
গরুর মাংস ৮০০, সবজির-চিনি ও তেলের দাম বেড়েছে
রমজানের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের দাম ছিলো ৬৫০-৭৫০ টাকা আর খাসির মাংস ৯০০-১ হাজার টাকায়। ঈদে গরুর মাংসের দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায় এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় ।
আজ শুক্রবার ( ৫মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে , মাছ মাংস শাক-সবজি চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। মাংস বিক্রেতারা বলছেন, সব কিছুর দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গরু-খাসির দাম ও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমাদের যে রকম কেনা সেই রকম বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। হাতিরপুল বাজারের মাংস বিক্রেতা কদ্দুস বেপারী জানালেন, বর্তমানে দেশে ভারতীয় গরু না আসার কারনেই মুলত মাংসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে!
ভুতের গলির বাসিন্দা হাসু মিঞা হাতিরপুল বাজারে বাজার করতে এসে জানালেন, ঈদের সময় মাংস বিক্রেতারা বলেছেন,ঈদের বাজার একটু দাম বেশী । ঈদের পরে সব ঠিক হয়ে যাবো। কিন্তু এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি করছে!
আজ মোহাম্মদপুর কৃষিবাজারে শেখেরটেক এর বাসিন্দা ফরিদা ইয়াসমীন বাজার করতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরুর মাংস বিক্রেতারা সবসময় শুধু উপলক্ষ্য খোঁজে। কোনো উপলক্ষ্য পেলেই তারা গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে দেয়। সব শেষ ঈদ উপলক্ষ্যে তারা গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে করল ৮০০ টাকা। কিন্তু ঈদ পেরিয়ে গেলেও দাম আর কমানোর কোনো লক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, এখনো সেই ঈদের দামেই কিনতে হচ্ছে। আগে ৭৫০ টাকা দাম ছিল, তারও আগে ছিল ৬৫০-৭০০ টাকা। উৎসব আসে আর সেই সঙ্গে বেড়ে যায় গরু খাসির মাংসের দাম, তা আর কখনোই কমে না।
রাজধানীর সোবহানবাগ বাজারের মাংস বিক্রেতা কালুচাঁদ মিয়া বলেন, গরুর যে দাম, রাস্তা খরচ, দোকান খরচ, কর্মচারী বিল সবমিলিয়ে ৮০০ টাকায় বিক্রি না করলে সব কিছু মিলিয়ে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে বর্তমান বাজারে ৮০০ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব না।
এদিকে বাজারে সবজির দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা এখন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। ঈদের পরে যেনো সবজির বাজার হঠাৎ করেই আগুনের তাপ ছড়াচ্ছে। শুধু কি তাই বেড়েছে আরেক দাপ মসলার দামও।
এদিকে রমজানে কাচাঁ পেপের কেজি ছিলো ৩০-৪০ টাকা সেই পেপেঁ আজকে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। দাম বেড়েছে করলা৭০-১০০, লাউ৫০টাকা প্রতিপিস, ধুন্দুল৫০-৭০ আর, বরবটি ৫০-৭০ গফরঁগাও এর বেগুন ১০০ টাকা কেজী আর লম্বা বেগুন ৬০-৮০ পটল ৫০-৮০ কচুঁরলতা ৮০টাকাকেজি, ঢেঁরস ৫০-৮০ চালকুমড়া ৫০ টাকা মিস্টি কুমড়া ৫০টাকাসহ আরও অনেক সবজির।এছাড়া কাচাঁমরিচ ৮০-১২০ টাকা আর বোম্বে কাচাঁমরিচ এক পিছ ৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। শাকের আটি ১৫ টাকার নিচে নেই, তবে পুঁইশাকের আটি ৩০-৪০ টাকা কচুঁশাকের আটি ১৫-২০টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বেড়েছে চিনি ও পেঁয়াজের দামও। কয়েকদিন আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া খোলা চিনি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।
আর হঠাৎ করেই ঈদের পর থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজী, প্রতি কেজি সজনে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়। তবে সবজির মধ্যে, কমদামে প্রতি কেজি পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। মিষ্টিকুমড়া প্রতি পিস কাঁচা ৪০ এবং পাকাটা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আলু প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকায়। লেবু হালি ৩৫-৪০ টাকা।
অন্যদিকে মসলার বাজার সেও দাম চড়াই বিক্রি হচ্ছে: ঈদুল আজহা আসতে এখনও প্রায় দেড়মাস বাকি। কিন্তু তার আগে মসলার দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হত। আমদানি করা পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা।দেশি নতুন রসুনের দাম কেজিপ্রতি ১৩০-১৮০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল মাত্র ৮০ থেকে ১২০ টাকা। সে হিসেবে রসুন কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায় এবং চায়না বা আমদানি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
প্রতি কেজি জিরার বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। শুকনা মরিচ ইন্ডিয়ান প্রতি কেজি ৪২০ টাকা এবং দেশি শুকনা মরির প্রতি কেজি ৩৭০ টাকা। হলুদ গুড়া কেজি ২৫০ টাকা, গুড়া মরিচ কেজি ৪৫০ টাকা, ধনিয়া প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা চাল ও ডালের দাম: গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল ও ডালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আঠাইশ চাল ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৭২, গুটি স্বর্ণা চাল ৫০, নাজির শাইল ৮০ টাকা, পাইজাম চাল ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মশু ডাল দেশি প্রতিকেজি ১২৫-১৩৫ টাকা এবং আমদানি মশুর ডাল ৯৫ -১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এঙ্কর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। মুগ ডাল প্রতি কেজি ১৩০ টাকায়।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রতিকেজি ব্রয়লার ২৪০ টাকা, লাল মুরগি প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা, বড় সাইজের সোনালী এবং কক মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। এছাড়া দেশীপাতিহাঁস প্রতিটি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের একটি ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এক কেজি বা তার উপরের ওজনের ইলিশের দর ১হাজার ৬০০ টাকা। এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাঁচকি ও মোলামাছ মাছ ৪৫০-৫০০ টাকায়, ট্যাংরা ৪০০-৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৭০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাক কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ মাছ ১৮০-২২০ টাকা। সিলভার কাপ ২০০ টাকা, পোয়া ৪০০-৪৫০ টাকা। কার্ফু মাছের কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ভোজ্য তেল ও চিনির সরবরাহ ঘাটতির মধ্যেই আবার বেড়েছে দাম। সরকারের নির্ধারিত দর প্রতি কেজি ১০৪ টাকা হলেও ক্রেতাকে ১৪০-১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে চিনি। প্যাকেট চিনি বলতে গেলে বাজার থেকে ঈদের আগে থেকেই উধাও।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪ মে ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এ মূল্য নির্ধারণ করে।
কৃষি বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, যেমন ক্রয় তেমনি বিক্রি ! এ ছাড়া নতুন মোড়কের তেল না এলেও কেউ কেউ প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৯৬০ টাকায় বিক্রি করছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভ্যাট ছাড় সুবিধা উঠে যাওয়ার পর দিন থেকেই বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয় সয়াবিন তেলের।
এরপরই লিটারে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। অথচ আমদানিকারকদের মিলে ও বাজারে যেসব ভোজ্য তেল রয়েছে সেগুলো আগের ওই ভ্যাট ছাড়ের সুবিধায় আমদানি করা। সুতরাং এখন সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো একেবারেই অমানবিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহম্মদপুর কৃজিবাজারের ব্যবসায়ী সজল কান্তি বড়ুয়া বলেন, বেশির ভাগ দোকানেই প্যাকেট চিনি নেই। তিনি বলেন,সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করছি।
//এল//