ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ১৩ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪

English

ফেসবুক থেকে

বাঙালি ‘হোটেল’ বলতে যা বোঝেন

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২২ জানুয়ারি ২০২৩; আপডেট: ১৯:৩৯, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

বাঙালি ‘হোটেল’ বলতে যা বোঝেন

ফাইল ছবি

‘‘আমার শৈশবের ছোট্ট শহরে যে দোকানগুলোতে ভাত-সব্জি-মাছ মাংস ও ডাল কিনে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল, সেগুলো ছিল ‘হোটেল’। আবার যে দোকানগুলোতে নানা ধরনের মিষ্টি বিক্রি হতো সেগুলোর নাম ‘হোটেল’ ছিল না, সেগুলো ছিল ‘মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। রাত কাটানোর জন্য দুই তিনটি জায়গা ছিল, সেগুলোকে বলা হতো ‘গেস্টহাউজ’ অথবা ‘লজ’। একটু বড় হয়ে আশপাশের শহরগুলোতে গিয়েও দেখতে পাই ‘হোটেল,’ ‘মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ ও ‘গেস্টহাউজ’ বা ‘লজ’ বলতে আমার শহরে যা বোঝায়, অন্য শহরগুলোতেও তাই। তবে অনেক স্থানে যেখানে ভাত ও মিষ্টি খাওয়ার বা বিক্রয়ের ব্যবস্থা ছিল বা এখনো আছে, সেগুলো “হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট’। আমাদের আমলের জেলা শহর ময়মনসিংহ গিয়ে প্রথমবারের মতো এমন হোটেল দেখতে পাই, যেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, সাইনবোর্ডে ‘হোটেল’ শব্দটির পাশে ব্রাকেটে (আবাসিক) শব্দটি লেখা আছে। ঢাকায় এসেও দেখি ‘হোটেল’ মানে ভাত-তরকারি কিনে খাওয়ার দোকান। লোকজন বাইরে খেলে হরহামেশাই বলে, ‘অমুক হোটেলে খেয়ে এলাম,’ অথবা ‘চলো, আজ হোটেল থেকে খেয়ে আসি।’’

‘আরও বড় হয়ে যখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার কিছু শহরে যাওয়ার সুযোগ হয়, তখন ওইসব শহরেও দেখেছি খাবার দোকানের সাইনবোর্ডে কোথাও ‘হোটেল,’ কোথাও বা ‘হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’ লেখা। সম্ভবত শ্রীলঙ্কায় দেখিনি। সময়ের ব্যবধানে আজকাল অনেক খাবার দোকানের নামের সঙ্গে থাকে শুধু সংশ্লিষ্ট দোকানের ব্র্যান্ড বা স্পেশালিটির উল্লেখ। যেমন: অমুক বিরিয়ানি, তমুক তেহারি, অথবা কড়াই, তাওয়া, হাণ্ডি, খুন্তি, ভূত, নান্দো’স ইত্যাদি হাজারটা বাহারি নাম। ’

‘হোটেল’ এর অর্থ যে কোনোকালেই খাবারের দোকান নয় তা বাঙালি  বা ব্যাপক অর্থে উপমহাদেশের লোকজন যে বোঝেন না তা নয়। অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিতরা না বুঝলে বা কম বুঝলে ক্ষমা করা যায়, কিন্তু শিক্ষিতরাও যদি ‘চলছে যখন চলুক না’ ভাব নিয়ে থাকেন, তাহলে তা দোষনীয়। হোটেল মানে রাত্রিযাপনের স্থান, যেখানে খাবার ব্যবস্থাসহ ব্যবহার্য সকল সুবিধা থাকে। সন্তরণ করতে চান, সুইমিং পুল আছে। ব্যায়াম করতে চান জিম আছে, কেনাকাটা করতে চাইলে শপিং এরিয়া আছে, কনফারেন্স রুম আছে, অনেক হোটেলের সঙ্গে টেনিস কোর্ট, এমনকি জুয়া খেলার জন্য ক্যাসিনোও আছে। কিন্তু উপমহাদেশের খাবার ‘হোটেল’ শুধু খাবার বিক্রয়ের স্থান। এক বেলা খাবার খান, দাম চুকিয়ে বিদায় নিন। আরেক বেলা খেতে হলেও যান, বিল পরিশোধ করে আপন ডেরায় ফিরে যান অথবা রাস্তা মাপুন, গাড়িতে ওঠে যার যার গন্তব্যে যান।’

‘অভিধান অনুযায়ী ‘হোটেল’ হচ্ছে বসবাসসহ গ্রাহককে প্রয়োজনীয় সেবা দানের স্থান , ‘রেস্টুরেন্ট’ মানে শুধু গ্রাহকদের খাদ্য ও পানীয় সরবরাহের স্থান। অবশ্য রাত্রিযাপনের জন্য, বিশেষ করে পাশ্চত্যের দেশগুলোতে হাইওয়ের পাশে অনেক ‘মোটেল’ দেখা যায়। ‘মোটেলে’ সাধারণত খাবার ব্যবস্থা থাকে না। সীমিত সুযোগ সুবিধা সেখানে। ভারত ও পাকিস্তানে হাইওয়ের পাশে অনেকটা খোলামেলা স্থানে অনেক খাবার দোকান আছে, দিনরাত ২৪ ঘন্টা চালু থাকে এগুলো, এবং এসব খাবার দোকান “ধাবা’ নামে পরিচিত। অনেক ধাবায় তুলনামূলক কম দামে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় এবং ধাবা অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবগুলোই ব্যবসা, উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন। মেরিয়াম-ওয়েবস্টার অনুযায়ী থাকার জন্য ‘হোটেল’ শব্দটি প্রয়োগ করা হচ্ছে ১৭৬৫ সাল থেকে। ‘মোটেল’ শব্দ ব্যবহার হচ্ছে অনেক পরে ১৯২৫ সালে।’

‘উপমহাদেশের বাসিন্দারা ইংরেজি শেখে তাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে এবং অনেকে ইংরেজি জানেই না। যারা জানে, তারাও ইংরেজি সঠিকভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করেন না। তাদের কাছে ‘রেস্টুরেন্ট’ শব্দের চেয়ে ‘হোটেল’ শব্দটি অনেক সহজ। তাছাড়া অনেকের কাছে “নামে কিবা আসে যায় ---,” যেখানে যার যে কাজ, তা সম্পন্ন হলেই হলো।’

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর ফেসবুকে পোস্ট থেকে সংগৃহীত...

ইউ