বালিকার আলোর বাণ
গাঢ় অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।
অথচ অমাবস্যা ছিলো না।
ঘুটঘুটে মেঘের ছাতা চারপাশে ছড়ায়িত ছিলো।
বালিকা যখন ঘুমে তস্করেরা তখন তার সখা কে
হত্যা করে ফেলল।
সে অনেক আগের কথা।
অসীম হুতাশনে আত্মায় কাঁদছিল আর
মুহুর্মুহু কম্পিত আঁধারে,
বুনো বাতাসের তোড়ে উড়ে যাচ্ছিল বালিকা।
সে যখন ঘনজঙ্গলের সামনে দাঁড়ায়,
বালিকার চোখ জ্বলছিল মারাত্মকভাবে
তস্কররা ঘেরাও করে তাকে বিষাক্ত নখর বিস্তারিত করে।
বালিকাকে দারুণ শংকা আর তীব্র বেদনারাশি
দেয়ার চেষ্টা করতে করতে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে।
আচমকা জংগল থেকে ঝাঁকঝাঁক জোনাকিরাশি
চতুর্দিক উজ্জ্বলিত করে তোলে।
বালিকা তার জাদুময়ী চোখ বিস্তারিত করে।
সমস্ত জোনাকিপোকা বালিকার
সমস্ত শরীর ঘিরে ধরে।
ভয়ানক মুখের তস্করদের দিকে বালিকা মুঠো মুঠো
জোনাকি ছুঁড়ে দিতে থাকে।
বিহ্বল তস্করেরা এমন আলোর উজ্জ্বলন দেখে সব
ভুলে হাত পা ছুঁড়ে হাসতে থাকে।
আসলে জীবনেও দেখেনি,বলে তাদের বিস্ময়শিশু চোখ
বলতে থাকে,,আলো! আলো!
বালিকা, মেঘের চুলের মতো বিছিয়ে দেয়া
রশ্মির মুখে দাঁড়ায়,,অস্ফুটে ডাকে সখা,,
কেউ যেন সুন্দর ফুলের সুবাস নিয়ে জাপটে ধরে
বালিকাকে,,তার ওষ্ঠে চুম্বন করতেই বালিকা অনুভব
করে যুবতী এক বোধ তাকে ভয়বহ কম্পনে
ঘাসের ওপর বিছিয়ে দিয়েছে।
তীব্র সঙ্গমে ভস্ম হতে থাকে চরাঞ্চল।
বালিকা বাড়ির পথ ধরলে অন্ধকার আসমান থেকে
এক নক্ষত্র বালিকার সামনে পড়ে। পেছন থেকে এসে
সখাকে বালিকা দাঁড়াতে দেখে ময়ূর হয়ে তার পিঠ
পেতে দেয়।
মহাশূন্যতার পথ ধরে তারা ভেসে যেতে থাকে।
কথা বলতে বলতে, তুমি জাদুময়ী,
তুমি বন্য!
তুমি অসাধারণ! তাই এত ভয়! কখন কোন
কাঠি দিয়ে আমাকে কী বানিয়ে দাও।
ধুর!
এসির ঝাঝালো বাতাসে বালিকার জমে ওঠা
ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
একদিকে স্বপ্নকাতরতা অন্যদিকে শীত,, অদ্ভুত
একটা ঘোরের মধ্যে প্রথমে সে কাঁথা গায়ে জড়ায়,
পরে অন্তুর কথা তীব্রভাবে মনে পড়তেই রোদ জানালার
পর্দা টেনে দেখে,ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে
অন্তু দাঁড়িয়ে আছে।
হতচকিত মোবাইল কানে নেয় বালিকা,
তুমি?এত সকালে?
কথা আছে,আব্বু খেপে আগুন,আমাদের
ইঁচড়েপাকা, ফালতু নানা কথা বলছে।
অন্য সময় হলে বালিকার মধ্যে ভয় ঢুকত,
কিন্তু স্বপ্নে রাক্ষসদের মুখে জোনাকি ছুড়ে দেয়া,
অন্তুর সাথে ঘাসের বিছানায়,, কেমন যেন আচ্ছন্ন বোধ
করে।
এমন কথা শুনেও তুমি চুপ যে?
চিন্তা করো না,সব ঠিক হয়ে যাবে।
হুহু কাঁচা রোদ রাস্তায় দুজন রিকশার হুড
খুলে উড়ে যেতে থাকে,,তোমাকে আমি একেবারে
বুঝি না,,
বালিকা অন্তুর হাত টেনে নেয়,তুমি বন্য হতে পারো না,,?
কী?,
নাথিং,,
আমি কিন্তু সিরিয়াস,রেজাল্ট বেরোলেই এপ্লাই
করে দেব,দুজন উড়ে ইউ এস এ,
বালিকার মনে হয় আকাশ ধেয়ে জোনাকির
মতো টুকরো টুকরো আলো নেমে আসছে,
কিছুদূর গিয়ে একটা মোড়ে সে অন্তুকে
হতভাগ করে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে ফুটপাতে দাঁড়ায়,,,সেখানে তাকে ইভটিজিং করা
বদমাশগুলো ল্যাপটালেপটি করে দাঁড়িয়ে
আছে।
আজ ভয় নয়,উচ্ছ্বসিত হয়ে বালিকা তাদের দিকে
একটা ঘোরের মধ্যে এগিয়ে
গিয়ে ঝাঁকঝাঁক আলোকবিন্দু ছড়িয়ে দিতে থাকে
//জ//