ফাইল ছবি
নার্গিস-সুনীল দত্তকে বলা হয় স্বর্ণযুগের স্বর্ণ দম্পতি। শুরুতে নার্গিস রাজকাপুরের প্রেমে পড়েন। নার্গিস রাজকাপুর রুপালি পর্দার বিখ্যাত জুটিতে পরিণত হয়েছিলেন। মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন রাজকাপুরকে। কিন্তু রাজকাপুর অনেকের সাথে ফ্লার্ট করে বেড়াতেন। লতা মুঙ্গেশকর বৈজয়ন্তীমালা নূতনের সাথে ফ্লার্ট করতেন কাপুর খান্দানের বড় ছেলে। বিবাহিত ছিলেন রাজকাপুর। তা সত্ত্বেও নার্গিস তার দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু রাজকাপুরের পক্ষে স্ত্রী কৃষ্ণাকে তালাক দেয়া সম্ভব ছিলো না। পিতা পৃথ্বীরাজ কাপুরের ভয়ে থরথর করে কাঁপতেন রাজকাপুর। রাজকাপুরের সাথে বিচ্ছেদ হলে ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকেন নার্গিস। এ সময় তার জীবনে আসেন সুনীল দত্ত। মাদার ইন্ডিয়া ছবিতে সুনীল দত্তের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন নার্গিস। একদিন ছবির সেটে আগুন লেগে যায়। আগুনের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে নার্গিসকে কোলে নিয়ে তার প্রাণ বাঁচান। তবে এতে সুনীল মারাত্মকভাবে জখম হন। অনেকদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। এ সময় নার্গিস রাতদিন হাসপাতালে অবস্থান করে ডাক্তারের পাশাপাশি রাতদিন তাকে সেবা শুশ্রূষা করেন। এভাবে তারা পরস্পরকে ভালোবেসে বসেন। সবাইকে লুকিয়ে তারা প্রেম করতে থাকেন। চিঠি লিখে টেলিগ্রাম করে প্রেম চালিয়ে যান।
১৯৫৮ সালে তারা গাঁটছড়া বাঁধেন। নার্গিসের অরিজিনাল নাম ছিল ফাতিমা রাশিদ। সুনীল দত্তকে বিয়ের সময় তিনি ধর্মান্তরিত হন। নিজের নাম রাখেন নির্মলা দত্ত। ৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে নার্গিসের অগ্নাশয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। নার্গিসকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি কোমায় চলে যান। এরপর ডাক্তাররা সুনীল দত্তকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বন্ধ করার পরামর্শ দেন। কারণ নার্গিস চার মাসেরও বেশি সময় ধরে ভেজিটেটিভ অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু সুনীল দত্ত প্রিয়তমা স্ত্রীকে সেভাবে ছাড়তে চাননি। তিনি এক ঘোরের জগতে বাস করতেন। নার্গিস তখন লাইফ সাপোর্টে, সুনীল দত্ত নিউইয়র্ক থেকে মুম্বাই ফোন দিয়ে বাসার কর্মচারীকে বলতেন, ‘পুরো বাড়িতে পেইন্ট করবে। ফার্নিচার বদল করতে হবে। তোমাদের ম্যাডাম নতুন ফার্নিচার দেখলে খুশি হবেন। তার ড্রেসিং টেবিল দখিনের কোণে সেট করবে। যাতে সকালের নরম সূর্যের আলো উঁকি দিয়ে ম্যাডামের মুখে ঝিলিক দিয়ে হাসবে। আর হ্যাঁ জানালার ধারে হাসনাহেনা ফুলগাছ লাগাবে। ঘরদোর সবসময় গুছিয়ে রাখবে।’ সুনীল দত্ত ডাক্তাদের পরামর্শ মানতে রাজি ছিলেন না। তিনি ভেন্টিলেটর খুলতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সুনীল দত্তের একাগ্র ভালোবাসার টানে নার্গিস কোমা থেকে বেরিয়ে আসেন। সুনীল দত্ত স্ত্রীকে নিয়ে মুম্বাই ফিরে যান। ১৯৮১ সালের ৩ মে তাদের ফিরে আসার কয়েক মাস পর মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কালজয়ী অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত।
নার্গিস সুনীল দত্তের তিন সন্তান। নম্রতা দত্ত, সঞ্জয় দত্ত এবং প্রিয়া দত্ত। নম্রতা দত্ত ৮০-এর অভিনেতা কুমার গৌরবকে বিয়ে করেছেন। সঞ্জয় দত্ত নামীদামী অভিনেতা। প্রিয়া দত্ত সংসদ সদস্য।
মিলি সুলতানার ফেসবুক থেকে সংগৃহীত...
ইউ