ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

English

মতামত

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: লাভ ক্ষতি কার?

মোঃ মাহমুদ হাসান

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১৬ অক্টোবর ২০২২

গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: লাভ ক্ষতি কার?

মোঃ মাহমুদ হাসান

আজকাল অনেক রাজনীতিবিদ আর সমাজপতিরাই যেন নির্বাচনকে আর ভালো চোখে দেখেন না!! নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার খায়েশে মূহ্যমান সমাজপতিরা মনোনয়ন পত্র কমিশনে জমা দিবেন, নির্ধারিত তারিখে সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষটি ছাড়া অন্যরা মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিবেন!! তাতেই তো সব ল্যাঠা ছুঁকে যায়।  জনগণের দুয়ারে দুয়ারে-দুয়ারে ধর্ণা দেয়া কার ভালো লাগে বলুন? তা না করে, ক্ষমতাবানদের বিপরীতে যখন কেউ প্রতিদ্বন্ধী হয়ে যান, তখনই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে!! যে কোন মূল্যে জয়ী হওয়ার নেশায় গনতন্ত্রের রীতিনীতি সব উল্টো হয়ে যায়। মৌলিক গনতন্ত্রের আদলে জেলা পরিষদের নির্বাচন, এমন খায়েশকে যেনো আরও বড় বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।


জেনারেল জিয়ার 'হ্যাঁ, না' ভোটের নির্বাচন। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। গনতন্ত্র, নির্বাচন এসব তখনো আমার মাথায় নেই। বাড়ির কাছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেমন যেন উৎসব আনন্দের মেলা বসেছে। আমার সহপাঠী ইদ্রিস নাকি সত্তরটি ভোট দিয়েছে। তার চোখে, মুখে আনন্দ। এসব দেখে আমিও এগিয়ে যাই। গ্রাম সম্পর্কের এক চাচা মশাই, আমাকেও কাজে লাগায়। ভাগ্য বিড়ম্বনায়, আমার ভাগে সেদিন বিশটি ভোট জুটেছিল। এভাবেই গনতন্ত্রের সংগে আমার প্রথম মোলাকাত!!


১৯৮৬ সালে গনতন্ত্রের সংজ্ঞানুযায়ী, আমি প্রথম ভোটার হই। এরশাদ জমানার প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক, ইউপি চেয়ারম্যান মতলুব উদ্দীন চৌধুরী আর নুরুজ্জামান সাহেবের সাথে চলাফেরার অপরাধে স্বৈরচারের চামচারা আমাকে জীবনের প্রথম গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত করেছিল। ১৯৮৮ সালেও ছাত্রলীগ করার অপরাধে ভোটকেন্দ্রের দখলদার বাহিনী আমাকে কেন্দ্রের কাছেই ভিড়তে দেয়নি। রাজনীতির সজ্জন মানুষ, আলোকিত ব্যক্তিত্ব এনামুল হক মোস্তফা শহীদকে (সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী) ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ঐদিনই আমাকে এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম ফিরতে হয়েছিল। এভাবে আমার মতো লাখো লাখো বঞ্চিত, ক্ষুব্ধ মানুষগুলোই তো একদিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ১৫ দল, সাতদলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে সংঘবদ্ধ হয়ে সামরিক লৌহমানব খ্যাত এরশাদ কে মসনদ ছাড়তে বাধ্য করেছিল।


ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর। যে গনতন্ত্রকে পূনরুদ্ধার করতে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা কর্মীকে জেল,জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনের স্বীকার করতে হয়েছে, সেই খালেদা জিয়ার আমলেই জাতি ১৫ই ফেব্রুয়ারীতে গনতন্ত্রের ঐতিহাসিক কলংক দেখেছে। নিরংকুশ ম্যান্ডেট থাকা সত্বেও জবরদস্তির 'মাগুরা' নির্বাচনের কারণে, ক্ষমতার মসনদ থেকে জনগণ বিএনপি কে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। যে গনতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর হয়ে কাঞ্চন, দীপালি সাহা, সেলিম, দেলোয়ার, নুর হোসেন, ডাক্তার মিলন, আর জননেতা ময়েজ উদ্দীন রাজপথে জীবন দিয়েছিল, সেই গনতন্ত্র আজ কোথায়? যে সাম্য ভিত্তিক গনতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নকে বুকে ধারন করে, তরুণ ছাত্র সমাজ তাদের জীবন থেকে একটি দীর্ঘ অধ্যায় আন্দোলন সংগ্রামে কাটিয়েছিল, সেই তরুণরা মধ্য বয়সে হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো নিয়ে আহাজারি করছে।


তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বির মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শুন্য হয়ে যায়। গত ১২ অক্টোবর এই শুন্য আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিল। তার বিপরীতে আরও চারজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। হেভিওয়েট প্রার্থী রিপনের বিপরীতে যারা ছিলেন, জনপ্রিয়তায় তাদের কেউই রিপনের সমকক্ষ ছিলেন না। পত্র পত্রিকার তথ্যমতে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে রিপনের বিজয় সুনিশ্চিত ছিল। গনতন্ত্রের কি নিষ্ঠুরতম পরিহাস, নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, একান্ন টি ভোট কেন্দ্রের ব্যাপক অনিয়মের চিত্র এখন সিসিটিভি'র ফুটেজে। দূর্বৃত্তরা নাকি প্রায় শতাধিক কেন্দ্রের সিসিটিভি'র লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে, কমিশন পুরো নির্বাচনী এলাকার ভোট বাতিলে বাধ্য হয়েছে।


নির্বাচন বাতিলের পর নানামুখী তীব্র প্রতিক্রিয়ায় মিডিয়া এখন সরগরম। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ার ও আইনি ক্ষমতা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশন যা চোখে দেখেছেন, তাকে বিশ্বাস করে এসব অনিয়মের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অন্যদিকে একই ভাষায়, সাদা কাগজে কাউকে এড্রেস না করে বিরানব্বই জন প্রিজাইডিং অফিসার সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানিত হওয়ার দাবি করেছেন। সকল অবস্থা দৃষ্টে এটি স্পষ্ট, স্থানীয় প্রশাসন আর ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দল এখন নির্বাচন কমিশনের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে। সার্চ কমিটি গঠন করে সারাদেশ থেকে বরেণ্য মানুষদের বাঁচাই করে, তার মধ্য থেকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শ্রেষ্ঠ মানুষদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন কি তাহলে এক্তিয়ার বহির্ভূত কর্মকান্ড করে জাতির সংগে উপহাস করছে?


তর্কের খাতিরে বলা যায়, সিসিটিভি'র পর্যবেক্ষণ যদি সত্যি হয়, স্থানীয় প্রশাসন আর ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের দূর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠে। জনপ্রিয় নেতা মাহমুদ হাসান রিপন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যেখানে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল, সেখানে স্থানীয় প্রশাসন একটি বিতর্কহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলো কেন? তাহলে কি সরিষার মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোন ভূত, আওয়ামী লীগের জন্য আর একটি ' মাগুরা' তৈরির অভিলাষে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!! স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভূমিকাই বা কি ছিল? জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও, তারা কেন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন কে বাধ্য করতে ব্যর্থ হলো? নাকি তাদের মধ্যেও, বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার জাতীয় খায়েশ জন্ম নিয়েছিল?


প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল বরেণ্য আমলা। চমকপ্রদ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই মানুষটি যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন, অনেকে জনসমক্ষে স্বীকার না করলেও কমিশন নিয়ে চারিদিকে যে একটি স্বস্থির আবহাওয়া বিরাজমান ছিল, সেটি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। গাইবান্ধা উপ নির্বাচন নিয়ে কমিশন আর আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থান কি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে জনমনে আস্থার সংকট তৈরী করতে পারে? এই নির্বাচনটি নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের যেসব বক্তব্য গণমাধ্যম এসেছে, যদি তাই সত্যি হয়, তাহলে তো নির্বাচন কমিশন দারুণ ভাবে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এমনিতেই তো বিরোধীদের মাঝে সংসয় সন্দেহের দোলাচল বিরাজমান। এরই মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন তো অস্থিরতার মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতি কি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্থিদায়ক হবে?


পদ্মাসেতুর সুশীতল হাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গসহ সারা বাংলার আনন্দের রেশ এখনো কাটেনি। ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা কলসিন্দুরের তরুণীদের নেতৃত্বে অজপাড়াগাঁয়ের দীনহীন পরিবারের তরুণীরা সাফ জয় করে বাংলার জন্য যে গৌরব এনে দিয়েছে, সে আনন্দের রেশ এখনো বহমান। বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মাথায় নিয়েও যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণে গাইবান্ধা-৫ এর নির্বাচনকে বিতর্কিত করার লাভ-ক্ষতি কার, সেটি খতিয়ে দেখার কোন বিকল্প আছে কি?


লেখকঃ কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক

 

 

//এল//

এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন

ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিদ্যা বালানের বিস্ফোরক মন্তব্য

তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে

কী করছেন হিট অফিসার

থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শেখ হাসিনা

চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই

‘হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে দিনে লক্ষাধিক মুরগি’

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, গ্রেপ্তার ৩

হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪টি জিআই পণ্যের সনদ বিতরণ

জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর মিষ্টি পান