
লেখক: প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক
রবীন্দ্রনাথ মানেই একটি প্রতিষ্ঠান l নক্ষত্রের মত যার নিজস্ব আলো আছে l সূর্য বা নক্ষত্র এর আলো যেমন চিরন্তন- পৃথিবিকে আলোকিত করছে ! তেমনি রবীন্দ্রনাথের “সৃষ্টি” মানুষের মনোজগতকে আলোকিত করেই চলেছে, সমাজ সংস্কারে জ্বলন্ত প্রদীপ, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামীর বিরুদ্ধে পথনির্দেশনা, চলবে অনন্ত কাল ধরে l
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে চিন্তা করার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না l কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের আরেক কিংবদন্তি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে খুব স্নেহ করতেন l একদম গুরু শিষ্যের সম্পর্ক ছিল l বাউল সাধক লালন ফকিরের স্পিরিচুয়ালিজম কে খুব গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছেন l রবীন্দ্রনাথ লালনের অনেক সৃষ্টি অনুবাদ করে বহির্বিশ্বে নিয়ে গেছেন l “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কমনে আসে যায়” লাললের এই উক্তি রবীন্দ্রনাথ অনেক জায়গায় রেফারেন্স হিসাবে টেনেছেন l
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ, ইংরেজী শাল ১৮৬১, তে জন্মগ্রহণ করেন l ১১ বছর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে সারা ইন্ডিয়া ঘুরে বেড়ান এবং সুক্ষ দৃষ্টি দিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রবেশ করে l সেই সময়ের সব বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম পড়তে থাকে বিশেষ করে সাংস্কৃতিক কবি কালিদাস উল্লেখযোগ্য, কলেজ জীবনে সেক্সপেয়ার সাহিত্যের সংস্পর্শে আসে, ইংরেজী সাহিত্যের আরো অনেক কবির কর্মের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে l পড়াশুনায় একদম মনোযোগ ছিল না, কোনো ডিগ্রী ছাড়াই জন্মস্থান কলকাতায় ফেরত আসে l তখন থেকেই তার নিজের সৃষ্টির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, বাংলা এবং ইউরোপের উপাদান মাথায় নিয়ে তার নিজস্ব সাহিত্য কর্ম শুরু করে l
মাত্র উনিশ বছর বয়সে “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” কবিতা
“আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের‘পর,
কেমনে পশিল গুহার আধাঁরে
প্রভাত - পাখির গান
না জানি কেন রে এতদিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ ————
———————————“
সৃষ্টি করে বাংলা সাহিত্যের তার শক্তিশালী অবস্থান জানান দেয় l
এরপর একের পর সৃষ্টি করতে থাকেন l বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি আঙিনায় তার বিচরণ - কবিতা, গান, ছোটগল্প, উপন্যাস l তিনি গান লিখেছেন এবং কম্পোজ করেছেন প্রায় ২২৩০ এর অধিক গানের সুরকার l
১৯১৩ সালে ইউরোপের বাইরে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ অর্জন করেন তার ওমর সৃষ্টি “গীতাঞ্জলী“ তে l এখানে তিনি মূলতঃ সৃস্টিকর্তার প্রতি অবনত হওয়ার কথা বলেছেন l মানুষের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার সংযোগ এর কথা বিশদ ভাবে তুলে ধরেছেন তার সৃষ্ট কর্মের মধ্যে, নিয়তির কথা বলেছেন l সাবলীল ভাষায় তার সাহিত্যকর্মে চিরন্তনত্ব চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে, সর্বযুগের উপযোগী আর এটাই রবীন্দ্রনাথের প্রধান আকর্ষণ l
ছোটগল্প ”পোস্টমাস্টার” আমাদের কল্পজগৎকে সহজেই
নাড়া দিয়ে থাকে l গল্পে শিক্ষিত পোস্টমাস্টার এবং অশিক্ষিত মেয়ে “রতন” উভয়ের নিজস্ব জীবন দর্শন সুন্দর ভাবে ফুটে তুলেছেন l এছাড়া রবীন্দ্রনাথের কয়েক খন্ড ছোটগল্প আছে l
নাটক লিখেছেন - অচলায়তন, রক্তকরবী সহ অনেক l
উপন্যাসে তার অনন্য সৃষ্টি গোড়া, ঘরে বাইরে, যোগাযোগ ইত্যাদি !
যেমন অচলায়তন নাটকে -সমাজে কুসংকার, ধর্মীয় গোড়ামী মানব সভ্যতা, মানবতার বিপক্ষে যে দেয়াল তুলে রেখেছে সেই দেয়াল উৎরে ফেলার কথা বলা হয়েছে !
আবার রক্তকরবী নাটকে মানুষের লোভ বিশেষ করে বিত্ত, ধন সম্পদ কিভাবে যান্ত্রিকতা সৃষ্টি করে আর, সেখানে কিভাবে প্রাকৃতি এবং তার অপার সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, দু চক্ষুর আড়াল হয়ে যায় !
ভারত বর্ষের রাজনীতির দিকেও তার প্রখর দৃষ্টি ছিল l ব্রিটেন তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেছিল, তিনি ব্রিটিশদের নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ স্বরূপ সেই উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন একসময় l যেটা সারা পৃথিবীতে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল l
মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তার ছিল প্রগাঢ় বন্ধুত্ব l
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল l
থাকবেই তো - আইনস্টাইন তার সৃষ্ট “বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব” দিয়ে মানব কল্যানে অনেক কিছুই সৃষ্টি করে গেছেন l তেমনি রবীন্দ্রনাথ তার সৃষ্ট “সামাজিক বিজ্ঞানের তত্ত্ব“ দিয়ে মানবতার কল্যাণ করে গেছেন l
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট: বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরি, কানাডা।
//এল//