
মিশরী তরুণী এখন বীরগঞ্জের গৃহবধূ
বাংলাদেশি তরুণকে বিয়ে করে সুদূর মিশর থেকে বাংলাদেশে এসেছেন মিশরীয় তরুণী নুরহান। ২০ বছর বয়সী সংসার শুরু করেছেন স্বামী শমসেরের সঙ্গে।শমসের আলীর বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের অর্জুনের হার গ্রামে।
তাদের দাম্পত্য জীবনে ইতোমধ্যেই একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তাদেরকে সাথে নিয়েই এই প্রথম বাংলাদেশে এসেছেন মিশরীয় নাগরিক নুরহান এবং তার স্বামী শমশের আলী। গত ১৫ বছর পর নিজের দেশে এসেছেন শমসের আলী।
গত ২০০৭ সালে বাবার অভাবের সংসারে একটু স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য নিকট এক আত্মীয়র সহযোগিতায় মিশরে গিয়েছেন শমসের আলী।
২০১৮ সালে মিশরে থাকা অবস্থায় ভালবেসে সেই দেশের আইন কানুন মেনে নুরহানকে বিয়ে করেন শমসের আলী। এই প্রথম স্ত্রী নুরহান তাদের এক মেয়ে রুকাইয়া (৩) এবং একমাত্র শিশু পুত্র ইয়াসিনকে (১১ মাস) সাথে নিয়ে ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে দুই মাসের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন।
এই মিশরীয় নাগরিক নুরহানের সাথে নাতি ও নাতনীকে কাছে পেয়ে শ্বশুর বাদশা মিয়া, শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম আনন্দে মেতে উঠছেন।
এই আনন্দ যেন প্রতিদিন ঈদের দিনের মতোই লেগে আছে তাদের পরিবারে। প্রতিদিন আশপাশের শত শত নারী পুরুষ এই মিশরীয় নাগরিক নুরহানকে দেখার জন্য ভিড় করছে অর্জুনেহার বাড়িতে। নুরহানও অনেকটা আনন্দ উচ্ছাসিত। যদিও ভিনদেশী নাগরিক নুরহান বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারলেও ইশারা ইঙ্গিতে অনেক কিছু বুঝতে পারেন।
তবে স্বামী শমসের আলী পুরোপুরি আরবিতে কথা বলতে পারেন এবং নুরহানের সাথে আরবিতে সকল ভাবে আদান প্রদান করছেন। সে বাংলা ভাষাটাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন। পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ,শ্বশুর শাশুড়ি, দেবর ভাসুর, ননদ আত্মীয়-স্বজন সবার সাথেই তার ইতিমধ্যেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তিনি তাদেরকেও আপন করে নিয়েছেন তারাও নুরহানকে আপন করে নিয়েছেন।
শমসের আলী বলেন , ২০১৮ সালে মিশরীয় নাগরিক নুরহানের সাথে সেই দেশেরই একটি গার্মেন্টসে প্রথম পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকেই নুরহান আমাকে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন। এরপর দুজনের মধ্যেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে নুরহান তার বাবার কাছে আমাকে নিয়ে যান। তার বাবাকে বলার পর তিনি বিয়েতে রাজি হয়ে যান। আমিও আমার বাবা মায়ের নিকট বিয়ের অনুমতি নিয়ে মিশর দেশের আইন মেনে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
বিয়ের দুই বছর পর আমাদের ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের তিন বছর পর ইয়াসন (১১ মাস) বয়সি এক ছেলে সন্তানের জম্ম হয়। আমারা দাম্পত্য জীবনে অনেক ভাল আছি।
শমসের আলীর স্ত্রী নুরহান বলেন, বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচার তার অনেক ভালো লেগেছে। এটা তার স্বামীর দেশ। এ দেশকে সে অনেক ভালবেসেন। মিশর দেশের সাথে এদেশের কৃষ্টি-কালচার অনেক পার্থক্য থাকলেও স্বামীর দেশ হিসেবে এই দেশটিকে ইতোমধ্যেই সে গভীরভাবে অনুভব করছেন। শ্বশুর-শাশুড়িকে সে নিজের বাবা-মায়ের মতন শ্রদ্ধা করেছেন। এদেশের মানুষকেও তিনি ইতোমধ্যেই শ্রদ্ধা ভালবাসা ও আপন করে নিতে শুরু করেছেন।
শমশের আলীর বাবা বাদশা মিয়া বলেন, ছেলেকে ১৫ বছর পর কাছে পেয়েছি সাথে মিশরীয় নাগরিক পুত্রবধূকেও পেয়েছি। তাদেরকে কাছে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। আমার নাতি-নাতনী কাছে পেয়ে আরোও বেশি আনন্দিত হয়েছি। পুত্রবধূ নুরহান বাংলা ভাষা বলতে না পারলেও ইশারায় ইঙ্গিতে বাজারে যাওয়ার সময় কিছু খাবার আনতে বলে। তার পছন্দের কিছু খাবার আমি বাজার থেকে কিনে এনে তার হাতে দিলে সে অনেক খুশি হয়। এক কথায় বিদেশিনী পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনীকে কাছে পেয়ে প্রতিটি দিন যেন ঈদের দিন মনে হচ্ছে ।
শমসের আলীর মাতা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ৫ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে শমসের আলী দ্বিতীয়। ১৫ বছর আগে বিদেশে গেলেও মোবাইল ফোনে ছেলের সাথে কথা হতো। গত ঈদে আমার ছেলে শমসের আলী ও পুত্রবধূ নুরহান, আমার নাতি ও নাতনিকে নিয়ে বাসায় আসলে আমি স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছি। প্রায় একমাস হতে চলেছে তাদের বাড়িতে আসা। আমার বাড়ি এখন প্রতিদিনই যেন ঈদের দিন মনে হয়। আমার পুত্রবধূ নুরহান আমার সংসারের ছোটখাটো রান্নাবান্না কাজ করতে পারে । সে বাংলা বলতে না পারলেও ইশারা ইঙ্গিতে তার কথা আমি অনেকটাই বুঝতে পারি। সেও আমার কথা অনেকটা বুঝতে পারে ।
দেবর মকবুল হোসেন বলেন, বিদেশী ভাবি বাসায় আসার পর থেকেই আমরা যেন এক আনন্দের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছি। ভাবিকে দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আমাদের বাসায় ভিড় করছে। ভাবিও এতে আনন্দিত হচ্ছে। আমরাও আনন্দ পাচ্ছি ভাবি আসলেই অসাধারণ। ভাবির মুখে হাসি যেন লেগেই আছে। অনেক ভালো দিন কাটছে আমাদের পরিবারের।
//এল//