ঢাকা, বাংলাদেশ

মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

English

মতামত

কানাডার ভিজিট ভিসা: ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি

মো. মাহমুদ হাসান

প্রকাশিত: ১৪:২২, ৪ এপ্রিল ২০২৪

কানাডার ভিজিট ভিসা: ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি

ছবি: মো. মাহমুদ হাসান

২০১০ সাল! সাউদার্ন আলবার্টা  ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে দু'বছর পড়াশোনা শেষে একটি অয়েল কোম্পানিতে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছি। পাশাপাশি একটি স্থায়ী চাকুরীর প্রত্যাশায় এদিক সেদিক ঘুরছি। এরই মাঝে জোটে যায় এক শুভাকাঙ্ক্ষী। বিল ন্যাট! সে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ব্যবসায়ী। এক বিকেলে তাঁর এক বন্ধুর বাসায় যাবে। সাথী হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলাম। মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা গোপন বাসনা তো আছেই। পথিমধ্যে বিল’কে আমার চাকুরীর বিষয়টি মনে করিয়ে দিলাম। প্রত্যুত্তরে বললো, ‘তোমার জন্যই যাচ্ছি’। শুনে এক রকম প্রশান্তি নিয়েই এগোতে থাকলাম। একটি পুরনো বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো। দেখে মনে হলো কোন এক মধ্য বিত্তের আবাস গৃহ!

কিছুটা দ্বিধা আর সংশয় নিয়ে বিল কে অনুসরণ করি। কলিংবেল চাপতেই লাস্যময়ী ভদ্রমহিলা দরজা খুলেন। প্রাথমিক পরিচয়ে কিছুটা শিহরিত হয়ে উঠি। তিনি প্রাদেশিক সরকারের অর্থ মন্ত্রী! 

মানসপটে আমার দেশের মন্ত্রীদের চেহারা ভেসে উঠে! লাল ফোন, ক্ষমতার দম্ভ কত কিছু। ভাবছি, জায়গা মতো এসেছি। গতি একটা হবেই। কি গতি হয়েছিল, সেটি আজকের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক নয়। মজার ব্যাপার হলো, আমি বাংলাদেশী কানাডিয়ান, সেটি শুনে তিনি আমার প্রতি ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠলেন। আলোচনা এগুতে থাকলে আগ্রহের কারণটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর ভাষায়, কানাডার বাংলাদেশী কমিউনিটি শিক্ষা, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতায় অনেক বেশি সমৃদ্ধ। সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী প্রফেশনাল কমিউনিটি হওয়ায় আইন-কানুন, বিধি-বিধানের প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধাশীল, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় দারুণ যত্নবান!! এমন অভিবাসীদের স্বাগত জানাতে পেরে তিনি নাকি পুলক অনুভব করেন!! এক যুগ আগে বাংলাদেশীদের নিয়ে একজন কানাডিয়ান রাজনীতিকের যে অনুভূতি ছিল, আজও কি সেই ধারা অব্যাহত আছে? 

অনিয়ম, অনাচারে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশীদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজারে নানা সংকটের কথা শোনা যায়। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী পাসপোর্টে সৌদি গমন নিয়ে কতো কান্ডই তো হয়ে গেল। অসৎ আদম ব্যবসায়ীদের অতি লোভ মাঝেমধ্যেই আমাদের দেশটিকে সংকটে ফেলে দেয়। এ সংকট কখনো কখনো কূটনৈতিক দেন দরবারে রূপ নেয়। ক্ষুন্ন হয় দেশের ভাবমূর্তি। অতি লোভী এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের টার্গেট এখন কানাডা। তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনে আমজনতা বেসামাল। ‘কান্ট্রি অফ অপরচুনিটি’ পৌঁছে গেলেই স্বর্গ। এমন চটকদার কথা বলে বাজার সৃষ্টি করে স্বার্থান্বেষী মহল। সুন্দর সুখী জীবনের প্রত্যাশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে আমজনতা! যে কায়দায় অসাধু গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জন্য পাসপোর্ট বানায়, একই কায়দায় কানাডিয়ান আমন্ত্রণ পত্র, ব্যাংকিং ডকুমেন্টস সহ ভিজিট ভিসার শর্তাবলি পূরণে দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে। বোধ করি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান আর দেশি-বিদেশি চক্রের গোপন যোগসাজশের কারণে কানাডিয়ান অভিবাসন বিভাগের তদন্ত প্রক্রিয়াকে অতিক্রম করে আবেদনকারীরা ভ্রমণ ভিসা পেয়ে যায়। 

বাংলাদেশ আর বাংলাদেশিদের প্রতি হাল-আমলের কানাডিয়ান সরকার অতীতের চেয়ে অনেক উদার। তাই অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বাংলাদেশীদের জন্য ভিজিট ও স্টুডেন্ট ভিসার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশটির জন্য নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। ‘ভাঙ্গে কত সাধের ঘর, আসে যখন ঘূর্ণিঝড়’ গত কিছুদিনের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় সমাগত। কেউবা মধ্যপ্রাচ্যের বিমানবন্দর থেকে ফেরত যাচ্ছে, আবার কেউ বা ভিসা বাতিলের চিটি পাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে আটকে যাচ্ছেন। আরসিএমপি’র প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে হাহাকার করছেন। দুখে’র কথা, জালিয়াত-দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ে অনেকের জীবনে এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। অন্যদিকে যাঁরা সত্যিকারের পর্যটক, সিবিএস (কানাডিয়ান বর্ডার সার্ভিসেস) এর শ্যান দৃষ্টি এখন তাঁদের দিকেও। ইতিমধ্যে সংবাদ বেড়িয়েছে, দ্রুতই শুরু হবে ডিপোর্টেশন। সোজা বাংলায়, গ্রেফতার করে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ তালিকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর নাম দেখলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।  

গত সাত-আট মাসে অসংখ্য ভিজিট ভিসায় আসা বাংলাদেশীর সংগে যোগাযোগ হয়েছে। সবাই সাহায্য চায়। বেঁচে থাকার জন্য একটি কাজ চায়। সহায় সম্বল বিক্রি আর ঋণগ্রস্ত হয়ে দশ বছরের ভিসা পেয়েছেন। গুণতে হয়েছে ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ টাকা!! অধিকাংশের ইংরেজি বলা বা বুঝার সাধ্য নেই। দালালদের কলমের জোড় দেখে ভিসা অফিসাররা বুঝতেই পারেননি, এরা পর্যটক নয়। এসব ভিজিটররা ভাবতেও পারেননি ছয় মাস পড়েই অবৈধ হয়ে যাবেন! একজন সিলেটি বা বাংলাদেশী হিসেবে তাঁদের এই মানবিক সংকট আমার মতো বহু মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। এ কষ্ট অপারগতার, এ কষ্ট অক্ষমতার। আইন কানুনের দেশে আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। একবার কপালে ক্রাইমের তিলক পড়লে, চৌদ্দ গোষ্ঠীকে তার ফল ভোগ করতে হয়। তাই জেনেশুনে এমন বিপদের দিকে কে পা বাড়াতে চায়?

ইউটিবার আর ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট নামধারী লোভীরা বলে বেড়াচ্ছে, ‘কানাডায় পৌঁছে ভ্রমণ ভিসা কে স্থায়ী কর্ম ভিসায় রুপান্তর করে নিবেন।’ লোভাতুর ভন্ডদের বাণীতে বিভ্রান্ত হাজার হাজার তরুণ, মধ্য বয়সী ভাই-বোনরা এখন বাঙালি পাড়ার রাজপথে। অনেকে পেটের ক্ষুধায় মসজিদ, মন্দিরের দ্বারে দ্বারে। পরিচিত বা আত্মীয় শুভাকাঙ্ক্ষীদের রেফারেন্সে বারংবার তদবির করেও মিলছে না কোন সুফল। শিক্ষা দীক্ষা আর অর্থবিত্তে যাদের শক্তি সামর্থ্য আছে, এরা LMIA নামক সোনার হরিণের পিছনে দৌড়াচ্ছে। সেখানেও নাকি ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ টাকার দেন-দরবার। এদের সংখ্যা শতকরা ১-২ জনের বেশি নয়। বাকিরা রিফিউজি হতে মরিয়া। সেখানেও সামর্থের প্রশ্ন জড়িত। মোটা অংকের ডলার ছাড়া উকিল-মুক্তার সম্ভব নয়। তবুও শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশি রিফিউজি আবেদনকারীর সংখ্যাটি নাকি কয়েক হাজার। মোটা দাগে আবেদনের বিষয়বস্তু একটাই। দেশে ফিরে গেলে জীবন বিপন্ন হবে!! এসব আবেদন একদিন আদালতে যাবে। কৌশলীদের গালগল্পে একটি দেশের এতো  বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার চিত্র ফুটে উঠবে !! চুড়ান্ত বিবেচনায় এসব আবেদন প্রিয় দেশটির জন্য কি বার্তা দেবে, এটি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় কোথায়?

কলঙ্ক তিলক সব সমাজেই আছে। প্লেটোর সেই কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্র বা সমাজ পৃথিবীর কোথাও নেই। তবুও কলঙ্কিতদের সংখ্যা যখন বেড়ে যায় সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য এরা হুমকি হয়ে উঠে। সমাজ হয়ে উঠে ভারসাম্যহীন। হাঁটি হাঁটি, পা,পা   করে দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু আয়, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, আর অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিসংখ্যান দেখে দেশটির প্রতি অনেক বিশ্ব মোড়লদের আগ্রহ বেড়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে ভাবমূর্তি। তাই কানাডার মতো দেশ, ভ্রমণ আর স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যুতে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উদার। এই উদারতার চরম অপব্যবহার, কলঙ্কিত করবে সমাজকে। ক্ষুন্ন হবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি। 

শোনা যায়, ঢাকা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বিষটি সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাদের দায়িত্ববোধকে সাধুবাদ জানালেও এটি সংকটের কোন টেকসই সমাধান নয়। আমাদের গোয়েন্দারা দারুন চৌকস। চাইলে অনেক অসাধ্যকে সাধন করতে পারেন। প্রশ্ন ফাঁস যখন সামাজিক বিপর্যয়ের পথে, আমাদের গোয়েন্দারা সেখানে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। শাসক গোষ্ঠী চাইলে, কানাডার প্রলোভন দেখানো অসৎ আদম ব্যবসায়ীরাও যেকোনো সময় গোয়েন্দা জালে আটকে যেতে পারেন। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় এসব অতিলোভী অসাধু আদম ব্যবসায়ীদের প্রতি গোয়েন্দাদের চৌকস শ্যনদৃষ্টি এখন সময়ের দাবি।। দেশ ও সমাজের ভাবমূর্তি রক্ষায় এটি এখন অনিবার্য আবশ্যকতা।

ইউ

গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ

ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক সভা

মাধবদীতে প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে প্রেমিকের যাবজ্জীবন

নরসিংদীতে নগদের এজেন্টকে গুলি করে ৬০ লক্ষ টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩

৭ দিনে হিটস্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু

ওয়ালটন ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ ক্যাম্পেইন মেয়াদ বাড়লো

পিরোজপুরে কলেজছাত্র হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবি এলাকাবাসীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাকচাপায় কলেজছাত্রের প্রাণহানি

টানা ৭ দফা স্বর্ণের দাম কমল

সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাই মে দিবসের অঙ্গীকার

২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

প্রয়োজনে শুক্রবারও স্কুল খোলা রাখা হবে: শিক্ষামন্ত্রী

সিলেট নগরীর সুরমা টাওয়ার থেকে পড়ে সিসিকের কর্মচারীর মৃত্যু

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

‘বাস মালিকদের সুবিধায় রেলের ভাড়া বৃদ্ধি’