ফাইল ছবি
মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে শ্রীদেবীর জমকালো প্রেম কাহিনী ছিল আশির দশকের ব্যাপক আলোচিত টপিক। 'জাগ উঠা ইনসান' ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে শ্রীদেবীর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে মিঠুনের। সখ্যতা তীব্র ধারালো প্রেমে রুপ নিতে দেরি হয়নি। যখন তাদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসে তখনও তারা সম্পর্ক অস্বীকার করে গেছেন। শ্রীদেবীর মা রাজেশ্বরী আয়াপ্পান চাননি তার মেয়ে মিঠুনের সাথে সম্পর্ক রাখুক। কারণ ভদ্রমহিলা শ্রীদেবীকে ‘গোল্ড ডিগার’ ভাবতেন। তার সাইকোলজি ছিল- গোল্ড ডিগারদের কখনো প্রেম বিয়েতে জড়াতে হয়না। মিঠুন চক্রবর্তী তখন বিখ্যাত তারকা হয়ে উঠেছেন। এছাড়া তখন মিঠুন বিবাহিত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে কিশোর কুমারের তৃতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী যোগিতাবালিকে বিয়ে করেছিলেন মিঠুন। যোগিতাবালিকে বিয়ে করার আগে অভিনেত্রী ও মডেল হেলেনা লিউককে বিয়ে করেছিলেন বাঙালি বাবু মিঠুন। কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবনের আয়ূ ছিল মাত্র চারমাস। হেলেনার অভিযোগ ছিল, তার চোখে ধুলো দিয়ে মিঠুন যোগিতাবালির সাথে অ্যাফেয়ারে জড়িয়েছেন। যার পরবর্তী ফলাফল হল, মিঠুনের সাথে হেলেনার বিচ্ছেদ।
বলা হয়, ১৯৮৫ সালে শ্রীদেবীকে ভালোবাসা এবং তার প্রতি তীব্র আকাঙ্খা থেকেই বিয়ে করেন মিঠুন। গোপনে একটি মন্দিরে শ্রীদেবীর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন তিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত গোপন বিয়ের খবর শ্রীদেবীর মায়ের কানে যায়নি ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিকঠাক ছিল। যখনই খবর ফাঁস হয়ে পড়লো আগুন জ্বলে উঠলো। রাজেশ্বরী আয়াপ্পান মেয়েকে কড়াভাবে শাসন করলেন। ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে কত টাকা পারিশ্রমিক নেবেন, তা চূড়ান্ত করতেন রাজেশ্বরী। মিঠুনের সাথে মেয়ের বিয়ে নিয়ে কোনো অবস্থাতেই মেনে নেবেন না। শ্রীদেবীর বাল্যকালের বন্ধু রীতা একবার মিডিয়ায় বলেছিলেন, নির্বুদ্ধিতা করে বিবাহিত মিঠুনকে বিয়ে করার কারণে শ্রীদেবীকে তার মা মারধরও করেছেন। শ্রীদেবী মিঠুনকে বললেন যোগিতাবালিকে তালাক দিতে। কিন্তু মিঠুন তার এই প্রস্তাবে রাজি হননি। ‘যোগিতার কি দোষ? তার সাথে আমি অন্যায় করতে পারবোনা’--মিঠুনের এমন মন্তব্যে চরম হতাশ হন শ্রীদেবী। তার বুক ভেঙে যায়। তিনি বুঝতে পারেন, মিঠুন তাকে জনসম্মুখে স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত করতে পারবেন না। মিঠুনের প্রতি তার ক্ষোভ ক্রোধ জড়ো হয়। তিনি মিঠুনের জীবনে ‘ছায়া নারী’ হয়ে থাকতে চাননি। মিঠুনের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এ সময় আরেক হিট তারকা গ্ল্যামারাস মিনাকশি শেষাদ্রী প্রচুর মানসিক সাপোর্ট দেন শ্রীদেবীকে।
তবে মিঠুনের সাথে ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, শ্রীদেবীর সাথে মিঠুনের ব্রেক আপের পেছনে বনি কাপুর দায়ী ছিলেন। বনি কাপুর মিঠুনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। বনির স্ত্রী মোনা কাপুরও শ্রীদেবীর বন্ধু ছিলেন। শ্রীদেবী অভিনীত ‘ফারিশতে’ ছবির প্রযোজক ছিলেন মোনা কাপুর।
অনেকবার মোনা তার বাসায় নিরাপদে মিঠুনের সাথে ডেট করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন শ্রীদেবীকে। মোনার বাসায় শ্রীদেবী পরম নিশ্চিন্তে সময় কাটাতেন মিঠুনের সাথে। কিন্তু মোনা জানতেন না যে, একদিন বন্ধু শ্রীদেবীই হবেন তার ভাগ্য বিপর্যয়ের কারণ। স্বামী বনি কাপুরের সাথে বন্ধু শ্রীদেবীর সম্পর্ক ধরা পড়া পর্যন্ত মোনা কাপুরই ছিলেন শ্রীদেবীর বিশ্বস্ত বন্ধু। এদিকে শ্রীদেবীর সাথে মিঠুনের সম্পর্ক ভালোভাবে নেননি বনি কাপুর। মিঠুন ডমিনেটিং ছিলেন। শ্রীদেবীকে ছাড়তে চাননি, আবার ধরে রাখতেও পারেননি। তার মনে সন্দেহ হয়েছিল, বনি কাপুর তার আর শ্রীদেবীর মাঝখানে ঢোকার চেষ্টা করছেন। প্রচার আছে, বনিকে একবার মারও দিয়েছিলেন মিঠুন। অন্যদিকে যোগিতাবালি তার স্বামীর পরনারীর সাথে সম্পর্কের কথা জেনে আত্মহননের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। মিঠুন স্ত্রীর কাছে ফিরে যান। শ্রীদেবী বিষন্নতায় ডুবে যান। তার বিষন্নতা কাটিয়ে তোলার জন্য বনি কাপুর এগিয়ে আসেন। হয়ত এতদিন বনি এই সুযোগটাই খুঁজছিলেন।
শ্রীদেবীর হৃদয় মেরামত করার দায়িত্ব নিয়ে সফল হয়েছেন বনি। কিন্তু এতে মোনা কাপুরের ভাগ্যে নির্মম পরিণতি নেমে আসে। তার ১৪ বছরের সংসার ভেঙে যায়। একবার এক ঘরোয়া পার্টিতে মোনার মা শ্রীদেবীর গায়ে হাত তোলেন ভরা মজলিশে। অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে বনি কাপুরকে বাধ্য করেন প্রথম স্ত্রী মোনার সাথে সব রকমের যোগাযোগ ছিন্ন করতে। এমনকি মোনার দুই ছেলেমেয়েরা অর্জুন কাপুর ও আনসুলা কাপুরের কাছ থেকেও পিতা বনিকে আলাদা করে ফেলেন শ্রীদেবী। মোনা কাপুরের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। ডিপ্রেশন ও হাইপারটেনশনে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েন তিনি। মাল্টিপল ক্যান্সারেও আক্রান্ত হন। শরীরের অর্গান ফেলিউর হয়ে ২০১২ সালে মারা যান মোনা কাপুর।
ইউ