
চলন্তবাসে ’দলবদ্ধ ধর্ষণ’: গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষোভ
টাঙ্গাইলে গত মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) ঈগল পরিবহণের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখনীর মাধ্যমে তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সাংবাদিক মানিক মুন্তাসির লিখেছেন, ‘একটা বাস ডাকাতরা দখলে নিয়ে তিন ঘন্টা ঘুরল। সব যাত্রীকে বেঁধে ডাকাতি,ধর্ষণ করল।রুট পরিবর্তন করল। অথচ হাইওয়ে পুলিশ, টহল পুলিশ তাহলে কি করল? আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলো কখনো কি নিরাপদ ছিল?’
গণমাধ্যমকর্মী মৌরি সিদ্দিকা লিখেন, ‘বাংলাদেশে একটা মেয়ে একা বাসা নিয়ে একা থাকতে পারে বা রাত বিরাতে একা চলাফেরা করতে পারে এটা জানলে লোকে খুব বাহবা দেয়। অন্যদিকে, একা চলাফেরা করা সেই মেয়েটি জানে কি দুঃসহ সময় পার করে আর সেই মেয়েটি বাপ-মা একমাত্র টের পায় টেনশন কত প্রকার ও কি কি! বাংলাদেশে বসে মেয়ে পয়দা করে জীবনে কি ভুল করেছে। আমার সাধারণত রাতে যাতায়াত পছন্দের এবং আমি বেশিরভাগ সময় লং জার্নি রাতে একাই করে থাকি। এখন আমি আমার অনুভূতি ভাষায় কীভাবে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না।’
সাংবাদিক নুহু আবদুল্লাহ লিখেন, ‘‘মেয়েটি গরিব কিষাণ-কিষাণীর চোখের মনি! গতরাতে টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি এবং ধর্ষণের ঘটনার শিকার তিনি।’
‘মেয়েটি তার বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করার জন্য চোখে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন গার্মেন্টসে চাকরি নেবেন বলে!’
‘কত বড় অমানুষের দেশ হয়ে গেছে এই বাংলা! কেবল টাঙ্গাইলের এই মেয়েটির জীবনে ঘটে যাওয়া গত রাতের ঘটনাটি দেখলেই বুঝতে পারা যায়!’
‘মেয়েটিকে যারা ধর্ষণ করেছেন তারাও আহামরি ধনি নয়-তারা ডাকাত। ডাকাতি করে খায়-নিম্ন শ্রেণির লোক। তাদের কারও ঘরে যদি মেয়ে থেকে থাকে সেও একদিন বড় হবে। তারও পরিণতি হবে এই মেয়েটির মতো। বেশিরভাগ গরিব ঘরের মেয়েদের যা হয়! সেও হয়তো একদিন গার্মেন্টে কাজ করার জন্য ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হবে। এই বর্বর ডাকাতগুলো কি একবারও ভেবেছে যে, তার মেয়েটিও এমন পরিণতির শিকার হতে পারে!’
‘এই ডাকাত দলের কেউ কি পারবে কোনো ধনির দুলালীর, যারা ব্যক্তিগত গাড়িতে নিরাপদে এসির হাওয়া খেয়ে চলাফেরা করেন তাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে? ধর্ষণ করা তো দূরে থাক!’
‘তারা একটি গরিবের মেয়ের সর্বনাশ করতে গিয়ে একবারও ভাবে এ কথা? আসলে ভাববে কিভাবে-ভাবার মতো সামান্যতম জ্ঞানও তো তাদের নেই।’
‘তাহলে এমন মানুষ কি আমাদের সমাজে আদৌ দরকার?’
‘এগুলো কি আসলে মানুষ? না কি মানুষ রূপে এগুলো কেবল জন্তু। এসব জন্তুকে সমাজ থেকে দূর করা খুব দরকার। মস্তিস্কবিহীন, মানবতাবিবর্জিত, দেহসর্বস্ব মানবরূপী ভয়ংকর প্রাণী কি আদৌ দরকার?’
‘রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বলবো, গরিবের সম্মান বজায় রাখতে এজন্য বেশি কাজ করা দরকার রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য থাকা সর্বোচ আইন যা সংবিধান নামে পরিচিত। পবিত্র গ্রন্থটির অনেক অনুচ্ছেদে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রকে তথা সরকারকে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব বাদ দিয়ে কেবল ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদটির কথা যদি বলি, সেখানে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে-কৃষক ও শ্রমিককে-এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা৷’
‘গরিবের প্রতিনিয়ত শোষিত হচ্ছে! এই যে বাসটি, দূর পাল্লার বাস। সেটি কেন লোকাল যাত্রী নিতে গভীর রাতে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ালো? অহরহ দাঁড়াচ্ছে। কারণ, এই অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। যাত্রীদের জিম্মি করে এমনকি দূরপাল্লার বাসের স্টাফরা এভাবে লোকাল যাত্রী তোলে। যাত্রীরা কিছু বললে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়-তারা গরিব যে!’
‘অথচ এই লোকাল যাত্রী যদি না তোলা হতো এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। ডাকাতি, ধর্ষণ কিছুই হতো না। কাজেই এই দুর্ঘটনার জন্য কেবল ডাকাতদল নয়, বাসের স্টাফ, কর্তৃপক্ষ সবাই দায়ী। রাষ্ট্রব্যবস্থা কি সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে?’
‘এই গরিব মানুষেরা কি রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে অবদান রাখেন না? হযরত আবু বকর (রা.)-এর মতো তারা তো সবটুকু দেন রাষ্ট্রকে। এই যে মেয়েটি গ্রাম থেকে শহরে আসছিলেন কাজ করতে, তার টাকা কি সরকার নেবে না? নিতো না? তার প্রতি, তার নিরাপত্তা নিয়ে কি কোনো দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেই? তার নিরাপত্তা কেন লঙ্ঘিত হলো তবে? কে দেবে জবাব! সবাই তো ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে, ক্ষমতা নিয়ে! কোথাকার কোন কিষাণ-কিষাণীর মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলো কি হলো না তাতে কি যায় আসে!’’
গণমাধ্যমকর্মী জেসমিন পাপড়ি লিখেন, ‘গা শিউরে উঠছে! কত অনিরাপদ আমরা! কতটা অসহায়!’
ইউ