
সংগৃহীত ছবি
লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে চার মাস পর আগামীকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে বহনকারী কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বলে বিএনপির তরফ থেকে জানানো হয়েছে। দলীয় চেয়ারপারসনকে বরণ ও অভ্যর্থনা জানাতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি। সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ১১টি স্পটে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন পর্যন্ত রাস্তায় নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যাচ্ছে। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য ঢাকা মহানগর বিএনপি থেকে শুরু করে দলের প্রতিটি অঙ্গসহযোগী সংগঠন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী, সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তার দুধারে দাঁড়ানো নেতাকর্মীদের এক হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং অন্য হাতে থাকবে দলীয় পতাকা। দলীয় চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দরের ভেতরে থাকবেন। তবে বিমানবন্দর এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ নেতাকর্মীদের প্রবেশ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে পৌঁছেই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি এখন দেশে ফিরছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া লন্ডনের স্থানীয় সময় ৫ মে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠবেন এবং কাতারের দোহা হয়ে ঢাকা পৌঁছাবেন। এর মধ্যে দোহায় এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি থাকবে। সফরসঙ্গী হিসেবে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান। শর্মিলা রহমান মাঝেমধ্যে দেশে ফিরলেও দীর্ঘ ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন ডা. জুবাইদা। এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে যুক্তরাজ্য ও লন্ডন বিএনপির নেতাকর্মীরা হিথ্রো বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। মা ও স্ত্রীকে বিদায় জানাতে তারেক রহমানও বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণীর দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীরা একদিকে যেমন উজ্জীবিত-উৎফুল্ল, তেমনি আবেগাপ্লুতও। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে যান জুবাইদা রহমান। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণে জুবাইদা রহমান এতদিন দেশে ফিরতে পারেননি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেমন ওয়ান-ইলেভেন ও আওয়ামী সরকারের চক্রান্ত ছিল, মামলা ছিল; তার সহধর্মিণীও এর বাইরে ছিলেন না। দুদকের এক মামলায় ২০২৩ সালে জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন তিনি। জানা গেছে, ডা. জুবাইদা ঢাকায় এক থেকে দুই মাস অবস্থান করতে পারেন। এ সময় তিনি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না।
অভ্যর্থনা জানাতে নেতাকর্মীরা কে কোথায় থাকবেন: খালেদা জিয়া ও জুবাইদা রহমানকে স্বাগত জানাতে দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়েন হোটেল পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এ ছাড়া ছাত্রদল লা মেরিডিয়েন হোটেল থেকে খিলক্ষেত; যুবদল খিলক্ষেত থেকে হোটেল রেডিসন; মহানগর দক্ষিণ বিএনপি হোটেল র্যাডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম; স্বেচ্ছাসেবক দল আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান; কৃষক দল বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড়; শ্রমিক দল কাকলী মোড় থেকে বনানী শেরাটন হোটেল; ওলামা দল, তাঁতী দল, জাসাস ও মৎস্যজীবী দল বনানী শেরাটন হোটেল থেকে বনানী কাঁচাবাজার; মুক্তিযোদ্ধা দল ও সব পেশাজীবী সংগঠন বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২; মহিলা দল গুলশান-২ গোল চত্বর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা গুলশান-২ গোল চত্বর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড পর্যন্ত অবস্থান করবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা যার যার সুবিধামতো স্থানে অবস্থান করবেন।
জুবাইদার জন্য প্রস্তুত ‘মাহবুব ভবন’: জুবাইদা রহমান দেশে ফিরে প্রথমত শাশুড়ির সঙ্গে গুলশানে তার বাসা ফিরোজায় যাবেন। পরে তিনি ধানমন্ডিতে তার পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন। সাবেক নৌবাহিনীপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসা ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের এই ‘মাহবুব ভবন’। এখানে এখন তার সহধর্মিণী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবার বসবাস করেন। বয়োবৃদ্ধ সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু কয়েকদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ছোট মেয়ে জুবাইদা রহমান ঢাকায় এসে বাবার বাসায় উঠবেন বলে বাসায় সাজসজ্জা করা হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান আসবেন এই বাসায়; সেজন্য বাসার সাজসজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস, জেনারেটর প্রভৃতির কাজ চলছে। ইনশাআল্লাহ উনি (জুবাইদা রহমান) আসার আগেই এই বাসার সব কাজকর্ম শেষ হবে। উনাকে রিসিভ করার জন্য বাসা প্রস্তুত হয়ে যাবে।’
মাহবুব ভবনের পুরো কাজকর্ম তদারকি করছেন রুমন। তিনি বলেন, ‘মাহবুব ভবন এমনিতেই পরিপাটি একটি বাসা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তার পরও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাসার ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করেছি। বাসার চারপাশে দেয়ালের ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এই বাসার চারপাশে দেয়াল রয়েছে। বাসার আঙিনায় সামনের দিকে রয়েছে ফুলের বাগান। আছে নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য গার্ডরুম।’
আতিকুর রহমান রুমন বলেন, ‘বাসভবনের তিন দিকে বিভিন্ন জনের বাসা-অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন—নিরাপত্তার নামে এমন কিছু করতে যেও না, যাতে প্রতিবেশীদের অসুবিধা হয়, মানুষজনকে যাতে ডিস্টার্ব না করা হয়। সবদিক বিবেচনায় রেখে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি। জুবাইদা রহমানের জন্য আলাদা গাড়ি এবং তার নিরাপত্তার সঙ্গে নিয়োজিত সদস্যদেরও গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
//এল//