নাসরীন জাহান:
আমি শিল্পের ব্যাপারে অপ্রিয় সত্য বলা একজন মানুষ। আমি আজীবন নারীপাতার বিরুদ্ধে গেছি, নিরন্তর যুদ্ধ করে সাহিত্য পাতায় লেখা ছাপার জন্য অপেক্ষা করেছি।
আর চর্চা করে গেছি কীভাবে ভালো লেখা যায়? লিখতে গিয়ে কোনদিন নিজেকে নারী ভাবি নি, তাই আমার প্রথম উপন্যাসের আগের ৫টা গল্পগ্রন্থের গল্পের মূল চরিত্র ছিল পুরুষ। এ আমার অবচেতনে হয়েছে। ফলে উড়ুক্কু লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে, বহু হলো পুরুষ, এবার নারীকে মূল চরিত্র করি।
চারপাশের নারীবাদীরা কী করল? একে নারীবাদী উপন্যাস বানিয়ে ফেলল। এখানে নারীর সমান্তরালে পুরুষের মানবিকতা
এসেছে। এখন অব্দি কারো ভাবনায় এলো না।
যা হোক,আমার মনে হয়েছে লেখক যতদিন নিজের নারী পুরুষ জেন্ডার রূপ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারবে,তার পক্ষে পুরুষ নারী উভ সাইকোলজি নিয়ে লেখা সম্ভব হবে না।
আজকাল নারী নিয়ে কথা বলার সেমিনারে গেলে আমি একই কথা বারবার বলি। এবার একাডেমি পুরস্কার ঘোষিত হল, আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলব না।
কিন্তু আমি তাজ্জব, যারা পুরুষের সমান্তরালে ভালো লিখছেন,, আমার মনেই হয় নি, তাঁরা পুরুষ না নারী, তেমন অনেক লেখক, যাঁরা জেন্ডারে নারী, বলছেন, এবার কোন নারী লেখক পুরস্কার পান নি।
প্রতিবাদ করছেন।!
যে বছর আমি পুরস্কার পেয়েছিলাম, আমি একাই পেয়েছিলাম। অথচ তখন তো পুরুষ লেখকের কেউই প্রতিবাদ করে নি।
কেউ যদি বলে, তখন আমার সমান্তরালে যোগ্য পুরুষ লেখক ছিলেন, তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। কই? কেউ তো কোন শব্দ করল না!, বরং আমার পুরস্কারের পক্ষে সবাই মিছিল করেছিল।
গত বছর কথাসাহিত্যে এককভাবে ঝর্না রহমান ছাড়াও আরও তিনজন মোট চারজন জেন্ডারে নারী বিভিন্ন শাখায় পুরস্কার পেয়েছিলেন।
এসব ভুলে গেলে চলবেনা। যতদিন এ দেশ থেকে নারী সংগঠন, নারী পুরস্কার, নারী এই নারী ওই বন্ধ না হবে ততোদিন নারী পুরুষের সমান্তরালে দাঁড়াতে পারবে না।
কারণ এসব নারী নারী আলাদা ব্যাপারকে পুরুষদের সম্মান করতে দেখি নি। আমি কল্পনাতেও এমন বাক্য নারীদের প্রতি
লিখতে পারি না, শতাব্দীর এই পর্যায়ে এসে, তারা নিজেকে মানুষ মনে করুক। আমার বিশ্বাস নিজেদের অবশ্য ই তারা মানুষ মনে করে। কিন্তু অনেকেই নারী মানুষ নারী লেখক এসব বলয় থেকে বেরোতে পারে না।
বেগম রোকেয়া এর বিরুদ্ধ শত বছর আগে বলে গেছেন, এরপরও আমরা নিজের মূল্য নিজে না দিলে ,নিজেকে আলাদা না করে এক না করলে কীভাবে হবে?
যে যুদ্ধ আমি করেছি ভালো মন্দ যাই হোক আমি যা লিখেছি, লিখে যাচ্ছি,, একজন পুরুষ লেখকের বাপের সাধ্য নেই, আমাকে আলাদা করে দেখে।
নারী লেখকগণ আপনাদের পক্ষেই এই স্টেটাস। কষ্ট পেলে মাফ করে দেবেন।
//জ//