ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ১৩ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪

English

মতামত

আমাদের জাতীয়তা এখনো কেনো "বাংলাদেশী"? 

সোহেল সানি

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৯ নভেম্বর ২০২২

আমাদের জাতীয়তা এখনো কেনো

সাংবাদিক সোহেল সানি

আমরা দেশের জনগণ  সাংবিধানিকভাবে জাতীয়তায় বাঙালী এবং নাগরিকত্বে বাংলাদেশী। কিন্তু এখনও  জাতীয়তায় "বাংলাদেশী' লেখার প্রচলন রয়ে গেছে। সংক্ষুব্ধ নাগরিক হিসেবে  সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানের স্পষ্ট নির্দেশনা উপস্থাপনের আগে দেখে নেই, জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা বলতে কী বুঝায়।  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জে. এইচ হায়েস বলেন, ''Nationalism consists of modern emotional fusion and exaggeration of two very old phenomena-nationality and patriotism.' অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ গঠিত হয় আধুনিক সংবেদনশীল সংমিশ্রণ এবং অতিরঞ্জন দুটি অতি প্রাচীন ঘটনা-জাতীয়তা এবং দেশপ্রেম নিয়ে। এই দার্শনিকের উচ্চারণেই দেখা মেলে - আমাদের জাতীয়তাবাদ। 

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদের (৯) - দফায় বলা হয়েছে যে, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সঙ্কল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। 

অপরদিকে নাগরিকত্ব সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ ৭[৬।(১) এ বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত হইবে। অনুচ্ছেদ ৭{৬।(২) বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবে। 

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাস হয় সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১। এরপর রাষ্ট্রপতির সম্মতিসূচক স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইনটি কার্যকর হয়। ফলশ্রুতিতে বাহাত্তরের মূল  সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে চারটি মূলনীতিকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র বা ভিত্তি হিসেবে সন্নিবেশিত ছিলো, তা পুনরায় প্রতিস্থাপিত হয়। সেই চার মূলনীতির প্রথমটিই হলো, জাতীয়তাবাদ।

১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল সংবিধান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনায় জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে বিকৃত ব্যাখা দিয়ে অনুচ্ছেদে জুড়ে দেয়া হয় যে, বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন, অর্থাৎ বাঙালীর স্থলে বাংলাদেশী। জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম কথাটির স্থলে জুড়ে দেয়া হয় জাতীয় স্বাধীনতা কথাটি। যেনো মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। অর্থাৎ বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস ঐতিহ্য ও সভ্যতাকে অস্বীকার করা হয়। মোটকথা  নাগরিকত্ব (সিটিজেন) ও জাতীয়তা (ন্যাশনালিটি)-কে গুলিয়ে ফেলা হয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আমদানী করে। দীর্ঘকাল পর এ সম্পর্কিত সংবিধান পঞ্চম সংশোধন আইন ১৯৭৯ এর বিরুদ্ধে দাখিলকৃত রীট মামলার নিষ্পত্তি করে  সুপ্রিমকোর্ট। এক ঐতিহাসিক রায়ে পঞ্চম সংশোধন অবৈধ ঘোষণা করে সংবিধানের প্রস্তাবনা পুনর্বহাল করা হয় এবং বলা হয় যে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ  অপরিবর্তনযোগ্য, এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি। 

উল্লেখ্য সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ হলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায় মতে, রাষ্ট্রপতি কোন অধ্যাদেশে বা কোন সংসদ কর্তৃকই প্রস্তাবনা এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সংশোধন অথবা  পরিবর্তনযোগ্য নয়। সুপ্রিমকোর্টের রায়ে মূল সংবিধানে প্রস্তাবনা পুনর্বহাল হলেও ১৯৭৯ সালের পঞ্চম সংশোধনী অনুসারে প্রচলিত জাতীয়তা "বাঙালি"র স্থলে  "বাংলাদেশী" রয়ে গেছে। 

উল্লেখ্য রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল তৎকালীন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান উত্থাপিত সংবিধান পঞ্চম সংশোধন বিল ১৯৭৯ পাস হয় ২৪১-০ ভোটে। বিরোধী দলের নেতা আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ (মালেক) ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ (মিজান) সংবিধান সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন পুর্নাঙ্গবেঞ্চ। ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়নি যে,  "বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশী বলে পরিচিত হবেব। কিন্তু তাহলে কেনো আমরা বাংলাদেশের নাগরিকগণ জাতীয়তায় বাংলাদেশী  বলে পরিচিত হচ্ছি?  

এমনকি জাতীয় সংসদে পাসকৃত সংবিধান অনুসারেও জাতীয়তা বাঙালী পুনর্বহাল হয়েছে। নাগরিক পরিচয়ে জাতীয়তার স্থলে নাগরিকত্ব শব্দটি ব্যবহার করা হলে বাংলাদেশী লেখা প্রযোজ্য হবে। অথবা জাতীয়তার পরে নাগরিকত্ব শব্দটি ব্যবহার হলে যথাক্রমে বাঙালী ও বাংলাদেশী দুটোই ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সংশ্লিষ্ট সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি প্রজ্ঞাপন জারি। 

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় 
জাতীয়তাবাদ হচ্ছে একটি ভাবাদর্শ যা একটি জাতি বা জাতি-রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য, ভক্তি বা আনুগত্যের উপর জোর দেয় এবং অন্যান্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থকে ছাড়িয়ে যায়। জাতীয়তাবাদ হল এমন একটি আদর্শ যা বিশ্বাস করে যে তাদের জাতি অন্য সকল জাতি থেকে শ্রেষ্ঠ। শ্রেষ্ঠত্বের এই অনুভূতিগুলো প্রায়ই জাতিগত, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি বা সামাজিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। 

পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের জাতীয়তাবাদ রয়েছে, যেমন ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, এবং সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পেছনে জার্মান জাতীয়তাবাদ মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পেছনে ভাষাগত বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরাট অবদান রেখেছিল।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয়তাবাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জনপ্রিয় সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা, নিজেকে চালিত করার অধিকার এবং আধুনিক বিশ্ব অর্থনীতির দ্বারা সৃষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চাপ থেকে রক্ষা করা।

আমাদের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক মুক্তির যে সংগ্রাম তাকে বেগবান করার জন্য সরকারের উচিত হবে জাতীয়তাবাদ ও নাগরিকত্ব সম্পর্কে সাংবিধানিক যে নির্দেশনা রয়েছে, তাকে বাস্তবায়নপূর্বক অর্থবহ করা। 

নোবেল প্রাইজ বিজয়ী প্রখ্যাত দার্শনিক বার্নার্ড রাসেলের এ সম্পর্কিত একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য - তিনি বলেছেন, "একটি জাতির সাংস্কৃতিক মুক্তি না আসলে স্বাধীনতা সুসংহত হয় না।"

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।

//জ//

কোন দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না: বিএসএমএমইউ ভিসি

বিএসএমএমইউতে সভা ও জাতীয় সম্মেলন  অনুষ্ঠিত 

 ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই একটি হাসপাতালের প্রাণ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এক চুমুতে আড়াই বছরের জেল!

ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রিয়ন্তি প্রথম

ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

নারীর নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতে পুরুষদের সম্পৃক্তের আহ্বান

ঢাবির সব ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

মায়ের উৎসাহে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন শায়লা

চালক ছাড়াই ট্রেন চললো ৭০ কিলোমিটার!

ইসলামী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের উপর আলোচনা

বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয়: জাতিসংঘ

রাজধানীতে শিশু অপহরণ বেড়েছে: ডিবি প্রধান

কর্মবিরতি প্রত্যাহার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

ঠাকুরগাঁওয়ে রোজাদার ও শিশুদের মাঝে ইফতার বিতরণ