ছবি: দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮ বছর বন্দি থাকা সেই গৃহকর্মী
গৃহকর্মীকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮ বছর বন্দি করে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর ও নৃশংসভাবে নির্যাতন করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নারীবাদি সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে ১১ অক্টোবরের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরের বরাতে বলা হয়, দারিদ্রতার কারণে ২০১৫ সালে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর বারইখালী গ্রামের জনৈক জালাল হাওলাদারের মেয়ে রাবেয়া আক্তার আকলিমাকে খুলনার নিরালা এলাকায় পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম সামছুল হকের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে দেয়। ওই বাসায় ৫ বছর থাকার পর রাবেয়াকে পাঠানো হয় সিলেটে সামছুল হকের মেয়ে তানিয়া সুলতানা লাকির বাসায়। তিন মাস পরে সিলেট থেকে পাঠানো হয় ঢাকার মিরপুরে ছোট মেয়ে নাসরিন সুলতানা লিজার বাসায়। ৮ বছর ধরে রাবেয়াকে তার পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করতে দেয়নি। মায়ের মৃত্যু সংবাদেও তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। কাজে একটু দেরি হলেই তাকে টিকটিকির বিষ্ঠা, তেলাপোকা, বাচ্চাদের পেশাব খেতে বাধ্য করত। ভাঙ্গা গ্লাস দিয়ে তার হাত, মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। প্রায় তিন বছর নাসরিন সুলতানা লিজার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় গত ৫ অক্টোবর লিজার বাসা থেকে পালিয়ে মোরেলগঞ্জে চলে আসে। রাবেয়ার পিতা রোগাক্রান্ত হওয়ায় তার চাচা কাঞ্চন মোল্লা রাবেয়াকে দ্রুত মোরেলগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করে।
নারী ও কন্যার প্রতি বর্বর নির্যাতনের ঘটনাসমূহ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য কর্তৃক গৃহকর্মীকে বাড়িতে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে সংগঠনটি বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটি গৃহকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণসহ দ্রুত গ্রেফতার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সেই সাথে নির্যাতনের শিকার কিশোরীর সুচিকিৎসার দাবিও জানিয়েছে। পাশাপাশি সেই সাথে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।