ফাইল ছবি
শিশুশিল্প চর্চা কেন্দ্র ও শিশু বিষয়ক সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যমের আজ প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছরে পর্দাপন। ১৯৮৬ সালের এ-ই দিনে পুরাতন রেডক্রস বর্তমানে রেডক্রিসেন্ট ভবনে ও-ই সময়ে কচি- কাঁচা মেলার আহ্বায়ক নিয়াজ মো. খান বিটু'র আহ্বানে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওই সভায় শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজসেবক, সংগীত শিল্পী, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ সমাজের বিশিষ্টজন যাঁরা শিশুদের জন্য নিবেদিত বলেই সমাজে পরিচিত তারাই উপস্থিত ছিলেন। ও-ই প্রথম সভায় সভাপতিত্ব করেন শিশু সদনের শিক্ষক বেগম ছায়েরা সবুর। তিনি ওই সময় শহরে সমাজসেবামূলক বিশেষ করে শিশুদের সাথে সময় দেয়ার জন্য সকলের নিকট পরিচিত ছিলেন। ও-ই সভায় সভা আহ্বানকরী নিয়াজ মো. খান বিটুর প্রস্তাবে ও কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয়ভাবে শিশু সংগঠন গঠন করা হবে তার উপর তিনি সভায় বিস্তারিত তুলে ধরেন। তার প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িযা শিশু নাট্যম নামে শিশু সংগঠন গঠন করা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ এমরানুর রেজাকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করে সংগীত শিল্পী আজমল হুদা ভুলুকে সভাপতি ও নিয়াজ মো. খান বিটুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরি কমিটি ও ৯ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই সময় শিশু নাট্যম গঠনে সভা আহ্বানকারী নিয়াজ মো. খান বিটুকে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আ ফ ম কাউসার এমরান, মাসুকুল ইসলাম মাসুক, জহিরুল হক জহর, আজিজা সোপান, মাহমুদুল হাসান, সংগীত শিল্পী দেলোয়ার হোসেন,জাহাঙ্গীর আলম, সোপানুল ইসলাম সুপান, আবদুল হান্নান প্রমুখ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে শিশু নাট্যমের কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর ধারাবাহিক ভাবে শুরু হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা ( শিশু একাডেমির প্রতিযোগিতার পূর্বে শুরু করে যা প্রতিযোগিরা ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে) অনুষ্ঠিত হয়।
একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, নববর্ষ, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, বিজয় দিবস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস,চলচিত্রকার জহির রায়হান ও শহিদ অধ্যাপক লুৎফর রহমান স্মরণ সভা, জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন স্মৃতি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সফিকুনআরা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণ। বিটিভিতে শিশুতোষ অনুষ্ঠানে শিশু নাট্যমের অংশ গ্রহণ, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষামূলক শিশুতোষ নাটক মঞ্চায়ন।
৯০ দশক থেকে শিশুদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৯১ সালে শিশুদের ছবিআঁকা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ কারীদের ছবি নিয়ে প্রথম আর্ট প্রদর্শনী করা হয়েছে। শুরুতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশুদের ছবি আঁকার বিষয়ে কোন ব্যবস্হা না থাকায় ১৯৯২ সালের জুলাই মাস থেকে চালু করে পদ্ধতিগত ছবিআঁকা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী উত্তম গুহ হাল ধরে শিশু নাট্যমের আর্টের ক্লাস। ৬ মাস পর সাবেক সভাপতি জহিরুল হক জহর ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোঃ খান বিটুর অনুরোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশুদের কথা ভেবে আর্ট ক্লাসের হাল ধরেন চিত্রশিল্পী মোঃ আসাদুর রহমান আলমগীর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান হওয়ার কারণে তিনি এখন পর্যন্ত শিশুদের ছবি আকাঁর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। শিশু নাট্যমের ছবি আকার ছাত্র ছাত্রী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছে। ছবি আকা বিভাগের ছাত্র ছাত্রী নিজেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবে। তারা ঢাবি চারুকলাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ করে নিচ্ছে। ছবিআঁকা ক্লাসের পর চালু করা হয় সংগীত শিল্পী নাসির চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগীত ও আবৃত্তি শিল্পী ও কবি মো. আজিজুল হকের নেতৃত্বে আবৃত্তি ক্লাস। শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে চালু করা হয় শিশুতোষ পাঠাগার। ৫ দিনব্যাপী শিশু চিত্রকলা প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক উৎসবরে আয়োজন করা হয়। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ কে এম ওয়াহিদুল ইসলাম ও এডিসি রাজস্ব রেজাউল কাদের সাহেবের সহযোগিতায় শিশু নাট্যমের সদস্যরা নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে কম্পিউটারের ব্যবস্হা করে দেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশু এ ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর গ্রামের পরিবেশে শিশু আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছরে পর্দাপণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যমের সভাপতি মো. মাসুকুল ইসলাম মাসুক ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. খান বিটু বিগতদিনে ও বর্তমানে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ছিলেন ও সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন এবং আগামীতেও শিশুদের কল্যাণে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ইউ