ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, , ১৬ আগস্ট ২০২৫

English

জাতীয়

সাহারা চৌধুরীর আজীবন বহিষ্কারাদেশে ১৬২ নাগরিকের নিন্দা 

উইমেনআই প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ১৬ আগস্ট ২০২৫

সাহারা চৌধুরীর আজীবন বহিষ্কারাদেশে ১৬২ নাগরিকের নিন্দা 

ফাইল ছবি

গত ১৩ আগস্ট, সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ট্রান্স নারী শিক্ষার্থী - সাহারা চৌধুরীকে আজীবন বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ১৬২  নাগরিক।

শনিবার (১৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ১৬২  নাগরিক এই নিন্দা জানিয়েছেন৷ তারা  মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এই অন্যায্য বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে সাহারার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, ১১ আগস্ট  রাতে ফেসবুকে এন্টার্কটিকা চৌধুরী নামের একটি একাউন্ট থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসকে বিষয়বস্তু করে দুটি কার্টুন ক্যারিকেচার প্রকাশ করা হয়। ক্যারিকেচারগুলো প্রকাশের পর ড. সরোয়ার এবং  উৎস একাউন্টটিকে সাহারা চৌধুরীর বলে দাবি করেন এবং তাদেরকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে এই মর্মে সাহারা চৌধুরীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। এরপর সাহারা চৌধুরীও নিরাপত্তাহীনতা এবং হুমকির মুখে ড. সরোয়ার এবং  উৎসসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে লক্ষ্য করছি যে বিগত কয়েক বছর ধরে ড. সরোয়ার এবং  উৎসের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি গোষ্ঠী লাগাতার ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে ঘৃণা ছড়িয়ে তাদেরকে হত্যাযোগ্য এবং অচ্ছুৎ করে তুলছেন। এই সংঘবদ্ধ বিমানবিকীকরনের ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে মজলুম এই মানুষগুলো আরও লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। শিক্ষক পরিচয়কে ব্যবহার করে সমাজে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিভেদ ছড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশাকেও তারা কলুষিত করেছেন।

ট্রান্স ও হিজরা পরিচয়ের মানুষদের উপর চলমান প্রাত্যহিক নিপীড়ন নিয়ে রাষ্ট্র এবং বলিয়ান লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়ের জনগোষ্ঠীর নির্লিপ্ততা ও নীরবতার কালে, একজন ট্রান্স নারীর আক্রমণাত্মক প্রতিবাদ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াকে উপজীব্য করে সকল ট্রান্স, হিজরা ও অন্যান্য পরিচয়ের মানুষদের পুনর্বার হত্যাযোগ্য না-মানুষে রুপান্তর করার যে প্রক্রিয়া জারি আছে তাকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখি। কোন পক্ষের অসংবেদনশীল আচরণই গ্রহণযোগ্য নয়, তবে সংবেদনশীলতা কেবলমাত্র যদি একটি নির্দিষ্ট বর্গের মানুষের জন্য প্রযোজ্য হয়, তবে সেই সংবেদনশীলতা প্রশ্নাতীত নয়।

কোনো নির্দিষ্ট কারণ দর্শানো ছাড়াই সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর চাপে গত ১৩ আগস্ট  মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাহারা চৌধুরীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়,  আমরা জানতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম অগ্রাহ্য করার কারণে সাহারাকে আজীবন বহিষ্কার করা হল? যদি কোনো নিয়ম তিনি অগ্রাহ্য করে থাকেন সেটির শাস্তি আজীবন বহিষ্কার কিনা? বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিনা? প্রতিনিয়ত সহপাঠীদের দ্বারা হুমকির শিকার হওয়া সাহারার মানসিক স্থিতি বিবেচনা করা হয়েছিল কিনা?

সাহারার বহিষ্কার সংঘবদ্ধ চক্রের মনোযোগের কারণে প্রচারণা পেলেও গত এক বছরে হিজরা পল্লীতে আগুন, খুন, জখম, জনসম্মুখে হেনস্তা, বস্ত্রহরণসহ ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা জনপরিসরে আড়ালেই থেকে গেছে। ভিন্ন লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়ের মানুষকে শিক্ষাঙ্গন থেকে বিতাড়িত করা এই সহিংসতারই সাম্প্রতিক উপসর্গ। অতিসম্প্রতি (২২ জুলাই ) ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) কর্তৃপক্ষ কোনো যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই পাঁচ শিক্ষার্থীকে তথাকথিত "সমকামিতায় জড়িত থাকার" অভিযোগে সংঘবদ্ধ চক্রের দাবির মুখে আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করেছে। কেবল অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতা বিরোধী তো বটেই, একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও শামিল। শিক্ষাঙ্গন যদি কেবল সমাজে বিদ্যমান মতামত ও মূল্যবোধের প্রতিফলক হয় তবে সমাজ পরিবর্তনের চাবিকাঠি হিসেবে শিক্ষার ভূমিকা ভূলুণ্ঠিত হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর যখন আমরা আরও সহিষ্ণু সমাজের আশা করছিলাম, তখন গোড়াতেই দেখা গেল একদল ঘৃণাজীবী গোষ্ঠী নতুন অর্জিত রাজনৈতিক ও সামাজিক সহিষ্ণুতার পরিবেশকে ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। ইসলামে বিদ্যমান ভিন্নতার প্রতি সহিষ্ণু ও গণতান্ত্রিক অবস্থানকে এই চক্রটি অগ্রাহ্য করে নিজেদের লালিত ঘৃণার দ্বারা ইসলাম রক্ষার নামে ইসলামের উপরেই কালিমা লেপন করছেন এবং ইসলামবিদ্বেষীদের শক্তিশালী করছেন। শুধু লিঙ্গবৈচিত্র্যময় ব্যাক্তিদেরই নয়, বরং অনলাইনে ও অফলাইনে তাদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো, প্রতিবাদ করা প্রতিটি মানুষকে উল্লেখিত গোষ্ঠী তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার নানাবিধ সংস্কৃতি, জাতি ও লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষজনের প্রতি যথাযথ সহমর্মিতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি কখনো কখনো এটিও প্রতীয়মান হয়েছে যে নতুন সরকার পিতৃতান্ত্রিক ও ধর্মপরিচয় ব্যবহারকারী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট। তারপরও আমরা মনে করি ঘৃণার বিষবাষ্প সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ার আগেই, বাংলাদেশে সকল নাগরিকের পরিচয়, বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে সম্মান করে সহাবস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

তারা কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন।

অবিলম্বে সাহারা চৌধুরীর আজীবন বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে তাকে শিক্ষার সুযোগ দেওয়া । পাশাপাশি বিদ্যায়তনে ভিন্ন পরিচয়ের মানুষদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূর করা। রাষ্ট্রকে সকল প্রান্তিক, লিঙ্গীয় সংখ্যালঘু মানুষের জীবনের স্বতন্ত্র পরিচয়ের সাংবিধানিক অধিকার প্রদান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা ।সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়) বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি রক্ষায় কার্যকর জেন্ডার সংবেদনশীল আচরণবিধি প্রণয়ন করতে হবে ও তা অনুসরণ করা।

আসিফ মাহতাব উৎস ও ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনের লাগাতার অসংবেদনশীল আচরণ এবং সমাজে বিভেদ ও ঘৃণা ছড়ানোর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন -

ড. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,  আনু মুহাম্মদ, প্রাক্তন অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, 

আজফার হোসেন, লেখক ও অধ্যাপক, গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র,     মানজুর আল মতিন, আইনজীবী, 

সায়দিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক,  সিউতি সবুর, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়,  নাসরিন খন্দকার, গবেষক, আবেদা গুলরুখ, আইনজীবী,  বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট,  মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,   নাভিন মুরশিদ, শিক্ষক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, মানস চৌধুরী, শিক্ষক, রোকাইয়া শতদ্রু, গবেষক,   মিম আরাফাত মানব, প্রভাষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়,  তারান্নুম, গবেষক, শিল্পী,   দেবযানী মোদক, বিপণনকর্মী, মোঃ আবু রায়হান, উন্নয়ন কর্মী, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, লেখক ও এক্টিভিস্ট,   যারীন ফারিহা, শিক্ষার্থী/অ্যাকটিভিস্ট,   আফিয়া জাহিন, যোগাযোগ কর্মকর্তা, অরূপ রাহী, শিল্পী ও গবেষক,  নাজিফা তাসনিম খানম তিশা, প্রকাশনা ও থিয়েটারকর্মী,   নাফিসা রায়হানা, গণিতবিদ, আমিনা সুলতানা সোনিয়া, উন্নয়নকর্মী, এক্টিভিস্ট, সংগঠক, শক্তি নেটওয়ার্ক,  নূসরাত খান, উন্নয়নকর্মী ও গবেষক, মিথিলা মাহফুজ, শিক্ষক, তৃষা বড়ুয়া, সাংবাদিক, সাকি ফারজানা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মী, লাবনী আশরাফি, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক, 

কাজলী সেহরীন ইসলাম, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফাহিম আলম, শিক্ষার্থী,   রেক্সোনা পারভীন, চাকরিজীবী,  পি সাজিদ, লেখক, গবেষক, . ফেরদৌস আরা রুমী, লেখক ও অধিকার কর্মী,   উছাছা এ চাক, লেখক ও গবেষক, 

সুমাইয়া রেজা সূচনা, শিক্ষার্থী, ফারিয়া জামান নিকি, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রমুখ। 

ইউ

জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে

কবুতরও দেয় ’দুধ’, জানুন বিস্ময়কর পদ্ধতি

পিছাল টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি

মিরপুরে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সাহারা চৌধুরীর আজীবন বহিষ্কারাদেশে ১৬২ নাগরিকের নিন্দা 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৩ সম্মেলনের ঘোষণা

রাজশাহীতে সেনা অভিযান, অস্ত্রসহ ৩ আটক

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশের নেতৃত্বের সুযোগ এসেছে: শিল্প উপদে

বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ঘোষণায় ভারতে দাম বেড়েছে

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানি ৩ শতাধিক

চিকিৎসা খাতের বাজার ৫ বিলিয়ন ডলার, হাতছাড়া করবেন না

কোনো চাঁদাবাজকেই দেশে থাকতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নোয়াখালীতে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশের জন্য নির্বাচন অপরিহার্য: জিল্লুর রহমান

কানাডায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’