
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
কুমিল্লার মুরাদনগর থানাধীন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণ, মারধর ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
এই কমিটি দেশের ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের একটি প্ল্যাটফর্ম। এর সদস্য সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্লাস্ট, ব্র্যাক, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, কর্মজীবী নারী, উইক্যান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সহ আরও অনেকে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মানববন্ধন
গত ১ জুলাই (মঙ্গলবার) সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর বুধবার (২ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। এতে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ মুরাদনগরের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বক্তাদের বক্তব্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ তুলে ধরা:
-
মালেকা বানু, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলেন, “এই ঘটনা এখন মানবাধিকারের চেয়ে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ভিকটিমকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
-
হুমায়রা খাতুন, সমাজকল্যাণ উপপরিষদ সম্পাদক, বলেন, “নারী নির্যাতন প্রতিনিয়ত বাড়ছে, অথচ এর কোনো সঠিক প্রতিকার নেই।”
-
সারাবান তহুরা, ‘নিজেরা করি’ সংগঠনের প্রতিনিধি বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা যেন ক্ষমতা বা রাজনৈতিক হাতিয়ার না হয়। ভিকটিমকে দোষারোপ করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।”
-
মৌসুমী কীর্তনীয়া, ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ, বলেন, “আজ নারীরা কেউই নিরাপদ নয়। সঠিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
-
সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, অভিযোগ করেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের সাথে জেলা প্রশাসকের সাক্ষাৎ না করাই প্রমাণ করে, সহিংসতার শিকার নারীর ন্যায্য বিচার নিয়ে প্রশ্ন আছে।”
-
জনা গোস্বামী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক, বলেন, “ধর্ষণের ঘটনাকে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপের হাতিয়ার বানাচ্ছে। অপরাধীর কোনো দল নেই—এই অবস্থানে আমরা অটল।”
সভাপতির আহ্বান
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “ধর্ষণ, নির্যাতন এবং তার ভিডিও ধারণ—প্রত্যেকটি নিজেই অপরাধ। এসব ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে। দেশের নারীসমাজ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে—তাদের ওপর এমন নিগ্রহ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “মুরাদনগরের ধর্ষণের শিকার নারী একা নন, আমরা সকল নারীই আক্রান্ত। নারী আন্দোলনের শেষ শক্তিটুকু নিয়েও আমরা অপরাধীর বিচারের জন্য লড়াই করবো।”
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে যেন নির্যাতিত নারীকে পুনরায় অপমানের শিকার হতে না হয়, সেদিকে গণমাধ্যমকে সচেতন থাকতে হবে।”
উপস্থিতি ও সঞ্চালনা
উক্ত মানববন্ধনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রীবৃন্দ ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
ইউ