
প্রেম যখন প্রেতিনী হয়ে যায়
ও আমাকে প্রচন্ড মেরেছে, ঘরের মধ্যে লুটিয়ে পড়ে বলতে বলতে ভেঙে পড়ে রু,,,।
ছেলেটির মাথার ওপর ফরফর উড়ছে বিষণ্ণ প্রজাপতি,,, স্ক্রিণে দেখছিল, কোন এক প্রেতিনী অদ্ভুত ছায়া বিস্তার করে এগিয়ে আসছে একটা জীবন্ত লাশের দিকে,, সে বুঁদ হয়েছিল।
ছায়া অন্ধকার রুমে বসে ছেলেটি সিগ্রেট টানতে টানতে যেন অনুভব করে কিছু যেন ছুটে গেল, সে ঘাড় ঘোরায়, কোন শব্দ হল কী?
জীবনে প্রচুর প্রেম এসেছে তার,কিন্তু পুরো জীবনের সাথে কাউকে জড়ানোর কথা ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসতো।
রু ভার্সিটি থাকতে তাকে জীবনানন্দ শিখিয়েছিল, গাঙের ঢেউয়ের মতো কবুল,, থেকে শুরু করে নাটকপাড়ায় ঘুরে ঘুরে গ্রীক ট্রেজেডি শিখিয়েছিল, ব্যবসায়ী বাবার সন্তান ছেলেটির জীবনের ভাঁজ একেবারে পালটে গিয়েছিলো।
যার জীবন ছিল সহজ সরল দিনের পর দিন তার রোদ হতে থাকে বহুবর্ণিল, তার রাত হতে থাকে জাগরিত আর তার হুজ্জোতমিশ্রত গানের মধ্যে যুক্ত হতে থাকে ক্লাসিকাল লিরিক মেলোডির বেদনা।
যে ছেলেটি অনায়াসে ছুয়ে ফেলত কোন নারীকে,, ছিড়েখুঁড়ে একাকার করত, সে এই মেয়ে যাকে সে রু বলে ডাকত, তাকে কিছু বলতে গিয়ে অনুভব করত, যেন বরফ আটকে গেছে গলায়,হিচকি খেত রীতিমতো,, কিছু বলবি?
রু থাপ্পড় দিত। ফের ক,টা মেয়ের সাথে বদমাইশীতে জড়িয়েছিস?আজকাল আমার পছন্দের বই পড়ছিস না, নাটক দেখছিস না।
কী যে বলিস,তুই যেভাবে অনলাইনে ভূতের নাটক মুভি দেখাচ্ছিস,,আমি নিজেই না কবে ভূত হয়ে যাই।
তোর ভূত পছন্দ, নইলে কত টাইপের মিথের সাথে ক্লাসিকাল সাহিত্যের সাথে পরিচয় করাচ্ছি, তোকে টানে কিছু?
ফুটবল টানে, তবে মুশকিল, নেইমারের প্রশংসা করলে মেসির দল মারতে আসে,মেসির প্রশংসা করলে নেইমারের দল,,অবশ্য এদেশের আরেক নাম আর্জেন্টিনা হয়ে গেছে,, আমি জানি,এসব শুনে তুই মারতে আসবি,কারণ তুইও প্রতিদলের প্লেয়ারদের ভালো খেলার দক্ষতা মানতে নারাজ,আরও যে জগতে ভালো দল আছে,প্লেয়ার আছে,কারও সামনে বলতেই পারি না।
তাই সেখানে আমি একা হয়ে গেছি। আমি যে কোন ব্যাপারে অন্ধত্ব পছন্দ করি না, গত বিশ্বকাপেও দেখেছিস। তাই সব খেলা
দেখা ছেড়ে দিয়েছি। এবারের বিশ্বকাপে আমি ঘন জঙ্গলে চলে গেছিলাম। সেখানে জগতের নামকরা হরর লেখকদের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো।
বিশ্বকাপ সবে শেষ হল,কবে গেলি?
ম্যারাডোন ঈশ্বরের গোল দিল যখন, এমবাপ্পে স্বর্ণজুতো পরল তখন, রু, তুই, বুঝবি না তুই, এসবের কোন দিনরাত্রি, সময় নেই, খেলা প্রেম কিচ্ছু আমাকে আর টানেনা, আসলেই হরর আমাকে টানছে, রু,, সন্ধ্যা নামতে থাকলে টি এস সি র টুংটাং ঘোরে পড়ে যেত ছেলেটি,,, সে বিড়বিড় করে, আমার আত্মা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে,তাই হয়তো ঘুম চলে গেছে,দিনরাত সব এক হয়ে গেছে।
এইবার মেয়েটি ভুলুন্ঠিত অবস্থা থেকে সামনে এসে দাঁড়ায়,,তুই আমার শব্দ শুনতে পাচ্ছিস না?
ছেলেটি স্ক্রিন অফ করে সামনের দিকে তাকায়,,নিজেকে ধাতস্থ করে চমকে উঠে বলে, ? তুই?এখানে? তোমার হাজবেন্ড?বলতে বলতে এইবার সে বিহবল হয়ে মূর্তি হয়ে যায় যেন, রু একেবারে ঝাপিয়ে পড়ে তার গায়ে,,তুই কেন আমাকে আটকালি না? কেন আমাকে যেতে দিলি?
ছেলেটির ভ্রম কাটতে সময় লাগে না, ধীরে ধীরে এগিয়ে বাতি জ্বালিয়ে দেখে, এ ভার্সিটির সেই শৈল্পিক মেয়েটি নয়,রু নয়।
এ যেন বিধস্ত হওয়া অন্যকেউ।
বুকের ভেতর বাতাস ঢুকে তাকে ঝরঝরে করে তোলে,তুইই না আমাকে বলেছিলি ,নিজেকে কারো কাছে এমন ভেঙে পড়তে দেয়া ঠিক না,যাতে অন্য একজন তাকে গড়ে তোলার সূযোগ পায়? আমি ভেঙে পড়েছিলাম, ভুলে গেছিস?
আলুথালু হয়ে মেয়েটি বলে,তুই সেই কথা নিয়ে বসে আছিস? আর এদিকে তোর সাথে আমার মিথ্যে সম্পর্ক নিয়ে সে আমাকে কথায় কথায় মারধর করে, জাস্ট সামান্য বিষয়, তার দল কে সাপোর্ট করি না,এজন্যও,দেখ,রক্ত বের করে ফেলেছে,,,দ্যাখ,,বলে আমি নাকি তোর দলকে সাপোর্ট করি, তোর জন্যই নাকি আমার মধ্যে কোন খুশি নেই।
ওহ! মিথ্যে সম্পর্ক! রু, এখনো মানছিস?
তো, কোথায় গেল তোর সেই ব্যত্তিত্ব? এমন দুরবস্থায় আমার কাছে আসতে তোর লজ্জা লাগলো না?
মেঝের মধ্যে যেন কোন নারী নয়, এলোমেলো কাপড় পড়ে ছিলো।
স্ক্রিনের সুইচ চেপে দেয় যেন কেউ, ছেলেটি চক্রাকারে মাথা ঘুরিয়ে দেখে,সারা ঘরে ঘরে কেউ নেই।
ছায়া অন্ধকার ফের চারপাশ ঘিরে ধরে, ক্রমশ স্ক্রিনের প্রেতিনী ছেলেটির কাছে এগিয়ে আসতে থাকে। ফিসফিস করে চক্রাকারে নাচতে থাকে ছায়া,, ছেলেটি বলে, রু,,প্লিজ, আমাকে ভয় দেখাবি না,,,ফের যেন ছাদ কাঁপিয়ে আওয়াজ আসে, আমি কোনদিন তোকে ছেড়ে যাইনি, মনে করে দ্যাখ, তোর মন উঠে গিয়েছিল, ধাক্কা দিয়ে চেয়ার ফেলে দেয় ছেলেটি,
এরপর পাগলের মতো ভার্সিটির ক্যাম্পাসের দিকে ছুটে যেতে থাকে।
//জ//