ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

English

সাহিত্য

যেভাবে উদযাপন হল বিভূতিভূষণের ১২৯ তম জন্মদিন

কানাইলাল জানা:

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৩:০৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

যেভাবে উদযাপন হল বিভূতিভূষণের ১২৯ তম জন্মদিন

নিজ বাড়িতে বিভূতিভূষণের স্ট্যাচু

১২ ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ছিল ঘোর দূর্যোগপূর্ণ দিন। সকাল থেকে যাওয়ার কথা কিন্তু বৃষ্টি থামতেই চায় না। আমিও চাই যেন না থেমে  চলতে থাকে এরকম ঘনঘোর বর্ষা কয়েকদিন ধরে, কৃষক সমাজের কথা ভেবে। বিভূতিভূষণের জন্মতিথিতে যদি কৃষকদের মুখে হাসি ফোটে তার থেকে ভালো কিছু হয় না। সত্যি তো যখন একটু বেলায় রানাঘাট হয়ে গোপালনগর আসছিলাম , রেললাইন বরাবর গাংনাপুর ও আশেপাশের অঞ্চলের গ্রামবাসীদের কী অদম্য চেষ্টা , পাট পচানোর জল নেই কলসি-ঘড়া করে জল ঢালছে। 
সমরেশ মুখোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী  জলি বিরাট আয়োজন করেছে দুপুরে খাওয়ার। খাওয়া শেষ হতেই পৌঁছাতে থাকেন অতিথি অভ্যাগতরা। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় উঠোনের মঞ্চ পরিত্যক্ত। বিভূতিভূষণের বাড়ির ভেতরেই একটু দেরিতে শুরু হয় জন্মোৎসব পালন। মূর্তিতে মাল্যদানের পর 'উৎসর্গ' দলের মহিলা শিল্পীরা গাইলেন রবীন্দ্র সংগীত। বিভূতিভূষণ খুবই পছন্দ করতেন রবীন্দ্র গান এবং নিজে তা গুণগুণ করে গাইতেনও। এরপর অধ্যাপক-কবি অমিতাভ গুপ্ত রাখলেন' বিভূতিভূষণ স্মারক বক্তৃতা': কেন আমরা বিভূতিভূষণ চর্চা করব এবং কেন পাঠ করব বিভূতিভূষণের রচনাবলী। বিশেষভাবে আলোকপাত করেন 'বিপিনের সংসার' উপন্যাসটির ওপর। আকাশবাণীর শিল্পী সমন্বিতা চক্রবর্তী গাইলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত। পরপর দুটি। বাচিক শিল্পী সমীর চক্রবর্তী পাঠ করলেন 'পথের পাঁচালী'-র নির্বাচিত অংশ যেখানে অপু বাবার সঙ্গে বেরিয়ে রেললাইন দেখে রেলগাড়ি দেখার জিগির তুললে বাবা হরিহরের কাছে মৃদু বকুনি খায়: রেলগাড়ি দেখতে হলে যে দেড় দুঘণ্টা বসে থাকতে হবে তা সম্ভব নয় বলে অপুর হাত ধরে আবার শুরু করেন পথচলা। এই সূত্র ধরে আমার ভূমিকায় প্রথমে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা একটি ঘটনার কথা বলতে পারি: ১৯৯৪ সালে বিভূতিভূষণ জন্মশতবার্ষিকীতে দুর্গাপুরে সেমিনার ও চিত্র প্রদর্শনীতে গিয়েছিলেন বিভূতিভূষণের ছাত্র ডাক্তার আবিরলাল মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল ও পুত্র  তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে।  সকালে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল বিভূতিভূষণের উপন্যাসের বিষয় ধরে ধরে ছবি আঁকা। তারাদাসদা-রা বিকেলে পৌঁছে প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন কিশোর কিশোরীদের আঁকা মোট ৩২৫ টি  ছবি টাঙানো হয়েছে। তার মধ্যে ৭৫ টি ছবি বিচারের জন্য বিবেচিত হবে না বলে সরিয়ে নিতে বলেন । এই কথায় আয়োজকরা বিস্মিত হলে তারাদাসদা কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন এই ৭৫ টি ছবি অপু-দূর্গার রেলগাড়ি দেখার অভিযান পর্ব। কিন্তু উপন্যাসের কোথাও কোনো এমন বর্ণনা নেই যেখানে অপু-দুর্গা  রেলগাড়ি দেখতে অভিযান চালিয়েছে। রেলগাড়ি দেখার বর্ণনা তারা দেখেছে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায়। কিন্তু সিনেমা ও উপন্যাসের বিষয় এক নয়।

এরপর বিভূতিভূষণের ওপর আজকের পোস্টটির কিছুটা পড়ে,  পাঠ করি দিনলিপি 'হে অরণ্য কথা কও'-র নির্বাচিত অংশ: তার একটু-  'মঙ্গলবার দিন যখন গাড়ী এসেছে খড়্গপুর, তখন বাংলা দেশের ঘাসভরা মাঠ ,টলটলে জলে ভর্তি মেদিনীপুর জেলার খাল বিল দেখে আমাদের ইছামতীর কথা মনে পড়লো। খড়্গপুর থেকে তখন সবে নাগপুর প্যাসেঞ্জার ছেড়েছে, কল্যাণী বলে উঠলো-- ' আজই চলো বারাকপুর যাই, ইছামতী টানছে।' 
আমারও মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে তখন যশোর জেলার এই ক্ষুদ্র পল্লী গ্রামটির জন্য। যত দেশ -বিদেশই বেড়াই,যত পাহাড়-জঙ্গলের অপূর্ব দৃশ্যই দেখি না কেন, বাল্যের লীলাভূমি সেই ইছামতীর তীর যেমন মনকে দোলা দেয়-- এমন কোথাও পেলাম না আর। কিন্তু সেদিন আসা হোলো না ; এই ক'দিন কাটলো কলকাতা ও ভাটপাড়ায়। তারপর কাল বনগাঁ হয়ে বাড়ী এসেছি কতকাল পরে। 
চোখ জুড়িয়ে গেল বাংলার এই বন-ঝোপের  কোমল শ্যামলতায়,তৃণভূমির সবুজত্বে,পাখীর অজস্র কলরবে। সিংভূমের রুক্ষ,অনুর্বর বৃক্ষ-বিরল মরুদেশে এতকাল কাটিয়ে,যেখানে একটা সবুজ গাছের জন্যে মনটা খাঁ খাঁ করে উঠতো, মনে আছে কাশিদার  সেই বাঁধের ধারে খানিকটা সবুজ ঘাস দেখে ও সেদিন রাজবাড়ী যাবার পথে একজনদের বাড়ী একটা ঝাঁকড়া পত্রবহুল বৃক্ষ দেখে অবাক হয়ে চেয়ে ছিলাম--সেই সব প্রস্তরময় ধূসর অঞ্চল থেকে এসে এই পাখির ডাক, এই গাছপালার প্রাচুর্য কি সুন্দর লাগছে। যেন নতুন কোন দেশে এসে পড়েছি হঠাৎ, বাল্যের সেই মায়াময় বনভূমি আমার চোখের সামনে আবার নতুন করে ফিরে এসেছে সব হয়ে উঠেছে আজ আনন্দ-তীর্থের পুণ্য বাতাস-স্পর্শে আনন্দময়,নতুন চোখে সব আবার দেখছি নতুন করে।'

রাত বাড়ছে। বাড়ি থেকে ঘন ঘন ফোন: দুর্যোগ বেড়েই চলেছে, রাস্তা জলে ডোবা, না ফিরে বরং ওখানে থেকে গেলেই ভালো। এমন সময় বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এসে কানে কানে বলল: গাড়িতে একসঙ্গে ফিরব গল্প করতে করতে। দুশ্চিন্তা কমল। বহু উপন্যাস নির্মাতা  বিনায়ক তার নির্ধারিত কবিতা পাঠের আগে এক আকর্ষণীয় ও সারগর্ভ বক্তব্য রাখে যার মূল কথা 'অকৃত্রিমতা' বলতে যদি কিছু বিষয় থাকে তার নাম বিভূতিভূষণ। ডাক্তার শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী কবি উপন্যাসিক ও গল্পকার হলেও যেহেতু সে খুব ভালো গান গাইতে পারে তাই শুদ্ধেন্দুর গাওয়া গান দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান পরিচালনায় সমরেশকে বিশেষ ভাবে ও আন্তরিক হয়ে সহযোগিতা করেছে জলির সঙ্গে কবি  মিতালি  চক্রবর্তী, জয়া ঘোষ ও কলকাতার শুভদীপ রায়। ফেরার সময় শুভদীপ আমাদের দিল দাবি ডায়েরি।  পারফর্ম করার সময় সমরেশ দেয় বিভূতিভূষণ স্মারক, ফোল্ডার, বনগাঁর বিখ্যাত কাঁচাগোল্ল এবং মাটির তৈরি এমন একটি পাত্র যা দেখে অমিতাভ গুপ্ত মন্তব্য করেন : তাঁর বক্তব্যে যা কিছু ভালো ছিল তার থেকেও ভালো 'এই মাটির পাত্র'। আমার ভালোবাসার পাত্র শুদ্ধেন্দু ও বিধায়কের সঙ্গে গল্প করতে করতে দুবার ভুল রাস্তায় গিয়েও  দুর্যোগপূর্ণ ফেরার রাতটিও হয়ে থাকল বড় আনন্দময় ও স্মরণযোগ্য প্রহর।
 

//এল//

তীব্র গরমে ট্রেনের ব্রেকে আগুন, আহত ১০

স্ত্রীকে ২০০ টুকরার পর গুগলে জানতে চাইলেন লাভ-ক্ষতি

‘শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে’

রাজধানীর যেসব এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না আজ

গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা আজ

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মাজারে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে সরকার নিরন্তর কাজ করছে

গরমে চা খাওয়া কি ঠিক?

তাপমাত্রা কমাতে হিট অফিসারের নতুন উদ্যোগ

কোথায় হবে অনন্ত এবং রাধিকার বিয়ে?

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম

উনার মনে হয় ডাক্তার দেখানো উচিত, বুবলীকে অপু 

চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের