীল চোখ আর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। রাজকাপুর তার নাম রাখেন মন্দাকিনী। তিনি ১৯৮৫ সালে "রাম তেরি গঙ্গা মাইলি" চলচ্চিত্রে প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাকে কাস্ট করেন। এ ছবিতে মন্দাকিনীর বিপরীতে ছিলেন রাজকাপুরের ছোটছেলে রাজীব কাপুর। চলচ্চিত্রটি ব্লকবাস্টার হয়েছিল।’

‘তবে রাজ কাপুর এই ছবির জন্য প্রথমে ডিম্পল কাপাডিয়াকে সাইন করিয়েছিলেন। ডিম্পলকে নিয়ে ছবির কয়েকটি দৃশ্যের শ্যুটিংও করে ফেলেন তিনি। কিন্তু একপর্যায়ে তার মনে হল, ডিম্পলের মুখচ্ছবির সাথে রাম তেরি গঙ্গা মাইলির পারফেক্ট তরুণীর মুখচ্ছবি ম্যাচ হচ্ছেনা। পাহাড়ি তরুণী হিসেবে ডিম্পলকে এই চরিত্রে মানাচ্ছেনা। তিনি দুরন্ত এক পাহাড়ি তরুণীকে খুঁজছিলেন। যেটা তিনি মন্দাকিনীর মধ্যে পেয়ে গেলেন। মন্দাকিনীকে একনজর দেখেই জলপ্রপাতের নিচে দাঁড়ানো ললনা হিসেবে কল্পনা করে ফেলেন রাজকাপুর। তবে এই ছবিতে মন্দাকিনীর জলপ্রপাতের দৃশ্য নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছিল। তখন এই দৃশ্য নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। দৃশ্যটি ৮০'র দশক অনুসারে ব্যাপক সাহসী দৃশ্য হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

‘দাউদের রক্ষিতা থাকাকালীন সময়ে মন্দাকিনী এক সন্তানের জন্ম দেন। সবাই মনে করে এই বাচ্চার অঘোষিত পিতা ছিলেন দাউদ ইব্রাহিম। মন্দাকিনীকে দাউদ বিয়ে করেননি। তার একটাই স্ত্রী মেহজাবিন শেখ ওরফে জুবিনা জেরিন। দাউদ জুবিনার  তিনমেয়ে একছেলে -- মাহরুখ, মাহরিন, মারিয়া এবং মঈন নেওয়াজ।  জাভেদ মিঁয়ানদাদের ছেলে জুনায়েদের সাথে দাউদের মেয়ে মাহরুখের বিয়ে দেয়া হয়। এই বিয়ের কারণে মিঁয়ানদাদকে ভারতে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তানে শক্ত ঘাঁটি নিয়ে বসেছেন দাউদ। তিনি করাচিতে ৫৪ হাজার বর্গফুটের প্রাসাদোপম বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করছেন। করাচিতে বসেই তার মাফিয়া সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন। মন্দাকিনীর বয়স এখন ঊনষাট বছর। ১৯৯০ সালে তিনি বিয়ে করেছেন প্রাক্তন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কাগউর টি রেনপোচে ঠাকুরকে। তাদের দুই ছেলেমেয়ে রাব্বিল ঠাকুর ও রাবজো ইনায়া ঠাকুর।’’

মিলি সুলতানার ফেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলের পোস্ট থেকে সংগৃহীত…

ইউ