
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দেবীনগর গ্রামের এক মা ১১ মাস ধরে নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পেতে বিলাপ করছেন। ‘আমি জানি না আমার ছেলেটা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। আমি শুধু চাই, আমার সন্তানকে যেন একবার দেখতে পাই,’-কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন ডলিয়ারা বেগম, নিখোঁজ আব্দুর রহমানের মা।
১৮ বছরের আব্দুর রহমান গত ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখে রাজমিস্ত্রির কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। ডলিয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কুরবান আলি, আকাশ আলি, রফিক উদ্দিন, তোতা ও আরও কয়েকজন ছেলে কাজের কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান। এরপর থেকেই ছেলের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর ডলিয়ারা শিবগঞ্জ থানায় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ এপ্রিল দুটি অভিযোগ করেন। তাতে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পরে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: ১০৮২)। তবে মামলার তদন্ত কার্যক্রমও এখনও শুরু হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ডলিয়ারা জানান, ছেলেকে ফিরে পেতে গেলে অভিযুক্তরা তার কাছে কখনও ২ লাখ ৩০ হাজার, কখনও আড়াই লাখ, কখনও ৬০ হাজার টাকা দাবি করেছে। টাকা না দিলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন, যেমন- খতিজা বেগম, ফিতন বেগম ও হারুল-অর-রশিদ জানান, ছেলেটিকে সত্যিই রাজমিস্ত্রির কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সে আর ফিরেনি।
ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেক ব্যক্তি, বাদশাপাড়া গ্রামের শামীম, জানান, তারা প্রায় ১৬-১৭ জন একসঙ্গে ভারতে গিয়েছিলেন চোরাইপথে। পথে পাঁচজন ধরা পড়েন। পরবর্তীতে চারজন ব্যক্তি ৪০ হাজার রুপি করে জামিনে দেশে ফিরেছেন। অনেকেই এখনও ভারতে অবস্থান করছেন।
শামীম দাবি করেন, আব্দুর রহমান স্বেচ্ছায় তাদের সঙ্গে গিয়েছিল, তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ফিরিয়ে আনতে খরচ হবে ৪০ হাজার রুপি, এই কথা বারবার বললেও ডলিয়ারা বিশ্বাস করেননি এবং মামলা করেছেন।
অভিযুক্তদের পক্ষের দাবি, তারা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মানিক উদ্দিনও এই তথ্যের পক্ষে বক্তব্য দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজাউল হক জানান, কোর্টে মামলা হওয়ায় পুলিশের পক্ষে সরাসরি তদন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। কোর্টের নির্দেশ ছাড়া তারা কিছু করতে পারছেন না।
শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) এস এম শাকিল হাসান বলেন, ‘আমার জানা মতে বিষয়টি বর্তমানে ডিবি পুলিশের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
ডলিয়ারা বেগম শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে একটাই অনুরোধ জানাচ্ছেন-‘দয়া করে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন। আমি শুধু জানতে চাই, সে বেঁচে আছে কি না।’
ইউ